ত্রিশাল প্রতিদিন ডেস্ক:: কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদকে সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর ডিগ্রির স্বীকৃতি দিতে সংসদে বিল পাস হয়েছে। বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ‘আল হাইআতুল উলয়া লিল জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীন ‘কওমি মাদ্রাসমূহের দাওরায়ে হাদিসের (তাকমীল) এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) এর সমমান প্রদান বিল-২০১৮’ সংসদে পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
এর আগে বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি হয়। গত ১০ সেপ্টেম্বর বিলটি সংসদে তোলার পর তা পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।
জাতীয় পার্টির সাংসদ সেলিম উদ্দিন বিলটি নিয়ে জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব দিয়ে বলেন, ‘মনে হচ্ছে, এই আইনে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সাধারণ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) আছে, এখানে সে ধরনের কিছু নেই। মনে হচ্ছে, চাপের মধ্যে বা যেমন খুশি তেমনভাবে এটি করা হয়েছে। এই বিল নিয়ে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে।’
জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘আইনে সরকার বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণের কোনও সুযোগ রাখা হয়নি। হয়তো এর কারণ দেওবন্দের কারিকুলাম অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে এটি করা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষায় মাস্টার্সের কারিকুলামের একটি কমা পরিবর্তন করতেও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন লাগে। হয়তো বাস্তবতার কারণেই ব্ল্যাঙ্ক চেক দেওয়া হয়েছে।’ ভবিষ্যতে যাতে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তার ব্যবস্থা রাখার আহ্বান জানান তিনি। তবে তিনি এ আইন প্রণয়নের উদ্যোগকে সাধুবাদও জানান।
বর্তমানে ছয়টি বোর্ড কওমি মাদ্রাসাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এদের নিয়ে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড গঠন করা হবে। এর নাম হবে ‘আলহাইয়্যাতুল উলিয়ালিল জামিয়াতুল কওমিয়া বাংলাদেশ’, আর কার্যালয় হবে ঢাকায়।
বিলে বলা হয়েছে, এই আইন বাংলাদেশের দারুল উলুম দেওবন্দের নীতি, আদর্শ ও নিসার (পাঠ্যসূচি) অনুসরণে পরিচালিত হবে এবং কওমি মাদ্রাসাগুলোর দাওয়ারে হাদিস এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহ আহমদ শফী, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন পর্যালোচনা কমিটির আহ্বায়ক মওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদসহ কয়েকশ’ আলেমের উপস্থিতিতে গণভবনে এক অনুষ্ঠানে কওমির সনদকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর দুই দিন পর কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদকে সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর ডিগ্রির স্বীকৃতি দিয়ে আদেশ জারি করে সরকার। সনদ বিষয়ক যাবতীয় কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য শাহ আহমদ শফীকে চেয়ারম্যান করে একটি কমিটিও সেসময় করা হয়।
২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল গঠিত ওই কমিটিকে পাস হওয়া এই আইনের আওতায় আনা হয়েছে। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এ কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হবে, কমিটিতে ৯ ধরনের ব্যক্তি থাকবেন।
বেফাকুল মাদ্রারিসিল আরাবিয়ার সভাপতি কমিটির চেয়ারম্যান, বেফাকুল মাদারিসিলের সিনিয়র সহ-সভাপতি, কো-চেয়ারম্যান এবং বেফাকুল মাদ্রারিসিল আবারিয়া বা এর মহাসচিব মনোনীত আরও পাঁচজন সদস্য থাকবেন কমিটিতে। এ ছাড়া, গওহরডাঙ্গার বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া, চট্টগ্রামের আন্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসিল কওমিয়া, বগুড়ার আযাদদ্বীনি এদারায়ে তালিম, বগুড়ার তানজীমুল মাদারিসিল কওমিয়া এবং জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে দুই জন করে সদস্য কমিটিতে আসবেন।
চেয়ারম্যান ইচ্ছা করলে যে কাউকে কমিটিতে যোগ করে নিতে পারবেন। তবে সব মিলিয়ে তা ১৫ জনের বেশি হবে না। কমিটি ‘দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে’ থাকবে।
বিলের উদ্দেশ ও কারণ সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “কওমি মাদ্রাসার বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে এবং কওমি মাদ্রাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তা বজায় রেখে ‘আল হাইআতুল উলয়া লিল জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ এর অধীন ‘কওমি মাদরাসমূহের দাওরায়ে হাদিস (তাকমীল) এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) এর সমমান প্রদান বিল আনা হয়েছে।” – বাংলা ট্রিবিউন।