ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় দ্বিতীয় জানাজা

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে নেতাকর্মীদের কাঁধে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মরদেহ।

আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মরদেহ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) হিমঘরে রাখা হয়েছে।

আজ রোববার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা, কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহে জানাজা শেষে বাস আসর বনানী কবরস্থানে সৈয়দ আশরাফের দাফন সম্পন্ন হবে।

গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মরদেহ বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছায়। কফিনে মোড়ানো মরদেহ গ্রহণ করেন তাঁর ছোট ভাই সাফায়েত উল ইসলাম। এ সময় বরেণ্য এই রাজনীতিবিদকে দেখার জন্য বিমানবন্দরে ভিড় করেন তাঁর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী ও আত্মীয় স্বজনরা। তাঁরা মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন। প্রিয় এই নেতার শোকে এ সময় হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

সেখানে অশ্রুসিক্ত শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগের নেতারা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টাপরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম ও ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন সিরাজ ও এনামুল হক শামীম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ বিমানবন্দরে উপস্থিত হন।

বিমানবন্দরে দোয়া ও মোনাজাত শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। এই ক্ষতি পূরণ হবার নয়। রাজনীতি অনেকেই করেন, কিন্তু এদেশের রাজনীতিতে ভালো মানুষের সংখ্যা হাতে গোনা। খুব বেশি ভালো মানুষ রাজনীতিতে নেই। এদের মধ্যে সৈয়দ আশরাফ একজন বিরল।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘সব সময় আওয়ামী লীগের যুগসন্ধিক্ষণে, যেমন বিগত ১/১১ এর সময় যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আমরা কারাগারে, এই সৈয়দ আশরাফই আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি হয়েছিলেন। তাঁর প্রতি আমি সশ্রদ্ধ শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।’

বিমান বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ২১ বেইলি রোডের সরকারি বাসায় আনা হয়। সন্ধ্যা থেকে প্রিয় নেতাকে শেষবারের মতো দেখতে আত্মীয়-স্বজন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী ও সাধারণ মানুষ বেইলি রোডে অবস্থান নেন। মরদেহ আসার পর কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। শ্রদ্ধা জানানোর জন্য অনেকের হাতে ছিল ফুল। এরপর লাশ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) হিমঘরে।

আগামীকাল সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সৈয়দ আশরাফের প্রথম জানাজা হবে। এরপর হেলিকপ্টারে করে মরদেহ নেওয়া হবে গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। দুপুর ১২টায় কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানে দ্বিতীয় জানাজা হবে। এরপর দুপুর ২টায় ময়মনসিংহের আঞ্জুমান ঈদগাঁহ মাঠে তৃতীয় জানাজার পর আশরাফুল ইসলামের মরদেহ ঢাকায় এনে আসরের পর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে। জানাজায় সর্বস্তরের জনগণকে অংশগ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

গত ৩ জানুয়ারি রাতে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সৈয়দ আশরাফ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। তিনি এক মেয়ে এবং বহু রাজনৈতিক সহকর্মী, আত্মীয়-স্বজন, গুণগ্রাহী এবং নেতা-কর্মী রেখে গেছেন।

তথ্যসূত্র এন টিভি