নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাককানইবি) বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদের নতুন ও পুরনো কমিটি নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু আইন ছাত্র পরিষদ’ নামেই দুইটি কমিটি বিদ্যমান রয়েছে। ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. নাজিম ও সাধারণ সম্পাদক নোমান হোসাইন তালুকদারের অনুমোদনকৃত জাককানইবি শাখার কমিটিতে আরিফুল হক মিঠুকে সভাপতি ও সাত্ত্বিক মাহবুবকে সাধারণ সম্পাদক করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
জানা যায়, উক্ত কমিটি এখনো বিলুপ্ত ঘোষণা না করে একই নামে আরো একটি কমিটির অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ। এবার জাককানইবি শাখার সভাপতি সজীব চন্দ্র দাশ ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান মাহফুজ। তবে এবারে অনুমোদন দিয়েছেন সভাপতি এডভোকেট সৈয়দ মনিরুজ্জামান মনির ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মাইনুল ইসলাম।
গত (১৪ই জানুয়ারি) নবগঠিত এই কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। উল্লেখ্য, সৈয়দ মনিরুজ্জামান মনিরকে সাংগঠনিক নীতিমালা ভঙ্গের দায়ে বেশ আগেই কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়। অপরদিকে নাজিম-নোমানের বিরুদ্ধে ক্ষণে ক্ষণে ভুয়া কমিটি দেয়ার অভিযোগও বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে এসেছে। পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে, উভয় কমিটিই অন্যটিকে ভুয়া বলে থাকেন।
জানা যায়, বহিষ্কৃত হওয়ার পর তিনি (মনিরুজ্জামান) নিজেই নিজেকে সভাপতি ঘোষণা করে একই নামে আরেকটি কমিটির প্রচারণা করেন। সৈয়দ মনিরুজ্জামান মনির ও নোমান হোসাইন তালুকদার দুজনই এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ইতিমধ্যে পূর্বের কমিটিকে (মিঠু-সাত্ত্বিক) বহাল রেখে নবগঠিত কমিটিকে (সজীব-ইমরান) অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বিবৃতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ।
এতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিকাশ মজুমদার জয় ও সাধারণ সম্পাদক নোমান হোসাইন তালুকদারের স্বাক্ষর দেখা যায়। উল্লেখ্য, মো. নাজিমের অনুপস্থিতিতে বিকাশ মজুমদার জয়কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে পূর্বের কমিটিকেও (মিঠু-সাত্ত্বিক) অবাঞ্ছিত বলছে কেন্দ্রীয় ‘মনির-মাইনুল’ কমিটি।
সামগ্রিক বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দ মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘জাককানইবি শাখার সজীব-ইমরান কমিটিকে আমরা অনুমোদন দিয়েছি। আগের কমিটি কে ঘোষণা দিয়েছে সেটার দায়বদ্ধতা আমাদের নাই। আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে এই নামে থাকা অন্যান্য কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
অন্যদিকে নোমান হোসাইন বলেন, ‘নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে মিঠু-সাত্ত্বিক কমিটি এখনো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়নি। এ অবস্থায় একই সংগঠনের আরেকটি কমিটি থাকতে পারে না। নবগঠিত কমিটি সম্পূর্ণ ভূয়া এবং যারা এই কমিটি দিয়েছেন তারা নিজেরাই বহিষ্কৃত। আমরা ইতিমধ্যে সাংগঠনিকভাবে সজীব-ইমরান কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছি।’
জাককানইবি শাখার পূর্বের কমিটির সভাপতি আরিফুল হক মিঠু বলেন, ‘সজীব-ইমরান কমিটি সম্পূর্ণ বির্তকিত কমিটি। কেননা মনিরুজ্জামান মনির সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত। সে বর্তমানে স্বঘোষিত সভাপতি। সুতরাং কোনো কমিটি ঘোষণা দেয়ার কোনো যোগ্যতা তার নাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘নতুনরা মনিরকে ৫০০ টাকা দিয়ে কমিটি এনেছে। আর এনারা যে এই ভুয়া কমিটি আনবে এ বিষয়ে আমার বা সাত্ত্বিকের সাথে কোন কথা বলেনি।’
এদিকে নতুন কমিটির সভাপতি সজীব চন্দ্র দাশ বলেন, ‘সাবেক কমিটির সভাপতি আরিফুল হক মিঠু এবং সাধারণ সম্পাদক সাত্ত্বিক মাহবুব আমাদের কমিটিকে মিথ্যা ও অযোক্তিক বলে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে নাকি নতুন কোন কমিটি গঠন করা হয়নি। এখানে তারা কেন্দ্রীয় কমিটির বিকাশ মজুমদার জয় এবং নোমান হোসাইন তালুকদার এর রেফারেন্স দেখিয়ে এই অপ্রপ্রচার চালান। কিন্তু গণমাধ্যম বলছে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে তারা বহিষ্কৃত। যাদের রেফারেন্স দেখিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন তারা নিজেরাই বহিষ্কৃত।
সুতরাং পূর্বের মিঠু-সাত্ত্বিক কমিটিরই কোনো ভিত্তি নাই।’ ‘মিঠু-সাত্ত্বিকের মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং এই অপপ্রচার বন্ধ না হলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো’, যোগ করেন সজীব। দাবীকৃত দুই কেন্দ্রীয় কমিটিই একে অপরকে ভিত্তিহীন ও ভূয়া বলছেন। আইন ছাত্র পরিষদের মূল কমিটি নিয়ে এ অবস্থায় দ্বিধা দূর করতে চেষ্টা করেও সংগঠনের সাবেকদের সাথে ও উর্ধতন পর্যায়ে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে একই নামে, একই সংগঠনের, একই ক্যাম্পাসে দুইটি ভিন্ন কমিটি দেখে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন আইনের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠিত একটি সংগঠনে এরকম অন্তঃকলহ অপ্রত্যাশিত।’