“দক্ষ হয়ে বিদেশ গেলে-অর্থ সন্মান দুই-ই মেলে”। এই ছিল ২০১৯ অভিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য। মধ্যপ্রাচ্যের অভিবাসী জনশক্তির জন্য এই উপপাদ্য যে কতটা উপযোগী, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। বাংলাদেশে পাঠানো র্যামিটেন্সের সিংহভাগই যায় মধ্যপ্রাচ্য থেকে। কিন্তু আমাদের জনশক্তির সম্ভাবনাকে আমরা কি পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছি ?
পরিসংখ্যান মতে অভিবাসী কর্মীর সংখ্যা দ্বিগুনের কিছুটা কম হলেও ২০১৮ সালে বাংলাদেশের চেয়ে পাঁচ গুণের বেশী র্যামিট্যান্স পেয়েছে ভারত। চীন ও মেক্সিকোর ক্ষেত্রেও তাই। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, আমরা সবচেয়ে বেশী অদক্ষ কর্মী প্রেরন করি। যাদের উপার্জন দক্ষদের তুলনায় অনেক কম। আর তুলনামূলকভাবে প্রবাসে কর্মী প্রেরণ করতে আমাদের সবচেয়ে বেশী অর্থ ব্যায় করতে হয়।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো এখন জ্বালানী ভিত্তিক অর্থনীতির বিকল্প খুঁজছে। বিশেষ করে কাতারে ২০২২ সালের বিশ্বকাপের পর অদক্ষ কর্মীর চাহিদা ব্যাপকহারে কমে যাবে। এজন্য শ্রমশক্তির উপর নির্ভরশীল নয় এমন উন্নত প্রযুক্তির শিল্প-কারখানা স্থাপনের বড় বড় প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে কাতার। এছাড়া কৃষিখাতেও প্রচুর বিনিযোগ করছে কাতার। তাই দক্ষ কর্মী পাঠানোর ব্যাপারে বাংলাদেশকে এখন থেকেই তৈরী হতে হবে। এছাড়া অদক্ষ কর্মীদের উপযুক্ত প্রশিক্ষনের দিতে পারলেও কিছুটা কাজ হবে। দেশে প্রশিক্ষণের নামে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কিছু সার্টিফিকেট ধরিয়ে দেয়া হয়। ফলে প্রবাসে যেয়ে কর্মীরা চাহিদা পূরণ করতে পারছেনা।
আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের লক্ষ্য হচ্ছে অভিবাসী কর্মীদের স্বার্থ, মানবাধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। কিন্তু দেশে দেশে অভিবাসী কর্মীরা তাদের নায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, লাঞ্ছিত হচ্ছেন। আরেকটি খুবই বেদনাদায়ক বিষয় হল, মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের নারী কর্মীরা শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। শাহজালাল বিমান বন্দরে প্রতিদিন আসছে কফিনে ভরা দুর্ভাগা নারী কর্মীর লাশ। এই শোষণ ও নীপিড়ন বন্ধ করে অভিবাসী কর্মীদের একটি সুন্দর ও নিরাপদ জীবন দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে হবে।
লেখক: ড. আবদুল্লাহ আল মামুন
নগর পরিকল্পনাবিদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