ষ্টাফ রিপোর্টারঃ ময়মনসিংহ সদর উপজেলায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন প্রকল্পের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ইজিপিপি প্রকল্পের প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা কাজ না হওয়ায় সম্পুন্ন টাকা অব্যয়িত অবস্থায় ফেরত দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে ।
সুত্র মতে-নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণ প্রকল্প তালিকা জমা দিয়ে কাজ শেষ করতে না পারায় অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের বরাদ্ধ থেকে ২ কোটি ৬১ লাখ ৬ হাজার টাকা উপজেলা থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে অতিদরিদ্র মানুষগুলো প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এই উপজেলায় মোট কাজ হয়েছে মাত্র ৭৯,৯২,০০০ টাকা এবং সর্দার মুজুরী ২৩,৮০০ টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলায় গত ২৮শে এপ্রিল ২০২১-২২ অর্থবছরের অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের দুই কোটি ৮৬ লাখ ৮ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে।
উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ৪২ টি প্রকল্পে সর্বমোট ১৭৮৮ এক হাজার ৭৮৮ জন হতদরিদ্র ব্যক্তি জনপ্রতি দৈনিক ৪০০ টাকা মজুরিতে গত ১৪ মে থেকে ৮ জুন পর্যন্ত কাজ করেন। সরকারি ছুটি বাদে তারা যে কয়দিন কাজ করবে সে কয় দিনের বিল পাবেন। তবে এ মেয়াদে ৮ জুন শেষ হওয়ায় বাকি দিনগুলো কাজ করতে পারছেন না তারা। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী শ্রমিকরা জানান, করোনা পরবর্তী এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সংসার চালাতে নাভিশ্বাস উঠেছে তাদের। কিন্তু টাকা ফেরত যাওয়ার খবরে হতাশা প্রকাশ করেছেন তারা।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) মনিরুল হক ফারুক রেজা জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর থেকে ইজিপিপি প্রকল্পের ৪০ দিনের কাজের জন্য দুই কোটি ৮৬ লাখ আট হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। তবে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে বিলম্বে প্রকল্প তালিকা আসায় নির্ধারিত সময় কাজ না হওয়ায় ২ কোটি ৬১ লাখ ৬ হাজার টাকা উপজেলা থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
প্রাপ্ত সুত্রে জানা গেছে- উপজেলার অষ্টধার ইউনিয়নে ৪ প্রকল্পে ১২৩ জন শ্রমিক কাজ করে ১০ দিন,কুষ্টিয়া ইউনিয়নে ৩ প্রকল্পে ১২৪ জন শ্রমিক কাজ করে ১০ দিন, বোররচর ইউনিয়নে ৪ প্রকল্পে ১৫৯ জন শ্রমিক কাজ করে ১০ দিন, পরানগঞ্জ ইউনিয়নে ৩ প্রকল্পে ১৫৫জন শ্রমিক কাজ করে ১০ দিন, ইউনিয়নে ৪ প্রকল্পে ১২৩ জন শ্রমিক ১০ দিন,সিরতায় ৩প্রকল্পে ১৬০জন শ্রমিক কাজ করে ৭ দিন,চর ঈশ্বরদিয়া ইউনিয়নে ৫প্রকল্পে ১০দিন কাজ করে ১৭৭জন, চর নিলক্ষিয়া ইউনিয়নে ৫প্রকল্পে ১৫দিন কাজ করে ১৭৪জন, খাগডহর ইউনিয়নে ৩প্রকল্পে ১০দিন কাজ করে ১৭৬জন, দাপুনিয়া ইউনিয়নে ৪প্রকল্পে ১০দিন কাজ করে ১৭২জন, ঘাগড়া ইউনিয়নে ৩প্রকল্পে ১৫দিন কাজ করে ১৯৩জন, ভাবখালী ইউনিয়নে ৫প্রকল্পে ১৫দিন কাজ করে ১৮৫জন শ্রমিক।
এ ব্যাপারে ঘাগড়া ইউনিয়নের কয়েকজন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, তাদের এলাকায় খেটে খাওয়া মানুষের সংখ্যা বেশি। বিভিন্ন এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে ইউনিয়নের অনেক দরিদ্র মানুষ। এ অবস্থায় ৪০ দিন কাজ করতে পারলে হতদরিদ্রদের অনেক উপকার হতো। তবে এলাকায় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সাথে ভাগাভাগি নিয়ে তালিকা প্রস্তুতি দেরি হওয়ায় কাজ কম হয়েছে। তবে যে কয়দিন কাজ হয়েছে কর্মসূচির কাজ চলাকালীন সময়ে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফ হোসাইন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার শফিকুল ইসলাম,প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মনিরুল হক ফারুক রেজা নিয়মিত পরিদর্শন করে কাজের দেখভাল করে তাদের তদারকিতে সচ্ছতার সহিত যে কয়দিন কাজ হয়েছে শ্রমিকদের সেই কয়দিনের বিল পরিশোধ করা হয়েছে। সিরতা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের এক নেতার দাবী তাদের ইউনিয়নেও উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নিয়মিত ইজি পিপি কাজের শ্রমিক তালিকা ও হাজিরা যাচাই বাছাই করায় অতিদরিদ্ররা স্বচ্ছতার সহিত বিল পেয়েছেন এতে শ্রমিকরা খুশী।
যেহেতু মোবাইল সিমে নগদ একাউন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিলের টাকা পরিশোধ করা হয়,তাই অনেক শ্রমিক রয়েছে যাদের জাতীয় পরিচয় পত্র (এনআইডি) সহ তথ্যগত বিভিন্ন ভূলত্রুটি থাকার কারণে কিছু কিছু শ্রমিকদের মোবাইলের একাউন্টে টাকা পাঠায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।
খাগডহর ইউনিয়ন সুত্রে জানা গেছে- ‘বর্তমান সময়ে এলাকার মানুষের হাতে কাজ নেই। সময় মতো প্রকল্প তালিকা পাঠানো গেলে এই মুহূর্তে আমাদের দরিদ্র মানুষগুলোর টাকা ফেরত দিতে হতো না। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে তালিকা নিয়ে মতবিরোধ থাকায় প্রকল্পের অর্থ গুলো ফেরত গেলো। বঞ্চিত হলো স্থানীয় গরীব হত দরিদ্র জনগোষ্ঠীরা।
বরাদ্দের টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো.মনিরুল হক ফারুক রেজা বলেন, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে আমাদের এখানে বরাদ্দ আসার পর আমরা প্রতি ইউনিয়ন থেকেই প্রকল্প তালিকা পাঠানোর আহবান জানিয়েছি। নির্ধারিত সময়ের মাঝে ১১টি ইউনিয়নের কোনটি থেকে তালিকা আসেনি। তালিকা প্রেরণে সময় নষ্ট হয়েছে।এ ছাড়া ৮ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করে বিল না পাঠালে শ্রমিকেরা টাকা পাবেন না। তাই প্রকল্পের নির্ধারিত কাজ করানো যায়নি বলে ২ কোটি ৬১ লাখ ৬ হাজার টাকা উপজেলা থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য যে-প্রথম পর্যায়েও প্রাপ্ত বরাদ্ধ থেকে প্রায় ১,৬০,০০০০০ (এক কোটি ৬০লাখ) টাকা ফেরত পাঠানো হয়েছিলো বলে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ সুত্রে জানা যায়।