সর্বশেষ ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বচনে ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৩১ টিতে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। এদের মধ্যে থেকেই মন্ত্রী বেছে নেওয়া হয়। এখন শুরু হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তোড়জোড়। আর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে ইতিমধ্যেই কিছু সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে, যার একটি হলো, গত নির্বাচনে দল থেকে নির্বাচিত ২৩১ এমপির মধ্যে ৭৩ জনকে মনোনয়ন না দেওয়া।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মনোনয়ন বঞ্চিত হতে চলা ৭৩ এমপির মধ্যে অনেকেই বেশ প্রভাবশালী। আবার কয়েকজন আছেন বর্তমান ও সাবেক মন্ত্রী। সাম্প্রদায়িকতা, দুর্নীতি, বিতর্ক, জনপ্রিয়তা হারানোর মতো কারণে অনেকেই মনোনয়ন বঞ্চিত হতে যাচ্ছেন। আবার অনেকে মনোনয়ন পাচ্ছেন না বয়সের কারণে। এছাড়া নির্দিষ্ট আসনে অন্য কাউকে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়ায়ও অনেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হচ্ছেন।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অন্য দলের হলেও আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের নির্বাচন করেছেন অনেকে। আবার অনেকে স্বতন্ত্রভাবে (অনেকে আওয়ামী লীগেরই বিদ্রোহী প্রাথী) নির্বাচিত হলেও পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। এসব এমপিদেরও কেউ কেউ এবার মনোনয়ন পাচ্ছেন না।
বয়সের কারণে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এবার মনোনয়ন পাচ্ছেন না। অর্থমন্ত্রীর সিলেট-১ আসনে মনোনয়ন পেতে পারেন তাঁরই ছোট ভাই আবুল কালাম আবদুল মোমেন।
এছাড়া বয়সের কারণে এবার মনোনয়ন পাচ্ছেন না শরীয়তপুর-২ আসনের সাংসদ শওকত আলী। ওই আসনে এবার এনামুল হক শামীম মনোনয়ন পেতে পারেন। একই কারণে মনোনয়ন পাচ্ছেন না ঠাকুরগাঁও-১ আসনের এমপি রমেশ চন্দ্র সেন। ২০০৮ সালে তিনি পানিসম্পদ মন্ত্রী ছিলেন। ঠাকুরগাঁও-২ আসন থেকে এবার মনোনয়ন পাচ্ছেন না এমপি মো. দবিরুল ইসলাম। স্থানীয়ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে নানা রকম অভিযোগ ওঠায় দল থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ ও স্থানীয় বিরোধের কারণে মনোনয়ন বঞ্চিত হচ্ছেন লালমনিরহাট-১ আসনের এমপি মো. মোতাহার হোসেন, লালমনিরহাট-২ আসনের এমপি নুরুজ্জামান আহমেদ এবং গাইবান্ধা-৩ আসনের এমপি ইউনুস আলী সরকার।
জনপ্রিয়তা হারানোয় মনোনয়ন বঞ্চিত হচ্ছেন জয়পুরহাট-১ আসনের সামছুল আলম দুদু। রাজশাহী-১ আসনে মনোনয়ন পাচ্ছেন না বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। ২০০৯ সালে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারেরই প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। বিভিন্ন কারণে বিতর্কিত রিয়াল এস্টেট ব্যবসায়ী রাজশাহী-৪ আসনের সাংসদ এনামুল হক মনোনয়ন বঞ্চিত হচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের ছেলে সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের এমপি তানভীর ইমাম। তবে এবছর মনোনয়ন পাচ্ছেন না তিনি।
ছেলে শিরহান শরীফ তমালের গ্রেপ্তার হওয়াসহ নানা কারণেই বিতর্কিত ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ। পাবনা-৪ আসনের এই এমপি এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন না। টাঙ্গাইল-৩ আসনের সাংসদ আমানুর রহমান খান রানা হত্যা মামলার আসামি। স্বাভাবতই এবার মনোনয়ন বঞ্চিত থাকছেন তিনি।
২০০৯ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিমন্ত্রী ছিলেন মো. রেজাউল করিম হীরা। জামালপুর-৫ আসানের এই সাংসদ এবার মনোনয়ন বঞ্চিতই থাকছেন। জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার আরিফ খান জয়। বর্তমানে তিনি নেত্রকোনা-২ আসনের এমপি এবং ক্রীড়া উপমন্ত্রী। তবে এবার মনোনয়ন বঞ্চিতই থাকতে হবে তাঁকে।
