কারো চোখে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র ইকরামুল হক টিটু ‘ম্যাজিক ম্যান।’ কেউ কেউ আবার তাকে বলেন, বহুমুখী বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, সাহসী ও কর্মবীর এক নগর পিতা। উচ্চগতির জীবনে মেয়র হওয়ার আগে ও পরে এক মুহুর্তও বসে থাকার মানুষ নন তিনি। টানা সাড়ে ৯ বছর ময়মনসিংহ পৌর মেয়র থাকাকালে বার বার প্রমাণ করেছেন নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়নই তাঁর ব্রত!
নিজের এ লক্ষ্য পূরণে নগরবাসীকে কাঙ্খিত স্বপ্নের নগরী উপহার দিতে দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন। নগরবাসীর সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট থেকেছেন। বিশ্বাস করেছেন পরিকল্পিত উন্নয়নেই বদলে দেয়া সম্ভব জীর্ণ ময়মনসিংহকে। ফলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে অলস বসে না থেকে ছুটে বেড়িয়েছেন। চিহ্নিত করেছেন সমস্যা। তৎপর হয়েছেন সমাধানেও। তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর সেবা নিশ্চিত, নগরীকে পুরোপুরি পানিবদ্ধতামুক্ত করা, নতুন ওয়ার্ডসমূহে কাঙ্খিত উন্নয়ন নিশ্চিত ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের কাজগুলোকেই প্রথমেই গুরুত্ব দিতে চান প্রথম নগর পিতা ইকরামুল হক টিটু। এসব চ্যালেঞ্জ নিয়েই আজ বুধবার নগরপিতার আসনে বসতে যাচ্ছেন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নব-নির্বাচিত এ মেয়র। নগরপিতাকে বরণ করতে প্রস্তুত নগরভবনও।
ময়মনসিংহ পৌরমেয়র থাকাকালেই সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যমে নগরীকে বদলে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন ইকরামুল হক টিটু। পৌরমেয়র নির্বাচিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের উপকন্ঠের এ শহরে বিস্তৃত পরিসরে উন্নয়ন কর্মকান্ড শুরু করেন। অঙ্গীকার করেন তিলোত্তমা ময়মনসিংহ ভিশনের। গ্রিণ অ্যান্ড ক্লিনের মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন সবুজ শহর গড়তে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শহরটি দেশের মডেল শহরে পরিণত হয়। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে আধুনিক ও শৈল্পিক স্থাপনায় স্থাপন করেন বিভিন্ন ম্যুরাল বা ভাস্কর্য। এর পাশাপাশি নগরীর জয়নুল উদ্যান ও বিপিন পার্কও সৌন্দর্য্য বর্ধনের দৃষ্টান্ত। এক সময় এ নগরীতে জলাবদ্ধতা ছিল প্রধান সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে বিগত সময়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হয়েছে। নগরীর
প্রধান সড়কের দুই পাশের ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ ১২৫ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র হিসেবে দাায়িত্ব গ্রহণের আগে মঙ্গলবার বিকেলে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন ইকরামুল হক টিটু। আধুনিক ময়মনসিংহ মহানগর গড়তে নাগরিক সেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে নগরীর দৃশ্যপট বদলে দেয়ার অঙ্গীকার করেন তিনি। ইকরামুল হক টিটু ইনকিলাবকে বলেন, আমি প্রথমেই তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর সেবা চালু করতে কাজ করতে চাই। যাতে করে নাগরিকরা ঘরে বসেই বিল পরিশোধ থেকে শুরু করে নাগরিক সনদ, ট্রেড লাইসেন্স, জন্ম সনদ, মৃত্যু সনদসহ অন্যান্য সুবিধা তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সহজেই পেতে পারে।
নগর ভবনের সব কর্মকান্ড ডিজিটালাইজেশন করার কথাও জানান মেয়র। তিনি বলেন, এতে নগরবাসীর জন্যও সবকিছু সহজ হবে।
মহানগরীর নতুন যুক্ত হওয়া ১২ টি ওয়ার্ডের সব সমস্যা সমাধান ও উন্নত নাগরিক জীবনের প্রত্যাশা পূরণ করতে সবিশেষ গুরুত্ব দিতে চান মেয়র টিটু। তিনি বলেন, ‘এসব ওয়ার্ডে পানিবদ্ধতা নিরসন করার পাশাপাশি যাবতীয় সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে চাই। এসব এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ, রাস্তাঘাট ও ড্রেন নির্মাণ, যাবতীয় অবকাঠামো ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং চিত্তবিনোদনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করবো।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে ই-ট্রাফিকিং সিস্টেমে নিয়ে আসার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে মেয়র বলেন, নগর ভবনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হবে। তিনি বলেন, নগরীর প্রতিটি ভবনে বিল্ডিং কোডের বিষয়ে কঠোর হবে সিটি করপোরেশন। প্রতিটি ভবনে নিশ্চিত করতে হবে ফায়ার সেফটি। এছাড়া দারিদ্র্য বিমোচন, মশক নিধন, পরিবেশ বান্ধব, স্বাস্থ্যসেবা সুনিশ্চিত করার কাজও সমান গতিতেই চলবে।
মেয়রের চেয়ারে বসার আগে আবারো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ময়মনসিংহের প্রথম এ নগর পিতা। টিটু বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিয়েছেন। তিনি যেভাবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন আমি তাঁর কর্মী হিসেবে সেইভাবেই সমৃদ্ধ ময়মনসিংহ গড়তে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাবো। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি নগরবাসী সেবা ও উন্নয়নে অতীতের সময়ের মতোই আমার পাশে থাকবেন।’সূত্র*ইনকিলাব