অনীহা বিশ্বের প্রায় সব দেশের দম্পতিদের মধ্যেই –

বিশ্বের যেকোনো সুস্থ ও স্বাভাবিক বিবাহিত সম্পর্কের বুনিয়াদ মন ও শরীর। চিকিৎসকদের মতে, সুস্থ যৌনতা কেবল সম্পর্কের ভিতকে মজবুত করে এমনই নয়, মানসিক অবসাদ দূর করা ও জীবনীশক্তি বাড়ানোসহ নানা ইতিবাচক দিক রয়েছে।

তবে যৌনজীবনে নিরাসক্তি ওবিছানায় অনীহা বিশ্বের প্রায় সব দেশের দম্পতিদের মধ্যেই দেখা দিচ্ছে। আর তার মূল কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে স্মার্টফোন! সম্প্রতি এক গবেষণায় এমন তথ্য ওঠে এসেছে। মূল সমীক্ষাটি যুক্তরাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে হলেও এ সমীক্ষার সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন বিভিন্ন দেশের মনস্তত্ত্ববিদরাও।

গবেষণায় বলা হয়, লিভ ইন হোক বা বিবাহিত সম্পর্ক— সব ক্ষেত্রেই যৌনজীবনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বেডরুমে স্মার্টফোনের হাতছানি। সদ্য বিবাহিতরাও বাদ নন— এ তালিকা থেকে। ফলে ‘কোয়ালিটি টাইম’–এর হাহাকার বাড়ছে। তৈরি হচ্ছে নানা সামাজিক ও সাংসারিক জটিলতা।

যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন প্রদেশ থেকে প্রায় ২ হাজার দম্পতির ওপর সমীক্ষা চালানো হয়েছে। তাদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশই একান্ত নিজস্ব সময়ও রতিক্রীড়ার চেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকেন মোবাইল ফোনে। শুধু তাই নয়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষ অধিকাংশের দাবি, ঘুমাতে যাওয়ার আগে তাদের প্রেমিক বা জীবনসঙ্গীর মুখ নয়, মোবাইল দেখেই চোখ বোজেন তারা। এমনকি, তাদের কারো কারো একই বাড়িতে থেকেও পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে ওঠছে স্মার্টফোন।

সমীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রায় ৫৫ শতাংশের মতো, কেবল যৌনজীবনই নয়, অত্যধিক ফোন ব্যবহারের কারণেই নিজেদের জীবনসঙ্গীর সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্কও ব্যাহত হচ্ছে। ৩৫ শতাংশ জানান, মোবাইল আসক্তির কারণে তাদের মধ্যে বহুদিন ধরেই বিশেষ কোনো শারীরিক সম্পর্ক নেই। তবে এ চিত্র কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, প্রযুক্তির শিখরে থাকা দেশগুলোতেও এর প্রবণতা দিনে দিনে বাড়ছে।

ভারেতের মনোবিদ জয়রঞ্জন রামের মতে, কেবল মার্কিন দেশে নয়, এর আগেও বিভিন্ন সময় নানা দেশেই এ ধরনের সমীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে এবং তাতে এমনই সব ফলাফল বেরিয়ে এসেছে, যা সমাজ ও সংসার জীবন দু’ক্ষেত্রেই বেশ বিপদের। মোবাইলে বুঁদ হয়ে থাকা ভবিষ্যতে সমাজকে আরো বড় বিপদের দিকে নিয়ে যাবে।

মনস্তত্ত্ববিদ ঈশাণী শর্মার মতে, আজকাল মানুষ নিজেকে নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে সেখানে সামাজিক বন্ধন, দায়-দায়িত্ব এমনকি সন্তানের দায়ভারও ফিকে হয়ে আসছে। নিজের জগৎ, নিজস্ব ব্যস্ততা ও জীবনের দ্রুততার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে গিয়ে বাড়ছে অবসাদ। আর তা থেকে চটজলদি মুক্তি খুঁজতে মানুষ আঁকড়ে ধরছে নানা সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মকে। তার ফলেই যৌনতার মতো আবশ্যিক চাহিদাতেও কোপ পড়ছে।