সরেজমিন– প্রতিবেদনঃ ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা থানার প্রত্যন্ত এলাকা বিশেষ করে অজপাড়া গুলোতে দানবের মতো উত্থান ঘটেছে মাতব্বর বলে জাহির করা এক শ্রেনীর ম্যাসলম্যানদের যারা গ্রাম থেকে ইউনিয়ন হয়ে উপজেলা এবং থানা পর্যন্ত বেপরোয়াভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে । সেসব এলাকাবাসী তথা জনবসতি থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে , তারা এতোটাই ভয়ঙ্কর যে সিনেমার গাব্বার সিং এর মতো নিরীহ জনমানুষ তাদের ভয়ে ভীত থাকে এবং মেয়ে – মহিলারা পর্যন্ত তাদের দেখে দৌড়ে পালিয়ে যায় । অভিযোগে জানা গেছে , এমন কোন অপরাধ কিংবা অপকর্ম নেই , তারা তা করে না । প্রত্যদর্শীরা জানান , এইসব ম্যাসলম্যানরা অধিকাংশই নিজেদেরকে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মেম্বার সরকার দলীয় রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পর্কিত বলে নিজেদের জাহির করে থাকে এবং বাল্যবিবাহ থেকে জমি সংক্র বিষয় পর্যন্ত জবরদখলের সার্বক্ষনিক ধান্ধায় থাকে। সেই সাথে নিরীহ মানুষদের মিথ্যা মামলা দিয়ে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে তারাই আবার ছাড়িয়ে আনে । গ্রামের মানুষ হতদরিদ্র সহজ সরল । সরলতার সুযোগ নিয়ে এসব অপকর্মের হোতারা গ্রামের নিরীহ মানুষদের নিঃস্ব করে গ্রামকে গ্রাম উজার করে দিছে । সচেতন মানুষ এখন প্রকাশ্যেই বলে থাকেন , গ্রাম এখন আর সেই গ্রাম নেই । সকল অপকর্ম এখন গ্রামগুলোকে গিলে ফেলেছে । চলছে অপকর্মের মহোৎসব।
সরেজমিন প্রতিবেদন : মুক্তাগাছার বাউকপালিয়ার ৮ নং দাওগাঁও ইউনিয়ন । ইউনিয়নের বাউকপালিয়ায় গ্রামের মরহুম ইসমাইলের পুত্র জয়নাল ও জলিল এবং তাদের মা জয়রন নেছা বিআরএস মূলে ১৩ শতাংশ জমির মালীক । জয়নাল ও জলিল ১৩ শতাংশ জমির মধ্যে ১০ শতাংশ বিক্রি করে দেন চন্দনীআটা গ্রামের ফরিদা খাতুনের কাছে যার খতিয়ান নং ১১৯ জেএল নং ১৯৪ , সন ১৯৯২৷ বাকী থাকে ৩ শতাংশ জমি, এর মধ্যে২.৪০ শতাংশ জমির মালীক জয়নাল জলিলের মা ইসমাঈলের স্ত্রী জয়রননেছা । ১৯৯৭ সনে মরহুম হযরত আলী তার পুত্র আঃ সামাদ একই খতিয়ানে যার জেএল নং ১৯৪ এর ১৭ দাগের ৪ শতাংশ এবং ১২ দাগের ৪ শতাংশ মিলে ৮ শতাংশ জমির একটি দলিল সৃজন করেন জয়নাল জলিল এবং মরহুম ঈসমাইল হোসেনের কাছ থেকে । তবে জয়নাল জলিলের জোর দাবী তারা পুরাতন ১৭ দাগে মোট ৪ শতাংশ জমিই শুধু বিক্রি করেছেন । বাকী ৪ শতাংশ জমি আঃ সামাদ অতিরিক্ত লিখিয়ে নিয়েছে । জয়নাল – জলিল জানান , আমরা অশিক্ষিত বিধায় আমরা এর কিছুই জানিনা। তারা আরও বলেন , জে এল ১৯৪ দাগের ১২ ও ১৭ দাগে আমাদের কোন জমি নেই । এমনকি দাগেও এই জমির উল্লেখ নেই । জয়নাল জলিল বলেন, সামাদ মাস্তান প্রকৃতির লোক । গ্রামের সবাই তাকে ভয় পায়। এদিকে সামাদ প্রকাশ্যে বলে বেড়াছে , জেএল ১৯৪ এর ৬৭ ও ৭৪ দাগে ফরিদার কাছে বিক্রি করা জমির প্রতি তাঁর ( সামাদের ) লোভ আছে । জমিটা তার চাই । জানাগেছে , স্থানীয় এক কথিত রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় আঃ সামাদ ফরিদা রাশিদুল ইসলামের কাছে বিক্রি করা জমি দখলের পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে । এদিকে ফরিদা জোর গলায় দাবী করছেন , দলিল মূলে ১০ শতাংশ জমির উপর আমি দখলে ছিলাম । তখন কোন সমস্যা ছিলো না ।
