স্টাফ রিপোর্টার: নগরীর রমেশ সেন রোডের যৌনপল্লীতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরীদের ছড়াছড়ি হলেও এটি দেখার কেউ নেই। অভিযোগ উঠেছে অপ্রাপ্ত বয়স্ক এসব কিশোরীদের সেক্স ট্রেডে বাধ্য করা হচ্ছে। উদ্ধারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিনিয়ত এই যৌনপল্লীতে যোগ হচ্ছে নতুন কিশোরীর সংখ্যা। অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরীদের বয়সের তথ্য গোপন করে যৌনপল্লীর সর্দারনীরা নিজ হেফাজতে রেখে বছরজুড়ে এই ব্যবসা চালিয়ে আসলেও দেখার কেউ নেই! অভিযোগ রক্ষকরাই ভক্ষকের ভূমিকা পালন করায় এর কোন প্রতিকার মিলছে না। সর্বশেষ গত ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ব্যারিস্টার সালমা আলীর নেতৃত্বে একটি দল রমেশ সেন রোডের এই যৌনপল্লী থেকে একদিনেই উদ্ধার করে নিয়ে যায় ২২ কিশোরীকে। এরপর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে এর সঙ্গে জড়িত দালালচক্র।
সূত্র জানায়, নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত যৌনপল্লীর বিভিন্ন বাড়িতে শতাধিক অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরী যৌনকর্মী রয়েছে। সংঘবদ্ধ একটি দালালচক্র অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরীদের এখানে এনে সর্দারনীদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। বিক্রি হওয়া কিশোরীদের কয়েকদিন যৌনপল্লীর সর্দারনীরা আটকে রাখে। এসময় বিভিন্ন কৌশলে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি-ধমকি প্রদানসহ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করার ২/৩ দিন পর নামিয়ে দেয়া হয় সেক্স ট্রেডে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক প্রতিটি কিশোরী ২০-৪০ হাজার টাকায় কেনা হয় দালালদের কাছ থেকে। এরপর নগরীর ১ নম্বর ফাঁড়ি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ সেরে নাম তোলা হয় যৌনকর্মীর তালিকায়। এসময় প্রকৃত বয়সের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদ কিংবা নাম পরিচয় ও ঠিকানা যাচাই-বাছাইয়ের কোন নজীর নেই। তথ্য গোপন করে ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহারসহ ১৪-১৭ বয়সী কিশোরীদের প্রাপ্ত বয়স্ক দেখিয়ে নেয়া হচ্ছে যৌনকর্মীর লাইসেন্স। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে এ রকম ৩০ অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরীকে সেক্স ট্রেডের অনুমতি নেয় সর্দারনীরা।
সূত্রগুলো থেকে আরও জানায়, যৌনপল্লীর ৩ নম্বর বাড়ির মিতার ঘরে ৩ জন, শিল্পীর ঘরে ২ জন, শিলার ঘরে ২ জন, রুনার ঘরে ২ জন, সাবিহার ঘরে ১ জন, নাছিমার ঘরে ১ জন, ৪ নম্বর বাড়ির মর্জিনার ঘরে ২ জন, হালিমার ঘরে ১ জন, সাবিহার ঘরে ১ জন, ১ নম্বর বাড়ির হাসনার ঘরে ৩ জন, ফরিদার ঘরে ২ জন, আনুর ঘরে ১ জন, আলমের বাড়ির জহুরার ঘরে ৩ জনসহ যৌনপল্লীর ৮টি বাড়িতে শতাধিক অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরীকে দিয়ে জোরপূর্বক সেক্স ট্রেড করাতে বাধ্য করা হচ্ছে। পুরো যৌনপল্লী নিয়ন্ত্রণ করছে আনু ও লাভলী।
যৌনপল্লীর ১, ২,৩ নম্বর বাড়ি, ঠাকুরবাড়ি ও সৌরভের বাড়ি আনু এবং ৪ ও ৫ নম্বর বাড়ি লাভলী নিয়ন্ত্রণ করছে। যৌনপল্লীর মিতা ও শিল্পীর বিরুদ্ধে নারী পাচারের অভিযোগও রয়েছে। চট্টগ্রাম ও ফরিদপুরের দুই কিশোরীকে উদ্ধারের ঘটনায় বের হয়ে এসেছিল ময়মনসিংহ যৌনপল্লীতে কিশোরী কেনাবেচার নানা কাহিনী। সর্বশেষ সালমা আলীর নেতৃত্বে ২২ কিশোরী উদ্ধারের ঘটনা তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ২০১৭ সালে এই যৌনপল্লী থেকে ২৫ অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়। তবে যেসব সর্দারনীর ঘর থেকে এদের উদ্ধার করা হয় তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
নাম প্রকাশ করা হবে না শর্তে চট্টগ্রাম বন্দর থানার এক স্কুল ছাত্রীর অভিভাবক জানান, গত ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে তাদের স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে ময়মনসিংহের যৌনপল্লী থেকে উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ কোন ব্যবস্থাই নেয়নি। ফরিদপুরের এক গার্মেন্টস কর্মীকে উদ্ধারের ঘটনাতেও রয়েছে কোতোয়ালি পুলিশের বিরুদ্ধে এই নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ময়মনসিংহ শাখার সভাপতি মনিরা বেগম অনু উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, বিভিন্ন সময় যৌনপল্লী থেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীদের উদ্ধারের ঘটনাই প্রমাণ করে এসব নারী স্বেচ্চায় সেক্স ট্রেডে নামেনি। তাহলে যেসব ঘর থেকে এসব কিশোরীদের উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের আইনী ব্যবস্থা নিতে বাধা কোথায়? প্রশ্ন এই নারী নেত্রীর।