সুমন ভট্টাচার্য, ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সাবেক উপ পরিচালক ফারজানা পারভিনের (বর্তমানে কিশোরগঞ্জে কমরত) বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগ তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে বলে জানা গেছে । ফারজানা পারভিনের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন( দুদুক) ময়মনসিংহ , ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক (ডিসি), মহা পরিচালক যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কার্যালয়ে ইতিমধ্যে জমা হয় ।
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক সূত্রে জানা গেছে, ফারজানা পারভিনের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ নথিভূক্ত করা হয়েছে। গত ৮ নভেম্বর ২০২১ সালে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলির পক্ষ থেকে অভিযোগ রিসিভ করা হয়। সূত্র জানায়, তদন্ত কমিটি সহসাই মাঠে নামবে। ফারজানা পারভিনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের দালিলিক প্রমাণাদিসহ সংশ্লিষ্টদের উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হতে পারে। চাকুরি জীবনে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ময়মনসিংহ অঞ্চলে ১৮ বছর চাকুরি করেছেন। ছাত্রজীবনে ছাত্রদল করা ফারজানা পারভিনের ক্ষমতার প্রভাবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অনেক কর্মকর্তা – কর্মচারির প্রাত্যহিক সূচি এলোমেলো হয়ে গেছে। তাকে প্রশ্রয় দেন কে বা কারা ? তার পেছনের রাঘববোয়ালই কে বা কারা ? এমন প্রশ্ন উঠেছে।
ফারজানা পারভিনের বাড়ি সাতক্ষিরা জেলায় । বিয়ে করেছেন ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায়। সেই সুবাদে ময়মনসিংহ জেলার ভোটার তিনি। তার স্বামী বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) লাইব্রেরিয়ান পদে কমরত । স্বামীর প্রভাব খাটিয়ে তিনি ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি কার্যক্রম ব্যাহত করার পাশাপাশি প্রকল্পের অর্থ নয়ছয়, অপচয় ও আত্বসাত করেছেন । বর্তমানেও তিনি ময়মনসিংহের বাসায় থেকে কিশোরগঞ্জে চাকুরি করছেন । যারা তার দুর্নীতি অনিয়মের প্রতিবাদ করেছেন তিনি তাদের অনেককেই বদলী করেছেন ক্ষমতার প্রভাবে। তিনি ২০২০ সালে ১৮ বছর বৃহত্তর ময়মনসিংহে চাকুরি করেছেন বিভিন্ন পদে । যুব উন্নয়ন কর্মসূচীর অধীনে যেখানে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি সেখানেই তিনি পোস্টিং বাগিয়ে নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন। তার স্বামী ভালুকার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হিসাবে নিজেকে পরিচয় দেন । মন্ত্রণালয়ের দাপট দেখান। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কে আছেন তাকে বদলী করবেন ? এমন ক্ষমতা কারো নেই বলে দাপট দেখান। ফারজানা পারভিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন । ছাত্র জীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রদল নেতা ছিলেন সূত্রের দাবি । ফারজানা পারভিন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরকে বিতর্কিত করেছেন ।