এইচ এম জোবায়ের হোসাইন::শিক্ষক সংকটে যাতে পাঠদান ব্যাহত না হয়, এ জন্য ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত সরকারি নজরুল একাডেমিতে পাঠদান করছেন সরকারি কর্মকর্তারা। এই তালিকায় আছেন স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল জাকির, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাজমুর রওশন সুমেল, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ওয়াজির আহমেদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি- এসি ল্যান্ড) এরশাদ উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন।
বিদ্যালয়টির এমন পরিবর্তনে খুশি শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীরা। কয়েক শিক্ষানুরাগীর প্রচেষ্টায় ১৯১৩ সালে ত্রিশালের দরিরামপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘দরিরামপুর হাইস্কুল’। প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম হাজি মেহের আলী মৃধা। ৬ একর ১৩ শতাংশ জমিতে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ে ১৯১৪ সালে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে দুই বছর লেখাপড়া করেছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ভারতের আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রাম থেকে ১৯১৪ সালে ত্রিশালের কাজীরশিমলা গ্রামের তৎকালীন দারোগা কাজী রফিজ উল্লাহ তাকে এনে এখানে ভর্তি করিয়েছিলেন। তখন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন বিপিং চন্দ্র চাকলাদার।
পরে এ বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় ‘নজরুল একাডেমি’। সরকারের সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এর নাম ‘সরকারি নজরুল একাডেমি। বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের পর পদাধিকারবলে এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল জাকির। এর পর থেকে মানসম্পন্ন পাঠদান, অ্যাসেম্বলি নিয়মিতকরণ, ডিজিটাইজেশন, সিলেবাস পরিবর্তন, মাসিক পরীক্ষা, ডিজিটাল হাজিরা, বিদ্যালয়ের নামে নিজস্ব ওয়েবসাইট চালুসহ আধুনিক ও মানসম্পন্ন বিদ্যালয় গড়তে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তিনি। শিক্ষক সংকট মোকাবিলায় তারই নির্দেশে ক্লাস নিচ্ছেন অন্য সরকারি কর্মকর্তারা। সরকারি কর্মকর্তা হয়েও ক্লাস নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ইউএনও আবদুল্লাহ আল জাকির জানান, যোগদানের পর একদিন বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে যান।
নিয়ম অনুযায়ী পাঠ শুরু হওয়ার কথা সকাল ৯টায়। কিন্তু তিনি গিয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের পাননি। শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে আসেন ১১টার পর। কেউ হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান চায়ের আড্ডায় আবার কেউ কেউ বাইরে চেয়ার দুলিয়ে জমান রাজনৈতিক আড্ডা। ছিল না ব্যবস্থাপনা কমিটি। বিদ্যালয়টির এই দৈন্যদশা তাকে ভীষণভাবে নাড়া দেয়। পদাধিকারবলে তিনি বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হওয়ায় শিক্ষকদের নিয়ে সভা করেন। সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধানের চেষ্টা করেন। তবে আশানুরূপ ফল পাননি। পরে বিদ্যালয় পরিচালনা ও পাঠদানের দায়িত্ব দেন কয়েক কর্মকর্তাকে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশ কয়েক বছর ধরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ ছিলেন অভিভাবকরা। ২০১৮ সালে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করা হয়। এর পরও লেখাপড়ার মান উন্নয়ন হয়নি। গত বছর নভেম্বরে ত্রিশালের ইউএনও বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে বেহাল অবস্থা দেখে বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি উদ্ধারে নানা পদক্ষেপ নেন। একই সঙ্গে উপজেলার সব কোচিং সেন্টার বন্ধ করা হয়।
জানা গেছে, এসি ল্যান্ড এরশাদ উদ্দিন প্রতিদিন সকাল ৭টায় অ্যাসেম্বলিতে অংশ নিয়ে শিক্ষক-ছাত্রের উপস্থিতি নিশ্চিত করেন। এ ছাড়া সপ্তাহে তিন দিন পাঠদান করেন তিনি। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নাজমুর রওশন সুমেল বলেন, অফিসিয়াল দায়িত্ব পালনের ফাঁকে সপ্তাহে তিন দিন রসায়ন বিষয়ে পাঠদান করি।