আওয়ামীগের বিদ্রোহী হয়ে স্বতন্ত্র প্রাথী হিসেবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বচনে ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন হাজী মো. সেলিম। এবার হয়তো মনোনয়ন পেতেনে। তবে অসুস্থতার জন্যই তিনি মনোননয় বঞ্চিত হচ্ছেন।
সাংসদ এ কে এম রহমতুল্লাহ্ অবশ্য মনোনয়ন বঞ্চিত হচ্ছেন ভিন্ন কারণে। তাঁর ঢাকা-১১ আসনের এবার অন্য কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। ওই আসনে ফারুক খান মনোনয়ন পেতে পারেন বলে কানাঘুষা চলছে।
২০০৯ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী রাজি উদ্দিন আহমেদ। নরসিংদী-৫ আসনের এই সাংসদ মনোনয়ন বঞ্চিতই থাকতে পারেন।
বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করে বিতর্কিত হয়েছেন চট্টগ্রাম-১১ আসনের সাংসদ এম আবদুল লতিফ। আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত থাকছেন তিনি।
কক্সবাজার-৪ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ আবদুর রহমান বদি। ইয়াবা ব্যবসায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তিনি দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্কিত। এবারের সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হচ্ছেন তিনি।
এছাড়া বিভিন্ন কারণে আরও অনেকেই মনোনয়ন পাচ্ছেন না। এরা হলেন,
আব্দুল মান্নান (বগুড়া-১),
মো. হাবিবর রহমান (বগুড়া-৫)
মোহা. গোলাম রাব্বানী (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১)
মো. আব্দুল ওদুদ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩)
মো. শহীদুজ্জামান সরকার (নওগাঁ-২)
মো. শফিকুল ইসলাম শিমুল (নাটোর-২)
গাজী ম.ম. আমজাদ হোসেন মিলন (সিরাজগঞ্জ-৩)
আ. মজিদ মন্ডল (সিরাজগঞ্জ-৫)
মো. গোলাম ফারুক খন্দ. প্রিন্স (পাবনা-৫)
ফরহাদ হোসেন (মেহেরপুর-১)
আবদুর রউফ (কুষ্টিয়া-৪)
সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার (ছেলুন) (চুয়াডাংগা-১)
মো. নবী নেওয়াজ (ঝিনাইদহ-৩ )
মো. আনোয়ারুল আজীম (আনার)(ঝিনাইদহ-৪)
শেখ আফিল উদ্দিন (যশোর-১)
রণজিত কুমার রায় (যশোর-৪)
এ টি এম আব্দুল ওয়াহাব (মাগুরা-১)
মো. কবিরুল হক (নড়াইল-১)
মো. মোজাম্মেল হোসেন (বাগেরহাট-৪)
মুহাম্মদ মিজানুর রহমান (খুলনা-২)
মীর মোস্তাক আহমেদ রবি (সাতক্ষীরা-২)
শওকত হাচানুর রহমান (রিমন) (বরগুনা-২)
মো. মাহবুবুর রহমান (পটুয়াখালী-৪)
আলী আজম (ভোলা-২)
তালুকদার মো. ইউনুস (বরিশাল-২)
বেগম জেবুন্নেছা আফরোজ (বরিশাল-৫)
বজলুল হক হারুন (ঝালকাঠি-১)
অনুপম শাহজাহান জয় (টাংগাইল-৮)
মো. ফরিদুল হক খান (জামালপুর-২)
এ. কে. এম. ফজলুল হক (শেরপুর-৩)
জুয়েল আরেং (ময়মনসিংহ-১ )
নাজিম উদ্দিন আহমেদ (ময়মনসিংহ-৩)
মো. মোসলেম উদ্দিন (ময়মনসিংহ-৬)
মোহাম্মদ আমানউল্লাহ (ময়মনসিংহ-১১)
রেবেকা মোমিন (নেত্রকোনা-৪)
মো. সোহরাব উদ্দিন (কিশোরগঞ্জ-২)
মো. ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ্ (ঢাকা-১৬)
মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (নরসিংদী-১)
বি, এম, মোজাম্মেল হক (শরীয়তপুর-১)
মোয়াজ্জেম হোসেন রতন (সুনামগঞ্জ-১)
মুহিবুর রহমান মানিক (সুনামগঞ্জ-৫)
মো. আব্দুল মজিদ খান (হবিগঞ্জ-২)
অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ (কুমিল্লা-৭)
মো. তাজুল ইসলাম (কুমিল্লা-৯)
বেগম আয়েশা ফেরদাউস (নোয়াখালী-৬)
এ. কে. এম শাহজাহান কামাল (লক্ষ্মীপুর-৩)
মো. আবদুল্লাহ (লক্ষ্মীপুর-৪)
মাহফুজুর রহমান (চট্টগ্রাম-৩)
দিদারুল আলম (চট্টগ্রাম-৪)
আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন (চট্টগ্রাম-১৫)
আশেক উল্লাহ রফিক (কক্সবাজার-২)