দিনের বেলায় হাঁসফাঁস করা অস্বস্তিকর গরম। আবার বিকালের দিকে কোথাও কোথাও ঝড়বৃষ্টি। ঠাণ্ডা গরমের এই মিশ্র আবহাওয়া ভাইরাসের পক্ষে অনুকূল পরিবেশ। ফলে ঘরে ঘরে বাড়ছে ভাইরাসজনিত জ্বর। আবার এসির মধ্যে দীর্ঘক্ষণ থাকার ফলেও শরীরে বাসা বাঁধছে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া। সর্দিকাশি, জ্বর, গলাব্যথা তো আছেই, সেই সঙ্গে ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে ভিড় বাড়ছে হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারেও। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, প্রধানত ফ্লু ভাইরাসের প্রকোপে জেরবার শিশু থেকে বয়স্ক। জ্বর এলে অপেক্ষা না করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরি। কারণ অবহেলায় ভাইরাসকে বাগে আনা মুশকিল।
সরেজমিন রাজধানী ঢাকার শিশু হাসপাতালে গেলে সংশ্লিষ্টরা জানান, দুই সপ্তাহ আগেও এই হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ শিশু ভর্তি হতো। এখন বেড়ে হয়েছে ৩০০ থেকে ৫০০। আর আউটডোরে যেখানে গড়ে প্রতিদিন ৬০০ রোগী চিকিৎসা নিত, সেখানে এখন প্রতিদিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এই হাসপাতালে ছয় মাস বয়সী ছেলের চিকিৎসার জন্য কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে এসেছেন লুৎফা বেগম। তিনি বলেন, হঠাৎ করেই ছেলে তাওহীদ হাসানের পাতলা পায়খানা। দিনে ২০ বারেরও বেশি পায়খানা। তিন দিন ভর্তি। এখন দিনে দু’তিনবার হচ্ছে। সাত মাস বয়সী ছেলে রবিউল আহসানকে নিয়ে এসেছেন আতাউর রহমান। নরসিংদী থেকে আসা এই বাবা জানান, তার ছেলে ব্রংকাইটিসে আক্রান্ত। ৫ দিনে কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
হঠাৎ শিশুরোগী বাড়ার বিষয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মাকছুদুর রহমান বলেন, গ্রীষ্মকালে রোগবালাই এমনিতেই বেশি হয়। সারা দেশের মতো এখানেও প্রায় দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভ্যাপসা গরম। এতেই কাহিল হয়ে পড়ছে শিশুরা। দু’-একদিনের মধ্যে তাপমাত্রা স্বাভাবিক না হলে হাসপাতালে রোগী আরও বাড়বে। তিনি জানান, গরমে শিশুদের ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি, ব্রংকাইটিস ও নিউমোনিয়া রোগ বেশি হচ্ছে। এর মধ্যে পানিবাহিত ডায়রিয়া, টাইফয়েডও রয়েছে।
একই হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ছাইফুল ইসলাম বলেন, পানিবাহিত রোগী বাড়ায় চিকিৎসক বাড়ানো হয়েছে। প্রত্যেকেই বাড়তি সময় দিচ্ছেন। পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এসব রোগের মূলে প্রচণ্ড গরম। গরমে শিশুদের ডিহাইড্রেশন তৈরি হয়। এজন্য প্রচুর পানি পান করাতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে পানি যেন বিশুদ্ধ হয়। বাসায় তৈরি শরবত ছাড়াও ডাবের পানি খাওয়াতে হবে। খাওয়ার আগে শিশুদের সাবান অথবা হ্যান্ডওয়াশে অভ্যস্ত করতে হবে।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক রেজওয়ানুল আহসান বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সিজনাল ফ্লু এবং ভাইরাল ফ্লু বেড়ে গেছে। প্রচণ্ড গরম আর ধুলাবালিতে শিশুদের ইনফ্লুয়েঞ্জা বেশি হচ্ছে। এ কারণে ঠান্ডা -কাশি, শ্বাসকষ্ট, চিকেন পক্স ও চর্মরোগ হচ্ছে।
শিশুদের বেলায় অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। আইসিডিডিআরবির ডা. শারমিন জামান ঊর্মি বলেন, বিগত কয়েক দিন তাপমাত্রা ব্যাপকহারে ওঠানামা করছে। প্রচণ্ড গরমে মানুষ হাতের কাছে সস্তায় শরবত পান করছেন। রোজায় ভাজা-পোড়া খাচ্ছেন। এতে ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, আমাদের এখানে গড়ে প্রতিদিন ৬০০ রোগী ভর্তি হচ্ছে। এদের অর্ধেকই শিশু। শিশুদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। এজন্য তারা ডিহাইড্রেশনের শিকার হচ্ছে বেশি।