ফরিদা বলেন ,২০২১ সনে যখন রাশিদুল ইসলামের কাছে বিক্রি কালাম । এরপর থেকেই সামাদ জমিটা জবরদখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । কিন্তু সত্য এই , প্রকৃতপক্ষে এই জমি ও দলিলের সাথে সামাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই । এটা দিবালোকের মতো সত্য ।
রাশিদুল ইসলাম জানান , আমি জমি ক্রয় করার সময় সামাদ মুক্তাগাছা উপজেলা ভূমি অফিসে অভিযোগ করে, যাতে জমির মালিক ফরিদা ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ ও নামজারী করে আমাকে দলিল সম্প্রদান করে দিতে না পারে। । তবে সামাদের দুর্ভাগ্য, অভিযোগের সাথে দালিলিক কাগজের মিল না থাকায় ইউনিয়ন ভূমি অফিস কাগজপত্র যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ গ্রহণ করে । পরবর্তীতে রাশিদুল ইসলাম দলিল সম্পন্ন করে। কিন্তু দলিল সম্প্রদান করার সময় সামাদ বিপত্তি ঘটায় । সামাদ এসময় বলে , তাকে রেওয়াজ বদল দলিল দিতে হবে। এই ঘটনাটি রাশিদুল তার ছোট ভাই সাংবাদিক আনিসুর রহমানকে জানালে সাংবাদিক আনিসুর রহমান দুজনের কাগজপত্র দেখে বলেন, সামাদের কাগজপত্রে সমস্যা আছে তুমি তোমার ক্রয়কৃত জমির দলিল করে নিয়ে আসো ।অতঃপর রাশিদুল ইসলাম ফরিদার কাছ থেকে দলিল করে নিয়ে আসে ।
সামাদের অপতৎপরতা অব্যাহতঃএর পর থেকে সামাদ কথিত নেতা আফাজ উদ্দিন ও সিরাজুল ইসলামের সহযোগিতা নিয়ে বারবার জমি জবর দখলের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । এমনকি রাশিদুলের প্রতি হুমকি – ধামকি অব্যাহত রেখেছে ।
শান্তিপূর্ণ সমাধানে রাশিদুলের আবেদনঃ রাশিদুল ইসলাম এর প্রেক্ষিতে গ্রাম্য আদালত , দাওগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান সহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতরে শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আবেদন করেন এবং তাদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে আনুসাঙ্গিক সকল ঘটনা তাদেরকে অবস্থিত করেন।
চেয়ারম্যান বলে পুলিশের কাছে যেতেঃ অদৃশ্য কারণে দাওগাও ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার জামাল উদ্দিন বাদশাহ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বরং রাশিদুল ইসলামকে জানায় , স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতা চাইতে । পরবর্তীতে রাশিদুল ইসলাম মুক্তাগাছা থানায় একটি অভিযোতা দায়ের করেন । কিন্তু এতেও কোন সমস্যার সমাধান আসে না ।
