জনকল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করতে চেয়ারম্যান হতে চায় ড.সেলিনা রশিদ

আরিফ রববানী ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে চান ভালুকা  উপজেলা পরিষদের মহিলা  ভাইস চেয়ারম্যান কবি ড.সেলিনা রশিদ। এলাকায় সেলি আপা’ নামে পরিচিত। তিনি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী একজন শহীদ বীরমুক্তিযোদ্ধার কন্যা। বাবার মত জনগণের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করতে চান।  তাই রাজনীতির পাশাপাশি সমাজের জনকল্যাণমুখী কাজে মনোযোগী হওয়ায় ভালুকার মানুষ তাকে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন। তবে তিনি এক উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান হলেও সব উপজেলাতেই কাজ করেছেন। যে কারণে জেলাজুড়ে রয়েছে তার ব্যাপক সুনাম ও পরিচিতি।

ড.সেলিনা রশিদ ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য,জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ভালুকা উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে রাজপথে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েন নিজের জীবন বাজী রেখে।একজন নারী নেত্রী হিসাবে নারী অধিকার বাস্তবায়ন ও নারীদের বিপদে আপদে পাশে থাকায় তাকে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের নারী উন্নয়ন ফোরামের আঞ্চলিক কো-অর্ডিনেটর হিসাবে দায়িত্ব দিয়েছে নারী উন্নয়ন ফোরাম। বিশেষ করে নারীদের বিপদে পাশে থেকে এলাকায় বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। মানুষের বিপদে নারী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছুটে গেছেন জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে।  বন্যায়, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণকে সহায়তা করেছেন। নারী নির্যাতনে বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোসহ বিচারিক কাজে ছুটে গেছেন বিভিন্ন গ্রামে। কথা বলেন গুছিয়ে মিশুক প্রকৃতির মানুষ তিনি।

জনপ্রতিনিধি হওয়ার নেপথ্যে তাঁর বাবা একজন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা । বাবার অণুপ্রেরণা জনপ্রতিনিধি হতে সাহায্য করেছে। সেই ছোটবেলা থেকে জনপ্রতিনিধি হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। জনপ্রতিনিধি হলে অনেক মানুষের সেবা করা যায়। ২০১৯সালে সেই সুযোগ এসে গেল। নির্বাচিত হলেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান। শুরু হলো নতুন সংগ্রাম। সমাজের নানা অসঙ্গতি আর অনিয়মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন। সাধারণ মানুষের বিপদে আপদে ছুটে গেলেন। সাধ্যমত সাহায্য সহযোগিতা করলেন কবি ড.সেলিনা রশীদ।  যে কারণে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা তাকে এবার স্বপ্নের পরিধি বৃদ্ধির লক্ষে পৌছাতে চায়।  ফলে আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ জেলা থেকে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে ধানমন্ডি ৩/এ-তে আওয়ামী লীগ সভাপতির  কার্যালয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তিনি মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করায় জেলার নারীদর মাঝে স্বস্তির নিঃশ্বাস দেখা দিয়েছে।প্রাণপ্রিয় সেলি আপাকে এবার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে উঠেপড়ে লেগেছে জেলার নারী নেত্রীরা।

কবি ড.সেলিনা রশিদ বলেন, ‘আমি প্রতিশ্রুতি রক্ষা  করি। চেষ্টা করেছি ভালুকাসহ  ময়মনসিংহের মানুষের সেবা করার। নারী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছুটে গেছি মানুষের আপদে বিপদে। বাল্য বিয়ে, মাদকের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার ছিলাম। ভালুকা উপজেলায় ব্যক্তিগত ও সরকারি সহযোগিতায় অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। এ জন্য মানুষ তাকে নির্বাচিত করেছে। ভালুকাবাসীর সেবা করার পাশাপাশি  নতুন কিছু করার লক্ষে জেলা পরিষদ নির্বাচনে সুযোগ করে দিতে  জনগণের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি । জেলাকে নারী নির্যাতন, বাল্য বিবাহ, দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত  একটি মডেল জেলা হিসেবে গড়তে চাই। এ জন্য সকলের সহযোগিতা চান ড.সেলিনা রশিদ।

 তিনি বলেন, ‘জনসেবায় পরিবারের কোন আপত্তি নেই। নেই সন্তান ও স্বামীর আপত্তি। আসলে জনপ্রতিনিধি হওয়ায় সংসার, সন্তান আর স্বামীর জন্য কিছু ঘাটতি থাকে। তাদের সময় দিতে পারি না। ব্যস্ত থাকতে হয়। প্রতিদিন প্রচুর ফোন ধরতে হয়। দৌঁড়াতে হয়। তারা এখন সহে গেছেন। জনসেবা করায় পরিবারের কারও কোন আপত্তি নেই। অনেকে দিন আছে সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে গভীর রাতে ফিরতে হয় তাকে। তবুও পরিবারের অসন্তোষ নেই। বরং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন স্বামী-সন্তানরা। তার কাজে পরিবারের কেউ বাধা দেন না। মেনে নিয়েছেন সবাই তার কাজ।’

বাল্য বিবাহ, যৌতুক ও মাদকের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু থেকেই তিনি বাল্য বিবাহ, যৌতুক, মাদক, নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছেন। অনেকাংশে তিনি সফলও হয়েছেন। এ পর্যন্ত  হাজারের বেশি বাল্য বিবাহ ঠেকিয়েছেন। বাল্য বিবাহের খবর পেলেই গাড়ী নিয়ে হাজির হন মেয়ের বাড়িতে। অভিভাবকদের বুঝিয়ে চেষ্টা করেছেন বাল্য বিবাহ বন্ধ করতে। এতে কাজ না হলে পুলিশ ও প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে বাল্য বিবাহ বন্ধ করেছেন। মানুষকে বিশেষ করে নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য উদ্ধুদ্ধ করেছেন। কারণ তিনি জানেন নারীরা স্বাবলম্বী হলে নারীদের ওপর অত্যাচার জুলুম কমে আসবে। নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠিত হবে বলেও মনে করেন তিনি।

কবি ড.সেলিনা রশিদ সমাজ সেবায় অবদানের জন্য তিনি তিনি গত ২০১৩ সালে ঢাকা বিভাগীয় জয়িতা বিপন্নতায় শিক্ষা  পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া গত ২০১৮ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক স্বর্ণ পদক পুরস্কার প্রাপ্ত হন।  পুরস্কারের জন্য তিনি কাজ করেন না। কাজ করছেন মানুষের কল্যাণে। এই কাজ তিনি আজীবন করে যেতে চান। জনগণই আমাকে পুরস্কৃত করেছে, জনগণের পুরস্কারের থেকে আর কোন পুরস্কার হয় না। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন  জেলা পরিষদ নির্বাচনে জনগণ তাকে অবশ্যই পুরস্কৃত করবে।