কক্সবাজারের উখিয়ার আন্জুমানপাড়াসহ বিভিন্ন সীমান্তে নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঢল নেমেছে। মাঝখানে কিছুদিন রোহিঙ্গাদের স্রোত কমলেও গত দুই দিনে হঠাৎ করেই বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বেড়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বলছে, উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের আন্জুমানপাড়া সীমান্ত পয়েন্টের নো-ম্যানসল্যান্ডে এই মুহূর্তে অন্তত ২০ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। আর গত দুই দিনে আন্জুমানপাড়াসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর নতুন করে দমন-পীড়ন বেড়ে যাওয়ায় তারা পালাতে শুরু করেছে।
স্থানীয়রা জানান, নতুন করে রবিবার (১৫ অক্টোবর) থেকে রোহিঙ্গারা আসতে শুরু করে। সোমবার আঞ্জুমানপাড়া সীমান্তে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। এখন ওই সীমান্তের নো-ম্যানসল্যান্ডে গাদাগাদি করে হাজার হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।
উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চেীধুরী জানান, সোমবার (১৬ অক্টোবর) ভোর রাত থেকে হঠাৎ করে আন্জুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বেড়ে যায়। বিজিবি এসব রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে আপাতত নো-ম্যানসল্যান্ডে আশ্রয় দিয়েছে।
আইওএম সূত্র জানায়, গত দুই দিনে ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা নারী-শিশু-পুরুষ বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। এর আগে পাঁচ লাখ ৩৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে। নতুন করে আসা রোহিঙ্গাসহ মোট অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা পাঁচ লাখ ৮২ হাজার। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের এ ধারা অব্যাহত থাকলে দুয়েকদিনের মধ্যেই রোহিঙ্গার সংখ্যা ছয় লাখ ছাড়িয়ে যাবে।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, রাখাইনে নতুন করে তাণ্ডব চালাচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও মগরা। যে মুসলিম রোহিঙ্গারা এখনও রাখাইনে রয়ে গেছে, তাদের বর্মি ভাষায় বাঙালি লেখা কার্ড নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। কেউ কার্ড নিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে মেরে ফেলা হচ্ছে। সেনাবাহিনী ও মগদের হামলায় গত রবিবার থেকে রাখাইনের বুচদিংয়ের ১৪টি গ্রামে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাই তারা দলে দলে এদেশে আসতে বাধ্য হচ্ছে।
৯ সদস্যের পরিবার নিয়ে রাখাইনের বুচিদং মুরাপাড়া গ্রাম থেকে পালিয়ে এসে আন্জুমানপাড়া বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন আলী হোসেন। তিনি জানান, মিয়ানমারের সেনারা এবার বাড়িঘরের মালামাল লুটপাট করছে। বিতরণ করছে সাদা কার্ড। কার্ড নিতে অপারগতা প্রকাশ করলে রাখাইন ত্যাগের নির্দেশ দিচ্ছে। ভয়, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার কারণে বুচিদংয়ের বাপিডিপো, নাইছাদং, চিংদং, লাউয়াদং, নয়াপাড়া, চান্দেরবিল, লম্বাবিল, জংমং ও প্রংফোপাড়াসহ ১৪টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ নাফ নদীর এপারে চলে এসেছে।
মিয়ানমারের রাখাইনের চান্দেরবিল এলাকার ফরিদুল আলম (৫৫) জানান, তার মতো আরও অসংখ্য রোহিঙ্গা বুধবার (১১ অক্টোবর) রাতে মিয়ানমারের ফাতিয়ারপাড়ার ঢালা এলাকায় জড়ো হয়। ফেলে আসা স্বজনদের জন্য সেখানে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করে। শনিবার (১৪ অক্টোবর) ভোররাতে মিয়ানমার সেনা ও সশস্ত্র রাখাইন যুবকরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ শুরু করে। এতে তারা দিগ্বিদিক পালাতে থাকে। এসময় ৫০ জনের মতো বৃদ্ধ নারী-পুরুষ আহত হন বলেও জানান ফরিদ।
জাতিসংঘের কক্সবাজার অফিসের কর্মকর্তা যোসেফ জানান, রবিবার থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে শুরু করে, যা সোমবার ও মঙ্গলবার আরও বেড়েছে। এখন আন্জুমানপাড়া সীমান্তের নো-ম্যানসল্যান্ডে ২০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু অবস্থান করছে। এদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে, শিশুদের অবস্থা করুণ। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা নারীদের মধ্যে অনেক গর্ভবতী নারী রয়েছেন, তাদের অনেকের পা ফুলে গেছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের মাঝে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।- বাংলা ট্রিবিউন।