সর্বশেষে সাংবাদিক হত্যা প্রচেষ্টাঃ চলমান সবগুলো ঘটনা ঘটিয়ে আঃ সামাদের প্ররোচনায় কথিত নেতা বলে জাহিরী করা আফাজ উদ্দিন এবং সিরাজুল ইসলামের জমি জবর দখল করা মিশন ব্যর্থ হলে এই কুচক্রি মহল সাংবাদিক আনিসের প্রতি ক্ষিপ্ত হয় এবং সামাদ আফাজ – সিরাজুল গং গত ২৭ আগষ্ট ২০২২ রাত ৯ঃ ৩৩ মিনিটে মুঠো ফোনে কল করে সাংবাদিক আনিসকে মীমাংসার জন্য ফুলবাড়িয়ার পাটুলী পান্ডুর বাজারে আসতে বলে । সাংবাদিক আনিস সরল বিশ্বাসে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে যথাস্থানে যায় এবং তাদের সাথে আলোচনায় বসে। আলোচনার এক পর্যায়ে কুচক্রি গংটি ইচ্ছাকৃতভাবে প্রথমে তর্কাতর্কি এবং পরে সাংবাদিক আনিসের গায়ে হাত তুলেন । এ সময় আনিসের পকেটে থাকা পত্রিকার বিজ্ঞাপনের বিলের ১৭ হাজার ৫ শ টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং মোবাইলে ধারণ করা ১৭ সেকেন্ডের রেকর্ড করা ভিডিওসহ ফোনটি কেড়ে নেবার চেষ্টা চালায় । একপর্যায়ে আফাজ সামাদ সিরাজগং সাংবাদিক আনিসের মটর সাইকেলটি আটকে রাখে। ঘটনার প্রেক্ষিতে পরদিন ২৮ আগস্ট 2022 সাংবাদিক আনিস ফুলবাড়ীয়া থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মটর সাইকেলটি উদ্ধার করে । এব্যপারে ফুলবাড়ীয়া থানায় সামাদ আফাজ এবং সিরাজুল সহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় । মামলা নং- ৪০/২৬৯। জানাগেছে , এরপর থেকেই উল্লেখিত অপরাধীগংটি সংবাদিক আনিসকে হত্যা ও গুমের হুমকি দিয়ে আসছে । নিরাপত্তায় কারণে সাংবাদিক আনিস মুক্তাগাছী থানায় একটি জিডি করেছেন । জিডি নং- ১৩০২/২০২২
সার্বিক পরিস্হিতি সার্বিক পরিস্হিতি বিশ্লেষণ করে এই প্রতিনিধি ঘটনাস্থল থেকে জানান , ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা থানার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় সবকটি গ্রামীন জনপদের প্রত্যন্তগ্রাম গুলোতে একই অবস্থা বিরাজ করছে । সেখানে হত্যা গুম রাহাজানি , জমি সংক্রান্ত এই ঘটনায় একে অপরের বিরুদ্ধে মামলা করে জামিন করিয়ে বিপুল অংকের টাকা আদায় আবার টাকা না দিলে অন্য কোন সাঁজনো মামলায় জেলে পাঠানো ইত্যাদি নিত্যই ঘটছে ।
এমনো দেখা গেছে প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন গ্রামে মিথ্যা লাশের দেখা মিলছে।ফলে গ্রামের মহিলাদের মাঝে আহাজারি লেগেই থাকে।
অন্যদিকে বাল্যবিবাহে বাধ্য করছে গ্রামীণ উল্লেখিত শ্রেণীর একদল কথিত মামলাবাজ মাতাব্বর শ্রেণী।যারা রাজনৈতিক দলকে ব্যবহার করছে এবং চেয়ারম্যানদের ব্যবহার করে দুষ্কর্ম লাগিয়েই রাখে । এই সুযোগে কথিত কিছু গ্রাম্য নেতার অনুপ্রবেশ ঘটে ।
এ বিষয়ে মুক্তাগাছা থানা পুলিশ জানায় , দুঃখের সাথে বলতে হয় ঘটনাগুলো মাঝে মধ্যে আমাদের কানে আসে কিন্তু সাক্ষী সাবুদ না থাকায় আমরা কিছুই করতে পারি না । মাঝখান থেকে দোষারোপ আমাদের বইতে হয় ।
এব্যপারে ময়মনসিংহ জেলা এসপির প্রতি আকুল আবেদন জানিয়ে গ্রামীণ জনপদের নিরীহ জনমানুষ ইউনিয়ন থেকে গ্রাম পর্যন্ত প্রতিটি দুষ্কর্মের ঘটনা মনিটরিং করার সনির্বন্ধ অনুরোধ জানিয়েছেন । কারণ সত্যঘটনা অনুসন্ধান করতে গেলে সাংবাদিকদেরকেও মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয় ।