খায়রুল আলম রফিক : গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে করোনা প্রতিরোধে মাঠে কাজ শুরু করেছে ময়মনসিংহ পুলিশ। গত ১১ এপ্রিল ময়মনসিংহে লকডাউন ঘোষণা করা হলে কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্ন মধ্য আয়ের শ্রমজীবী মানুষের পাশে মানবিক সহায়তা নিয়ে দাঁড়ায় পুলিশ। জেলা পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে একজন সদস্য পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার পাশাপাশি খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম শুরু করেন।
করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে। এমনকি জেলার পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান পিপিএম (সেবা) প্রতিটি উপজেলায় গিয়ে অসহায় মানুষের জন্য খাদ্য সামগ্রী নিজ হাতে বহন করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন এবং সচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম শুরু করেন। এ কার্যক্রম এখনো অব্যাহত আছে। অতীতে এমন মানবিক পুলিশকে দেখেননি ময়মনসিংহের মানুষ।
চীনের উহান শহর থেকে শুরু হওয়া করোনাভাইরাস এখন সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। এ থেকে বাদ যায়নি বাংলাদেশও। ইতোমধ্যে আক্রান্ত দেশগুলোর করোনাভাইরাস মোকাবেলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে জরুরি পরিষেবা ব্যতীত সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। সকল ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রাখার পাশাপাশি মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরার উপর বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর থেকে এর প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পেতে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ময়মনসিংহ শহরের জনসাধারণ বা জনগণকে করোনা সতর্কতা সম্পর্কে স্বাস্থ অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনা মেনে চলার জন্য সর্বোচ্চ প্রচার প্রচারণা চালিয়ে আসছে। ময়মনসিংহ শহরের প্রতিটি অলিতে গলিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি হ্যান্ড মাইক দিয়ে মানুষকে সচেতন করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
ময়মনসিংহ জেলার প্রতিটি থানা ও দফতরে সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং আগত সেবা প্রত্যাশী ও পুলিশ সদস্যদের থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে স্ক্যানিং করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি থানা নিজস্ব উদ্যোগে জনসাধারণের মধ্যে হ্যান্ড গ্লাভস ও মাস্ক বিতরণ করে যাচ্ছে।
করোনা নিয়ে ময়মনসিংহ জেলার মানুষকে সচেতন করার লক্ষে বিভিন্ন ব্যানার, লিফলেট, ফেস্টুনের মাধ্যমে এবং স্যোশাল মিডিয়ায় করোনা সতর্কতা সম্পর্কে ব্যাপকভাবে প্রচার প্রচারণা করা হচ্ছে। কেউ যাতে করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে না পারে সেজন্য সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং করা হচ্ছে।
ময়মনসিংহের এসপি আহমার উজ্জামান পিপিএম প্রায় ১৮০০শ জন অসহায়, গরিব, দুখি মানুষের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী (চাল ৫ কেজি, আলু ২ কেজি, তেল ১ কেজি, পেঁয়াজ ১ কেজি, ডাল ১ কেজি) বিতরণের মাধ্যমে মানবিক কার্যক্রম শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের ১৩টি থানার উদ্যোগে অসহায়, গরিব, দিনমজুর, তৃতীয় লিঙ্গ, বেদে সম্প্রদায়, রিকশাচালক, ট্রাক ড্রাইভার ও শ্রমিক, চা-শ্রমিকদের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। অনেক সময় যারা চক্ষু লজ্জার কারণে ত্রাণ চাইতে পারে না এমন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য রাতের আঁধারে ঘরের দরজায় ত্রাণ সামগ্রী রেখে আসছে ডিবি পুলিশ।
অনেক সময় হালুয়াঘাট দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ভূমিহীন মানুষজন না খেয়ে আছে এমন খবর পেলে থানার ওসিরা নিজ নিজ উদ্যোগে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে হেঁটে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন। ময়মনসিংহ শহরে অসহায় পথশিশু, ছিন্নমূল মানুষজনের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করে আসছে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১০ জুন থেকে জেলার ১৩টি থানার অনেক এলাকায় কখনও পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান নিজে গিয়ে কখনও তার সহকর্মীদের মাধ্যমে নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন। লকডাউনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন মধ্যবিত্ত এক শ্রেণির মানুষ কষ্টে দিনাতিপাত করছে। এমনকি আত্মসম্মানের ভয়ে সরকারি বেসরকারি সংস্থার সাহায্য থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছেন ।
জেলা পুলিশের এমন মানবিক কর্মকান্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সজল মিয়া। তিনি জানান, পুলিশের এমন মানবিকতা ইতোপূর্বে তারা কখনও দেখেননি। পুলিশের এমন মানবিক আচরণ ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জানতে চাইলে পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান বলেন, পুলিশ একমাত্র প্রতিষ্ঠান যারা জনগনের সবচেয়ে কাছাকাছি থেকে দায়িত্ব পালন করে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে পুলিশ মানুষের কাছাকাছি থেকে দায়িত্ব পালন করার সুবাধে মানুষের খাদ্য সামগ্রীর কষ্টের বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছে। মূলত এই ধারণা থেকেই সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে সাধ্যমত খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিতে চেষ্টা করছে।