ত্রিশাল প্রতিদিন ডেস্ক::জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তার বাড়িতে তিন বছর কাজ করার পর অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত কিশোরী ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নে নিজ বাড়িতে ফিরে যায়। কিন্তু এখন সে সেখানে নেই। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর যে সালিস হয়েছিল, তাতে বিচার অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তি এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে দেওয়ার পর থেকে কিশোরীটি বাড়িছাড়া। কিশোরীর বাবা অবশ্য বলছেন, মেয়ে বেড়াতে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই কিশোরীর গ্রামের পার্শ্ববর্তী দেবস্থান গ্রামের জহুর আলীর ছেলে মো. সাইদুর রহমান (৩৫) কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা ও পরিবেশনাবিদ্যা বিভাগে সেকশন অফিসার পদে কর্মরত। কর্মসূত্রে সাইদুর পরিবার নিয়ে ত্রিশালে থাকেন। কিশোরীর বাবা জানান, সাইদুরের প্রস্তাবে রাজি হয়ে মাসে তিন হাজার টাকা বেতনে তাঁর বাসায় মেয়েকে গৃহকর্মী হিসেবে পাঠান। মেয়ে তিন বছর সেখানে কাজ করেছে। প্রায় তিন মাস আগে মেয়ের পেটব্যথা ও মাত্রাতিরিক্ত বমি হতে থাকলে তাকে প্রথমে ত্রিশাল হাসপাতালে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে মেয়েটি খানিকটা সুস্থ হলে সাইদুরের শ্বশুর আরো উন্নত চিকিৎসার কথা বলে তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যান। এরপর গত ঈদুল ফিতরের আগে মেয়ে অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি ফিরে আসে। মেয়ের কাছ থেকে বাবা জানতে পারেন, সাইদুর মেয়েটির ওপর যৌন নির্যাতন করতেন। মেয়েটি সাইদুরের স্ত্রীকে তা বললেও কোনো কাজ হয়নি, উল্টো তাকে আরো নির্যাতনের শিকার হতে হতো।
এসব জেনে ওই কিশোরীর বাবা আইনি ব্যবস্থা নিতে চাইলে সাইদুরের লোকজনের বাধার মুখে তা সম্ভব হয়নি। একপর্যায়ে বাবা স্থানীয় লোকজনের কাছে বিচার চাইলে তারা গত মঙ্গলবার রাজীবপুর ইউনিয়ন পরিষদে সালিস বসায়। প্রথম দফায় কোনো সিদ্ধান্ত না হওয়ায় পরদিন গত বুধবার রাতে ফের সালিস বসান ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এ কে এম মোতাব্বিরুল ইসলাম। সালিসে রাজিবপুরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক, অভিযুক্ত সাইদুর রহমান এবং কিশোরীর মা-বাবাসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সালিসে সাইদুর দোষ স্বীকার করেন এবং সালিসের সিদ্ধান্ত অনুসারে মেয়ের বিয়ের জন্য তাঁর কাছ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে আব্দুর রাজ্জাক ওই টাকা কিশোরীর বাবার হাতে দেন। এখন মেয়ে কোথায় জানতে চাইলে গতকাল শনিবার বাবা বলেন, ‘বেড়াইতো গেছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযুক্ত সাইদুর গৃহকর্মীকে গত ৬ মে সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে ত্রিশাল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে গৃহকর্মীর নাম লিখিয়েছেন জিনিহা (১৮), পিতা: আব্দুল জলিল, গ্রাম: কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়। রোগের নাম লেখা রয়েছে ‘সাব একিউট ইনটেস্টাইনাল অবস্ট্রাকশান’।
মেয়ের পরিচয় ভুল লেখার কারণ জানতে সাইদুর রহমানের মোবাইল ফোনে গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবার একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভি করেননি। তবে তাঁর বিভাগীয় প্রধান ইসমত আরা ভুইয়া ইলা বলেন, সাইদুর কাজের মেয়ের বিয়েশাদি নিয়ে একটি পারিবারিক সমস্যার কথা তাঁকে জানিয়েছিলেন। কী ধরনের সমস্যা, এ বিষয়ে তিনি আর খোঁজ নেননি।
রাজিবপুরের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘উভয় পক্ষের মতামত নিয়ে ঘটনাটি ফয়সালা করা হয়েছে।’সূত্র-কালের কন্ঠ.জনকন্ঠ