ত্রিশালে পৌনে চার একর জমি জাল দলিল করে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থরা ত্রিশাল সাব-রেজিস্ট্রি অফিস অবরোদ্ধ করে রাখেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এবং দোষীদের বিচারের আয়তায় আনা হবে।
ত্রিশালের খাগাটি মৌজার ১০৮৬২ দাগে আবদুর রহমান ও আবদুল গফুরের দুই একর ১১ শতাংশ জমিসহ আরও কয়েকটি দাগের তিন একর ৭২ শতাংশ জমি গত ২৮ মার্চ প্যারামাউন্ট হোল্ডিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অলক কুমার দাসের নামে রেজিস্ট্রি করা হয়। দাম দেখানো হয় এক কোটি ৪০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। দলিল লেখক জিয়াউর রহমানের সম্পাদনায় দুটি কমিশন দলিলের মাধ্যমে জমি ‘হস্তান্তর’ হয়।
জমির মালিক গন দাবি করেছেন, তারা জমি বিক্রি না করেও এমন ঘটনার শিকার। অন্য ব্যক্তিদের ভুয়া মালিক সাজিয়ে দলিল করা হয়। তাদের ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করা হয় জমির দলিলে। জমি হারালে পথে বসতে হবে তাদের।
দলিলে সাক্ষী হয়েছেন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী ইকবাল হোসেন। জমি মালিকদের অভিযোগ, ইকবাল হোসেন প্যারামাউন্ট হোল্ডিং লিমিটেডের হয়ে জমি কেনার কাজ করেন। তার ব্যবস্থাপনাতেই জাল দলিল করে সাধারণ মানুষের জমি দখলে অপচেষ্টা চলছে। তবে ইকবাল হোসেন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ইকবাল হোসেন বলেন, তার অগোচরে তাকে সাক্ষী করা হয়েছে।কিন্তু জনমননে প্রশ্ন তার সই কে জাল করেছে। তিনি সাব-রেজিস্ট্রারের সঙ্গে কথা বলেছেন। জমির দলিল জাল হয়ে থাকলে বাতিল করে দিতে বলেছেন।কিন্তু সই জালের ব্যপারে তিনি মুখ খোলেননি।
প্যারামাউন্ট হোল্ডিং লিমিটেড গতকাল জমির দখল বুঝে নিতে গেলে প্রকৃত মালিকরা বাধা দেন। কোম্পানির লোকজন তাদের জানান, তারা এ জমি কিনে নিয়েছেন। মালিকরা তখন জানতে পারেন, তাদের অগোচরে জাল দলিলে জমি ‘বিক্রি’ করে দেওয়া হয়েছে।
এ খবর ছড়িয়ে পড়ালে ক্ষুব্ধ লোকজন সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ঘেরাও করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে পুলিশ যায়। জমি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে পুলিশ তাদের আশ্বস্ত করে। তাতেও বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে না নিয়ে জাল দলিলকারীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখেন। জাল দলিলের কথা অস্বীকার করে সাব-রেজিস্ট্রার ফারুক আহমেদ বলেছেন, জমির কাগজপত্র সব ঠিকই ছিল। তবে মালিকদের ছবি নকল ছিল। সমস্যাটি সমাধান করে দেওয়া হবে। দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দুলাল বলেন, ভুয়া দলিল তৈরিতে তারা বাধা দিয়েছিলেন। তাই অফিসের বাইরে গিয়ে এ দলিল লেখা হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ইকবাল হোসেন জমি কেনাবেচায় মধ্যস্ততার পাশাপাশি তিনি নিজে সাক্ষী হয়েছেন।
ইউএনও আব্দুল্লাহ আল জাকির জানিয়েছেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে।