অভিশাপের হাত থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

 আন্তর্জাতিক নিউজঃঃ অভিশাপের হাত থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।  ১৯ জানুয়ারি ট্রাম্প হোয়াইট হাউস ছেড়ে ফ্লোরিডায় নিজের বাড়িতে চলে যাবেন। ২০ জানুয়ারি নির্বাচিতদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে শেষ হলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদ। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে অস্ত্র বা পেশী শক্তি দিয়ে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা রোধ করা যায় না। গোটা বিশ্ব ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার যে চিত্র দেখেছে সেটাই যুক্তরাষ্ট্রের আসল চেহারা নয়। অগণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার চেহারা মার্কিন কংগ্রেস বিশ্ববাসীকে আবার দেখিয়ে দিয়েছে। ট্রাম্প বিদায় নেয়ার আগে গণতন্ত্রকে কলঙ্কিত করেছেন। জোবাইডেনের বিজয় চূরান্ত অনুমোদন দিতে বা সত্যায়ন করতে ০৬ই জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটাল হেলে কংগ্রেসের উভয় পক্ষের যৌথ অধিবেশন চলাকালে নিজের ও সমর্থকদের দিয়ে সশস্ত্র হামলা করে, তিনি চিরদিনের জন্য দেশটির ইতিহাসে একজন খলনায়ক হিসেবে স্থান পাকাপোক্ত করে নিলেন।

রাশিয়ার সাইবার হামলাকারী চক্র, চীনা গোয়েন্দা বাহিনী কিংবা তথাকথিত জেহাদী গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের ফল নয় এটি, খোদ যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট তার সমর্থকদের উস্কে দিয়ে এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ২৩০ বছরের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে এ রকম ঘটনা নজিরবিহীন।  ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়ার আগে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ব্যবহার করে বড় ধরনের কোনো অঘটন ঘটে বা পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে নিতে না পারেন, সে জন্য সতর্ক রয়েছে শীর্ষস্থানীয় নেতা ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা।

খবরে বলা হয়েছে, স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে মার্কিন সশস্ত্রবাহিনীর সংস্থার চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেছেন তার সাথে আলোচনায় আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দেন। যাতে ট্রাম্প সামরিক বাহিনী ও পরমাণু অস্ত্রের কোনো অপব্যবহার করতে না পারেন। নির্বাচিত হবার পর থেকেই ক্ষমতার দম্ভে ট্রাম ছিলেন অন্ধ, যখন যা মন চায় তাই করে প্রশাসনকে সবসময় তার পরিবার কেন্দ্রিক রাখতে চেয়েছেন। ট্রাম্প কখনোই কারো পরামর্শ শুনতেন না। মুখে যা আসতো তাই বলে দিত একারণেই শুরু থেকেই তিনি ছিলেন বিতর্কিত। কাউকে কখনো সম্মান করেননি এমনকি খুব কাছের লোক জন তার কাছ থেকে প্রাপ্য সম্মানটুকু পাননি। মিডিয়ায় নিজের সমালোচনা কোনভাবেই বরদাশত করতে না। তিনি কয়েকবারই সংবাদমাধ্যমের ওপর তিনি ছিলেন ক্ষিপ্ত সমালোচক সংবাদমাধ্যমকে তিনি নিজের পক্ষে আনতে নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করতেন ।কিন্তু মার্কিন মিডিয়া তার কাছে কখনোই আত্মসমর্পণ করেনি।

গত বছরের ২৩ শে নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত হয়েও কারচুপি করে তাকে হারানোর মিথ্যা অভিযোগ তুলে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সবকিছুই করে আসছিলেন। কোন অবস্থাতেই তিনি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন না আইনি লড়াইয়ে হেরে যাবার পর সামরিক আইন জারি করার হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। এরপর ০৬ ই জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট বা কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটাল হিলে নিজের সমর্থকদেরকে দিয়ে হামলা করালেন কিন্তু কংগ্রেস পর্যন্ত তাকে থামিয়ে দিয়েছে সমর্থকদের সশস্ত্র হামলার মুখেও নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থেকে কংগ্রেস নির্বাচনে বিজয়ী অনুমোদন করেছে গণতন্ত্র নির্বাচন ব্যবস্থার পরাজিত বর্ণবাদী ও অগণতান্ত্রিক মানসিকতার। ২৩০ বছরের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ইতিহাসে এমন ভয়ঙ্কর স্বেচ্ছাচারী পাগলাটে বদমেজাজীও কলঙ্কিত চরিত্রের আর কখনো আসেনি ক্ষমতায় ।দেশের জনগণের উপর আস্থা ছিল না অথচ ২০১৬সালের ৩০ লাখ ভোট বেশি পেয়ে হিলারী তার কাছে হেরে গিয়ে পরাজয় মেনে নিয়েছিলেন এর প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নজির স্থাপন করেন। অথচ সুরক্ষিত কংগ্রেস ভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন এ বাহিনীর ২০০০ সদস্য ওই ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত কিছু ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে দাঙ্গাকারীরা যখন ভবনে ঢুকছিলেন তখন কিছু কিছু পুলিশ সদস্য দাঁড়িয়ে আছেন।

নজিরবিহীন তাণ্ডব চালানোর পরও ট্রাম্পের সমর্থকদের নির্বিঘ্নে ভবন ত্যাগ করতে দেখা গেছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক কংগ্রেস সদস্য ও নবনির্বাচিত কংগ্রেস সদস্যরা। তারা ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি জানিয়ে বলেছেন এই দাঙ্গাকারীরা যদি কৃষ্ণাঙ্গ হত তবে তাদের কাছে আসার আগেই উনি করে মাটিতে ফেলে দেয়া হতো। কৃষ্ণাঙ্গকে শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের গতবছর বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সেই সময় পুলিশ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে টিয়ার গ্যাস রাবার বুলেট ও লাঠিপেটা করেছে গণগ্রেফতার ও করা হয়েছে। এবার  ট্রাম্পের পক্ষে প্রচারণা  ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের জাতীয় পতাকার পাশাপাশি কনফেডারেট পতাকা।১৮৬১ সালে ক্রীতদাসপ্রথার সমর্থক ১১ টি রাজ্য আমেরিকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কনফেডারেট স্টাইলস গঠন করেছিল ।দীর্ঘ চার বছর গৃহযুদ্ধের পর কনফিডেন্স কে পরাজিত করে আমেরিকাকে সভ্য বন্ধ করেছিলেন আব্রাহাম লিনকন। দুর্ভাগ্য হচ্ছে দাস প্রথা বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টির নেতা এখন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পলিসি ও সিনটের সংখ্যালঘু দলের নেতা জাকসন ভাইস প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন তিনি যেন সংবিধানের ২৫ তম সংশোধনী প্রয়োগ করে ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করেন ।

মেলানিয়া’ ট্রাম্পে’র কপালে’ হোয়াইট’ হাউসে”র নতুন অতিথি’ প্রেসিডেন্ট’ জো বাইডেন’ ও ফার্স্টলেডি’ জিল বাইডেনকে’ কফি’ পানে’ আপ্যায়ন করা’র সুযোগ’ জুটলো’ না। মার্কিন’ ঐতিহ্য’ অনুযায়ী, বিদায়ী’ ফার্স্টলেডি’ ও প্রেসিডেন্ট’ নতুন’ প্রেসিডেন্ট’ ও ফার্স্টলেডি’কে প্রথমে’ কফি’ দিয়ে আপ্যায়ন’ করেন’ হোয়াইট’ হাউসে। তারপর’ নতুন’ প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্টলেডি বিদায়ী’ প্রেসিডেন্ট’ ও ফার্স্টলেডি’কে মেরিন’ ওয়ানে’র হ্যালিপ্যড পর্যন্ত বিদায় জানিয়ে এগিয়ে দিয়ে’ আসেন।

জানা যায়, বাইডেনে’র শপথ’ গ্রহণে’র আগেই’ ২০ জানুয়ারি সকালে’ ওয়াশিংটন’ ছেড়ে’ যাবেন’ ট্রাম্প। পাড়ি জমাবেন’ ফ্লোরিডার’ পাম’ বিচে’র মার-এ-লাগো ক্লাব হাউসে’র উদ্দেশে’ স্বপরিবারে।