ময়মনসিংহে নির্বাচন কার্যালয়কে নাগরিকবান্ধব করতে নানা উদ্যোগ

ষ্টাফ রিপোর্টারঃ ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়কে জনবান্ধব ও নাগরিকবান্ধব করতে  নানা উদ্যোগ নিয়েছেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক। কেননা নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সাংবিধানিক সংস্থা । জাতীয় ও স্থানীয় সরকার পর্যায়ের সকল নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা তৈরি, ভোটগ্রহণ ত্তত্বাবধান, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা এবং নির্বাচনী অভিযোগ-মোকদ্দমা মীমাংসার লক্ষ্যে নির্বাচনী ট্রাইবুনাল গঠন করা নির্বাচন কমিশনের ইয়াজ।  গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের সপ্তম ভাগে নির্বাচন গঠন কাঠামো, ক্ষমতা ও দায়িত্ব নির্ধারণ করা আছে। সেই ক্ষমতা ও দায়িত্ব নিয়েই অফিসে আগত সেবা গ্রহীতাদের সঠিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক।এটি নির্বাচন অফিসকে আকর্ষণীয়, নাগরিকবান্ধব ও পরিবেশবান্ধব করতে নানা রকম উদ্যোগের একটি। তিনি সেবাগ্রহীতাদের বিগত করোনার সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মানা, শৃঙ্খলা বজায় রাখা, দালালদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে নির্বিঘ্নে সেবা দিতে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা   নির্বাচন কার্যালয়কে ঘিরে আরো নানা রকম  উদ্যোগ নিয়ে সেবা গ্রহীতাদের সুনাম কুড়িয়েছেন।

ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় পড়েছে ময়মনসিংহ নগরীর কাচারী ঘাট এলাকায়। কাচারী ঘাটের মুখেই একই ভবনে জেলা ও সদর উপজেলা কার্যালয় ভবনের অবস্থান। কার্যালয়ের সীমানাপ্রাচীরের ভেতর ঢুকলেই একটা ঝকঝকে পরিবেশ চোখে পড়ে।

ভবনের প্রবেশপথের একপাশে স্থাপন করা হয়েছে ‘ফার্স্ট এইড বক্স’। কোনো নাগরিক সেবা নিতে এসে অসুস্থ বোধ করলে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা এটি। দেয়ালের একাধিক স্থানে ঝোলানো অনেকগুলো দেয়াল স্টিকার । প্রথমে জাতীয় পরিচয়পত্র বলেই মনে হতে পারে। তবে এগুলো হচ্ছে শৃঙ্খলা কর্নারে ক্রমিক নম্বরের ইঙ্গিত । সুশৃঙ্খলভাবে কাজের জন্য এই স্টিকারগুলো দেয়ালে লাগানো হয়েছে। যারা সেবা নিতে আসছেন, তাঁদের নাম্বার অনুযায়ী এসকল রুমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যাতে কোথায় কোন সেবা সে ব্যাপারে সেবা গ্রহীতাদের  কোনো ঝামেলায় পড়তে না হয়।

বিগত  করোনাকালেও কার্যালয় খোলা সময়ে নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি, পরিচয়পত্রে নানা রকম ত্রুটি সংশোধনীসহ বিভিন্ন কাজে লোকজন এসে ভিড় করেন। এই সময়টাতে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা একটা কঠিন কাজ। এ ক্ষেত্রেও নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেবা নিতে আসা নাগরিকের তাপমাপত্রা মেপে প্রবেশ করতে হয়েছে। প্রয়োজনে সরবরাহ করে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। মাস্ক ছাড়া সেবা দেওয়া হয়নি। হাত ধোয়ার স্থায়ী বেসিন নির্মাণ করা হয়েছিলো। সাবান রাখা হয়েছিলো। যাতে হাত ধুতে কারও কোনো সমস্যা না হয়। হাত মুছতে ছিলো গামছার ব্যবস্থা। নিয়মিত জীবাণুনাশক স্প্রের ব্যবস্থা করা হয়েছিলো।