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি তার পুত্র খাইরুল ফাহাতের নামে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে প্রত্যয়ন পত্র সংগ্রহ করে ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে। জামালপুর সদর উপজেলার এনায়েতপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৩য় শ্রেনির নিয়মিত ছাত্র হিসাবে প্রত্যায়ণপত্র সংগ্রহ করেন । অথচ ঐ স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, আমি খায়রুল ফাহাত নামের কোন ছাত্রের প্রত্যায়নপত্র দেইনি । তিনি বলেন, খায়রুল ফাহাতকে কয়েকদিন স্কুলে ক্লাস করেছে এটা সত্য । তবে আমার স্কুলের ছাত্র সে ছিল না । আমি তাকে কোন প্রত্যায়ন পত্র দেইনি। প্রত্যায়নপত্র কি করে নিয়েছে এটা আমারও প্রশ্ন? বিষয়টি নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছে ময়মনসিংহে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, খায়রুল ফাহাত ময়মনসিংহ শহরের প্রগ্রেসিভ স্কুলের ছাত্র ছিল। এদিকে ফারজানা পারভিন ময়মনসিংহ শহরের বাসায় থেকে কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে গিয়ে কি করে ন্যাশনাল সার্ভিস প্রকল্পের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেন ? না গিয়েই কি করে বিল উত্তোলন করেন ? এমন প্রশ্ন উঠেছে । তার বিরুদ্ধে সংবাদপত্রে খবর প্রকাশ হয়েছে । খবরে প্রকাশ , তার যোগসাজশেই প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অনেক অর্থ নয়ছয়, অপচয় , আত্বসাত করা হয়েছে । ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলায় কর্মসংস্থান বাড়ানোর লক্ষ্যে পাইলট হিসাবে সরকার ন্যাশনাল সার্ভিসের আওতায় প্রকল্প হাতে নেয় । এসএসসি পাশ বা ততোধিক পাস তরুন তরুনীরা এই কর্মসূচীর আওতায় প্রকল্পকালনি সময়ে কর্মসংস্থান ভাতায় কাজ করেছেন হিসাবে দেখানো হয় ।
অভিযোগ উঠেছে , প্রকল্পে নিয়োগপ্রাপ্তদের অনেককে এক উপজেলার লোক অন্য উপজেলায় দেখানো হয়েছে, সরকারি কর্মচারিদের এবং আত্বীয় স্বজনদের দেখানো হয়েছে । এনআইডি কার্ড ও জন্ম নিবন্ধন জাল দেখিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ত্রিশালের মূখ্যপুর গ্রামের বাসিন্দা ফুলপুর পৌরসভায় কমরত কর্মচারি আনোয়ার হোসেনকে প্রকল্পের আওতায় ত্রিশালের মাঠকর্মী হিসাবে দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ফুলবাড়িয়ার কয়েকজন স্কুল শিক্ষিকাকে কর্মী হিসাবে দেখানো হয়েছে । এই পকল্প তদারকির দায়িত্বে ছিলেন, ময়মনসিংহ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সাবেক উপ পরিচালক ফারজানা পারভিন। অভিযোগ আছে, ময়মনসিংহ শহরের মাসকান্দা বাইপাসসহ শহরের কয়েকস্থানে কয়েক কোটি টাকার জমি ক্রয় করেছেন তিনি। তিনি এহেন কর্মকান্ডে সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা বিব্রত করেছেন ।জানা যায়, ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির আওতায় তিন মাসের প্রশিক্ষনের পর সরকারের দেয়া বিভিন্ন কর্মসংস্থানে নিয়োজিত করা হয় মাঠকর্মীদের । দুর্নীতি অনিয়ম ও সঠিক নিয়োগ না হওয়ায় প্রকৃত তরুনদের হয়নি যথাযথ কর্মসংস্থান ।
সূত্র জানা গেছে, ময়মনসিংহের ধোবাউড়া, গৌরীপুর, হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ সদর এবং ত্রিশালে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচীর ট্রেইনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি একই সাথে একই সময়ে । সকল ব্যাচেই তিনি উপস্থিত দেখিয়েছেন । দুর্নীতি অনিয়ম করে কর্মসূচীর ময়মনসিংহে ২৯২ কোটি ১১ লাখ ৫শ’ ১২ টাকার বিল পরিশোধ করিয়েছেন বা ব্যয় দেখিয়েছেন তিনি। মহামারি করোনা ভাইরাসের বিস্তারকালে তিনি ময়মনসিংহে কর্মরত থাকার সময় ভার্চুয়াল মিটিং করে উপস্থিত দেখিয়ে টিএডিএসহ বিভিন্ন বিল ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন ।তার এই কর্মকান্ডের সাথে আরো কয়েকজন উপজেলা কর্মকতার যোগসাজোশ আছে। অভিযোগ আছে ডিডি ফারজানা পারভিন ঘুরে ফিরে ময়মনসিংহে থাকতে চান। তার নাকি উপর মহলে হাত রয়েছে।