কবি হওয়ার বাসনা ছিল, ধনী হওয়ার নয়

সাহিত্য ডেস্কঃ রাশিদ রিয়াজ, ফেসবুক থেকে, কবি নির্মলেন্দু গুণ তার কুকুরগুলোকে ভাল খাবার খেতে দেন বলে সুদীপ্ত চক্রবর্তী ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে কবির কাছে আর্জি জানান, ‘দাদু,মাঝে-মাঝে এদের (আমার তিনটি কুকুর) মাছ মাংস, ফল-মূল, দুধ-ডিম খেতে দেবেন। সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আপনার অনেক আছে।’

সুদীপ্তের ‘সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আপনার অনেক আছে’ এমন মন্তব্য পড়ে কবি নির্মলেন্দু গুণ অকপটে স্বীকার করেন ‘হ্যাঁ, আমার যা আছে, তা অনেক আছে’। এবং এই ‘অনেক আছে’ এর ব্যাখ্যা দিয়ে কবি বলেন, ‘ আমি কাশবন ও কবিতাকুঞ্জের মোট সাতজন কর্মচারীর বেতন দিই, তাছাড়া চার পাঁচটা গরিব পরিবারকে প্রতি মাসের শুরুতেই আমি কিছু অর্থ সাহায্য প্রেরণ করি। তারপরও আমার টাকা শেষ হয় না। এক পুরস্কারের টাকা না ফুরাতেই আরেক পুরস্কার এসে জোটে।

আমার প্রকাশকদের কাছে আমার প্রচুর সম্মানী পাওনা আছে। এই পাওনা কোনোদিন শেষ হবার নয়। আমি জানি, আমি যখন থাকবো না, তখন আমার বই আরও বেশি বিক্রি হবে। আমার ছোট প্রকাশকদের বলি– আপনাদের আমার বইয়ের রয়ালিটি শোধ করতে হবে না। পাঁচটির বেশি বই যাদের আছে, তারা ১৫% এর স্থলে শতকরা ১০% হারে আমার মনোনীত উত্তরাধিকারীদের রয়ালিটি দিবেন। কাশবন ও কবিতাকুঞ্জের দিকে চোখ রাখবেন।

আমার একমাত্র কন্যাটি ওর প্রয়োজনের চেয়ে অধিক অর্থ উপার্জন করে। ওকে কিছু সম্মানসূচক রয়ালিটি দিলেই হবে।

আমার নিজের জন্য আমাকে টাকা উপার্জন করতে হয় না। গত বিশ বছর হলো আমি অন্যদের জন্য উপার্জন করছি।

আমি কামরাঙ্গীরচরে যে তিনতলা বাড়িটি বানিয়েছি, সেটি আমার নিজের জন্য নয়। দীর্ঘদিন ধরে আমার ওপর নির্ভরশীল কিছু আশ্রয়হীন দরিদ্র মানুষকে আমি ঐ বাড়িটি দান করে দিয়ে যাবো।

অজানা কারণে, গ্রহণের চেয়ে দান করে আমি বেশি আনন্দ পাই।

অথচ এই আমিই একসময় ঢাকার পথে-ঘাটে ঘুমিয়েছি। ক্ষিধার জ্বালায় হোটেলে পেট পুরে খেয়ে খাদ্যের দাম না মিটিয়ে দৌড়ে পালিয়েছি।

শূন্য হাতে, হুলিয়া মাথায় নিয়ে আমি ১৯৬৭ সালে ঢাকায় এসেছিলাম।

কবি হওয়ার গোপন-বাসনা ছিলো মনে।

ধনী হওয়ার কোনো বাসনা ছিলো না।

এখন কবি হওয়ার পর দেখছি- আরে, আমিতো একজন ধনী মানুষও বটে। ভাগ্যিস জনকল্যাণে অর্থ দান করার বদভ্যাসটা আমার মধ্যে ছিল। তা না থাকলে সম্পদের (উচ্চ-রক্তচাপের মতো) চাপে অনেক আগেই আমার মরণ হতো।