ত্রিশাল প্রতিদিন ডেস্ক:: ময়মনসিংহ বিভাগের ১৯৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের ১০৩টির উদ্বোধন ও ৯৩টি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার (০২ নভেম্বর) বিকাল ৪টার দিকে তিনি মহানগরীর সার্কিট হাউস মাঠ থেকে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন করেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন।
এর আগে বিকাল পৌনে চারটার দিকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি ময়মনসিংহ স্টেডিয়াম মাঠে অবতরণ করে। পরে তিনি জনসভা স্থলে আসেন। সেখানে সভা মঞ্চের পাশে স্থাপিত অন্য এক মঞ্চ থেকে তিনি প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর পর প্রধানমন্ত্রী সভা মঞ্চে উপস্থিত হন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে নগরীতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। প্রায় সাড়ে ৫ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়মনসিংহে এসেছেন। মহানগরীর ঘোষণার পর তার প্রথম সফরে সড়ক-মহাসড়কে তোরণ, রঙিন ব্যানার ও বিলবোর্ড আর ফেস্টুনের ছড়াছড়ি দেখা গেছে। অলিগলিতেও শোভা পাচ্ছে শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত নানা পোস্টার। পুরো নগরীতে এখন সাজ সাজ রব। জনসভাস্থলে সকাল থেকে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকরা জনসভাস্থলের আশপাশে জড়ো হতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সভাস্থলে ভিড়ও বাড়তে শুরু করে।
জেলা পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ বিভাগের উন্নযন প্রকল্পগুলো: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়মনসিংহ জেলার ৩১টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৩৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এর বাইরে ময়মনসিংহ বিভাগীয় সদর দফতরের জন্য আর ১০টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। উদ্বোধন হওয়া প্রকল্পগুলো হচ্ছে- ত্রিশালের বালিপাড়ায় ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর শহীদ রফিক উদ্দিন ব্রিজ, গফরগাঁও উপজেলার সালটিয়া-হাজিগঞ্জ-দেওয়ানগঞ্জ বাজার সড়কে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর ৮১০ মিটার ব্রিজ নির্মাণ, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের ১০ তলা ভিতের ওপর ৩ তলা বিশিষ্ট ছাত্র হোস্টেল নির্মাণ, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা-এনএসআইয়ের কার্যালয়, বিএসটিআই কার্যালয় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদফতর অফিস নির্মাণ, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য দুই তলা বিশিষ্ট হোস্টেল নির্মাণ, ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে মহিলা কারারক্ষীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, আলমগীর মনুসর মিন্টু কলেজ, নাসিরাবাদ কলেজ, ভালুকা ডিগ্রি কলেজ, গৌরীপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ, জিকেবি কলেজ, নান্দাইল উপজেলার মশুলি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, নান্দাইলে সমুর্ত জাহান মহিলা কলেজ, নান্দাইলে খুররম খান চৌধুরী কলেজ, নান্দাইল শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজ, ঈশ্বরগঞ্জের উচাখিলা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এবং আঠারবাড়ি ডিগ্রি কলেজের চারতলা বিশিষ্ট নব নির্মিত একাডেমিক ভবন, ময়মনসিংহ জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ভবনণ, সরকারি আনন্দ মোহন কলেজের ১৩২ সিটের পাঁচ তলা ছাত্রী হোস্টেল, ঈশ্বরগঞ্জে ৫০০ আসন বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম কাম কমিউনিটি সেন্টার, শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ময়মনসিংহের সদর ও ত্রিশাল উপজেলা, ভালুকা, ত্রিশাল, ফুলবাড়িয়া, মুক্তাগাছা ও গৌরীপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, ধোবাউড়া ও নান্দাইল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনযোগ্য প্রকল্পসমূহ হচ্ছে- নবসৃষ্ট ময়মনসিংহ বিভাগের নতুন বিভাগীয় শহর, বিভাগীয় কমিশনার ও রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়, বিভাগীয় স্টেডিয়াম, বিভাগীয় সার্কিট হাউস, বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু নভো থিয়েটার, আরআরএফ ময়মনসিংহ রেঞ্জ, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদ খনন, ব্রহ্মপুত্র নদের কেওয়াটখালিতে ব্রিজ, ময়মনসিংহে হাইটেক পার্ক, মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, সমাজ সেবা কমপ্লেক্স, বিআরটিসির ডিপো কাম ট্রেনিং সেন্টার, ময়মনসিংহ সদরের চরসিরতায় ডা. মুশফিকুর রহমান শুভ মেমোরিয়াল ইসলামিক মিশন হাসপাতাল, ময়মনসিংহ নেত্রকোনা সড়ক উন্নয়ন, সীমান্ত সড়ক (ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা অংশ), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও গৌরীপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারের সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন, গফরগাঁও-বরমী-মাওনা সড়ক উন্নয়ন, ত্রিশাল-বালিপাড়া-নান্দাইল সড়ক উন্নয়ন, জামালপুর-চেচুয়া-মুক্তাগাছা সড়ক উন্নয়ন, ময়মনসিংহ-গফরগাঁও-টোক সড়কের বানার নদীতে ব্রিজ, ঈশ্বরগঞ্জে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন, তারাকান্দা উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল, সরকারি আনন্দ মোহন কলেজে ১০ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন, ময়মনসিংহে ৩৬০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র, ময়মনসিংহের সুতিয়াখালিতে ৫০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র, নান্দাইলে আনোয়ারুল হোসেন খান চৌধুরী মহিলা কলেজের চার তলা একাডেমিক ভবন, ধোবাউড়ায় টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাঁচ তলা একাডেমিক ভবন, চার তলা প্রশাসনিক ও এক তলা বিশিষ্ট ওয়ার্কসপ, নান্দাইলে নরসুন্দা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্প, তারাকান্দা উপজেলার কাকনি-শ্যামগঞ্জ সড়ক, ফুলবাড়িয়া উপজেলার কৈয়ারচালা-সাগরদীঘি সড়ক, ত্রিশাল উপজেলার হদ্দের ভিটা-কালবি বাজার সড়ক, ভালুকা উপজেলার ভালুকা-গফরগাঁও-ধলিয়া সড়ক উন্নয়ন এবং ভালুকা-গফরগাঁও-হোসেনপুর সড়কসহ জেলা মহাসড়কের যথাযথ মান উন্নয়ন ও প্রশস্থকরণ প্রকল্প, নান্দাইল, হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্প।
নেত্রকোনা, জামালপুর ও শেরপুরের উল্লেখযোগ্য প্রকল্পসমূহের মধ্যে রয়েছে- নেত্রকোনায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, নেত্রকোনা আধুনিক স্টেডিয়াম, নেত্রকোনা যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কেন্দুয়া ৫০০ আসন বিশিষ্ট অডিটরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস হল।
এ ছাড়া মোহনগঞ্জে ৫০০ আসনের অডিটোয়িরাম নির্মাণ,অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শৈলজারঞ্জন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী। জামালপুরের ইসলামপুরে শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, জামালপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, জামালপুরে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র উদ্বোধন করবেন। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুরের মাদারগঞ্জে শেখ হাসিনা স্পেশালাইজড জুট টেক্সটাইল মিল, জামালপুরের মেলান্দহে শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও জামালপুরের মাদারগঞ্জে শেখ রাসেল টেক্সটাইল ইনষ্টিটিউট, জামালপুরের মাদারগঞ্জে ১০০ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট, ইউনাইটেড জামালপুর পাওয়ার লিমিটেড এর ১১৫ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রকল্প, হাইটেক পার্ক, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল,জামালপুর নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, জামালপুর পল্লী উন্নয়ন একাডেমি ও জামালপুর-জয়দেবপুর রেললাইন সম্প্রসারণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের।
শেরপুর সদর হাসপাতালকে ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্প, শেরপুর পিটিআই কমপ্লেক্স ভবন, কারিগরি ট্রেনিং সেন্টার-টিটিসি, চন্দ্রকোনায় পুলিশ ফাঁড়ি নির্মাণ, নালিতাবাড়িতে কৃষকসেবা কেন্দ্র, নকলায় ভোগাই নদীর ওপর রাবার ড্যাম নির্মাণ, নকলা-নালিতাবাড়ি-নাকুগাঁও স্থলবন্দর সড়ক এবং নকলা-নালিতাবাড়ি চারলেন সড়কের উদ্ধোধন ও শেরপুর-জামালপুর বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। – বাংলা ট্রিবিউন।