মার ডাকে সকালের ঘুম ভাঙ্গতো। তখন বয়স ৫-৭ বছর। মনটা খুবই খারাপ লাগতো কি সুন্দর ঘুমটাই না ছিল চোখ কচলিয়ে কচলিয়ে তাকাতেই দেখি মক্তব পড়ুয়া সাথীরা অপেক্ষা করছে আমার জন্য। লাফ দিয়ে বিছানা থেকে ওঠে হাত মুখ ধুয়ে মক্তবের উদ্দেশ্যে রওনা দিতাম। মক্তবে গিয়ে যখন দেখতাম শাপলা,কাওসার এখনও আসেনি কয়েকজন মিলে তাদের বাড়িতে গিয়ে সাথে করে মক্তবে নিয়ে আসতাম।
মক্তবের প্রিয় বেলালী হুজুর গোলাপ খুব পছন্দ করত মাঝেমাঝেই হুজুরের জন্য হাতে করে একটি গোলাপ নিয়ে যেতাম। অ,আ থেকে শুরু করে আলিফ,বা ,বসার আদব,বড়দের সাথে কথা বলার আদব মা বাবার সাথে কেমন আচরন করতে হবে উস্তাতদের সাথে কেমন আচরন করতে হবে আরো কত কিই না শিখতাম মক্তব নামের এই শিক্ষালয়টিতে। শৈশবের খেলাধুলা দুষ্টুমির মাঝেও মক্তবটা ছিল একটা মজার জায়গা যেখানে বন্ধরা মিলিত হতাম।
ভোরের কনকনে শীত উপেক্ষা করে মক্তবে যাওয়ার আনন্দের মাঝে আরও একটি মাত্রা যোগ হত যখন কেউ কায়দা থেকে সিপাড়া বা কুরআন শরিফ নিত আর সাথে মিস্টি বাতাসা খাওয়ানো হত। পড়া না পারলে একজন আরেকজনের কানে ধরার দৃশ্যটা বড়ই মনে পড়ে যায়। মক্তব আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ পাঠশালা বা বিদ্যালয়। শিশুদের কোরআন শিক্ষার এবং ইসলাম সম্পর্কে প্রাথমিক মৌল জ্ঞানার্জনের উত্তম শিক্ষা কেন্দ্র হলো এ কোরআনি মক্তব।
এখান থেকে শিশুরা কোরআনের তেলাওয়াত শেখার পাশাপাশি নামাজ-রোজার নিয়ম কানুন, জরুরি মাসআলা-মাসায়িল, দোয়া-কালাম ইত্যাদি শিখতে পারে।
আজ মনে পড়ে যায় মক্তব থেকে শিক্ষা নেওয়া সেই আদাবগুলো যা জীবনের সর্বত্রই প্রয়োজনীয়। কিন্তু তখনই মনে বড় কষ্ট লাগে যখন আজ বিভিন্ন মক্তবগুলোতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা একদমই কম দেখতে হয়। আজ দু:খের সাথে বলতে হয় অনেক গ্রামগুলোতে মক্তব নামের এই মহান শিক্ষালয়টি নেই বললেই চলে। অল্প কিছু মক্তব থাকলেও কেজি স্কুল,ব্রাক স্কুলগুলোর সময়নীতির জালে আজ মক্তবগুলোতে শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না।
আপনি লক্ষ করলে দেখবেন ব্রাক বা কেজি স্কুলগুলো শুরু হয় ভোর থেকেই যেখানে পুরুনো মক্তবগুলো চলে আসছিলো ভোর থেকেই আবার কোন কোন মক্তব ছাত্র বাড়ানোর তাগিদে যদি বিকালে হয়ে থাকে তখন অভিভাবকরা বাচ্চাকাচ্ছাদের একটু খেলাধুলার কথা ভেবে সেই বিকালের মক্তবটাতেও তাদের সন্তানদের পাঠাতে চায় না। আসলে এইভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে আমার আপনার হাতেখড়ি এই শিক্ষালয়টি একদম হারিয়েই যাবে।
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই মক্তবকে বাচাতে সরকারসহ স্থানীয়দের অবদান রাখতে হবে। বিশেষত স্থানীয়রা কেজি বা ব্রাক স্কুলগুলোর সময় ও মক্তবের সময়ের সাথে সামঞ্জস্যতা করে দেওয়া উচিত। মক্তবগুলোতে সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নজর দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। আর এইভাবেই হয়তবা আমরা ফিরে পেতে পারি চিরচেনা কুরআন শিক্ষার সেই মক্তবগুলো। পরিশেষে প্রতিটি শিশুর প্রথম শিক্ষা হোক কুরআন ,প্রতিটি শিশুর প্রথম শিক্ষালয় হোক মক্তব নামের প্রিয় প্রতিষ্ঠানটি।
আজাহারুল ইসলাম আজাহার
সম্পাদক ও প্রকাশক
দৈনিক পল্লী সংবাদ।