করোনাকালে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সেবাগ্রহীতাদের সামাজিক দুরত্ব মেনে লাইনে দাঁড়াতে হয়েছিলো। জেলা নির্বাচন কার্যালয় ও সদর উপজেলা কার্যালয়ে করোনাকালে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সেবাগ্রহীতাদের  দাঁড়াতে হয়েছিলো স্বাস্থ্য বিধি মেনে।

উপজেলা  নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, কার্যালয়ে আসা নাগরিকেরা যাতে সহজে সেবা পেতে পারেন, সে জন্য ভবনের প্রবেশমুখেই ‘ফ্রন্ট ডেস্ক তথ্যকেন্দ্র’ রাখা আছে। এখানে চেয়ার-টেবিল নিয়ে একাধিক জন কর্মী দায়িত্বে আছেন। তারা সাধারণ মানুষের কার কী প্রয়োজন, তা জেনে পরামর্শ দিচ্ছেন। দেয়ালে টাঙানো আছে অফিস প্রধানের মোবাইল ফোন নম্বর। দেওয়া আছে অভিযোগ করার নোটিশপত্র। আছে বারান্দায় একটি বড় বোর্ডে অফিসে কর্মরত সব কর্মচারীর নাম, পদবি, ছবি ও দায়িত্বের পরিচিতি। যাতে সাধারণ মানুষ সহজেই অফিসের কর্মচারীকে চিনতে পারেন এবং তাঁদের কার কী দায়িত্ব, তা জানতে পারেন। গ্রামের সাধারণ মানুষের হয়রানি ও দালালের খপ্পর থেকে রেহাই পেতে এই ব্যবস্থা।

প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সুনির্দিষ্ট অবস্থান কক্ষ ও সুনির্দিষ্ট সেবা চিহ্নিত করতে নেমপ্লেট স্থাপন করা হয়েছে। যাতে সেবাগ্রহীতা সহজেই তাঁর কাঙ্ক্ষিত কর্মকর্তা বা কর্মচারীর সঙ্গে দেখা করতে পারেন। আছে সবার জন্য উন্মুক্ত ওয়াই-ফাই জোন। নির্বাচনের দিনে নির্বাচন কমিশনে দ্রুত ফল প্রেরণ করতে স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ী ডাকঘর। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংরক্ষণ করা হচ্ছে ‘মুভমেন্ট রেজিস্টার’।

শৃঙ্খলা বাজায় রাখতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে নম্বরযুক্ত টোকেন। সম্প্রতি ময়মনসিংহ ও সদর উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে।শৃঙ্খলা বাজায় রাখতে সাজিয়ে রাখা হয়েছে নম্বরযুক্ত টোকেন।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমি এই উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই জনবান্ধব অফিস প্রতিষ্ঠা করতে ছোট ছোট নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছি।  গতানুগতিক কাজের বাইরে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছি। আমি মনে করি, সুন্দর কর্মপরিবেশে কাজের উৎসাহ ও আগ্রহ অনেক বেড়ে যায়। এই লক্ষ্যে একটা নান্দনিক ও কর্মমুখর অফিস বানানোর চেষ্টা করেছি।’

তিনি বলেন, অফিসের সব স্টাফ এখন মন থেকে অনুধাবন করছেন সাধারণ মানুষের সেবা করাই তাঁদের একমাত্র দায়িত্ব। শুধু এ কারণেই সরকার তাঁদের বেতন প্রদান করছে। সাধারণ মানুষকে সেবা দিতে কোনো ধরনের দুর্নীতি বা ভোগান্তির শিকার না করা পবিত্র দায়িত্ব। যথাযথ উদ্যোগ নিলে ও সৎ উদ্দেশ্য থাকলে সরকারি সেবা কার্যক্রম অবশ্যই সহজতর ও জনবান্ধব হবে। তিনি সেই চেষ্টাই করছেন।