ময়মনসিংহে চালক হত্যাসহ অটোরিক্সা ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেফতার ৫

আরিফ রববানী,ময়মনসিংহঃ ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের পাগলা উপজেলায় চালককে হত্যার পর অটোরিক্সাসহ মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনায় ০৫ জনকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। শুক্রবার তাদেরকে পৃথক এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের বাড়ি গফরগাঁও ও কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়।গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে  ছিনতাইকৃত অটোরিক্সা ও মোবাইল উদ্ধার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মকবুল হোসেন, জাবেদ, কাজল মিয়া,মোঃ শরীফ সোহেল মিয়া। পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঞা শনিবার (৫নভেম্বর)সকালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার

 গত ৩১ অক্টোবর পাগলা থানার খুরশিদ মহল ব্রীজের পাশে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি (৪৫) লাশ পাওয়া যায়। নিহতের পরিচয় সনাক্ত, হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকারীদের গ্রেফতারে ডিবি পলিশকে নির্দেশ দেই। ডিবির একটি চৌকস টিম হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে পাগলা থানা পুলিশের সাথে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানকালে নিহতের পরিচয় সনাক্ত হয়। তার নাম মোঃ নাছির উদ্দিন (৪৫)। সে তেতুলিয়া গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে। তিনি দুই সন্তানের পিতা এবং অটোরিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করিতেন। তিনি প্রতিদিনের ন্যায় গত ২৯ অক্টোবর বিকালে যাত্রী বহনের জন্য অটোরিক্সা নিয়ে বের হন। রাত গড়িয়ে সকাল হলেও নাছির উদ্দিন বাড়ী ফিরে না আসায় পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। খোঁজাখুজির একপর্যায়ে ৩১ অক্টোবর দুপুরে পাগলা থানার খুরশিদ মহল ব্রীজের পাশে ঝোপঝাড়ে লাশ পাওয়ার সংবাদ পেয়ে পরিবারের লোকজন এসে নাছির উদ্দিনের লাশ সনাক্ত করে।

এ ব্যাপারে তার ছোট ভাই নুরুল আমিন বাদী হয়ে পাগলা থানার মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-০১,তারিখ-০১/১১/২০২২, ধারা-৩৯২/৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড) । হত্যাকারীরা নাছিম উদ্দিনকে হত্যা করে তার অটোরিক্সা ও ব্যবহৃত মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। ডিবি পুলিশ টানা অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকান্ড ও অটোরিক্সা ছিনতাইয়ে জড়িত মোঃ মকবুল হোসেন, জাবেদ, মোঃ কাজল মিয়া, মোঃ শরীফ ও মোঃ সোহেল মিয়া। গ্রেফতারকৃত সোহেলের কাছ থেকে ছিনতাইকৃত অটো ও মকবুল হোসেনের কাছ থেকে নিহত নাছির উদ্দিনের মোবাইল উদ্ধার করে পুলিশ।

গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার মাছুম আহমেদ আরো বলেন,

মকবুল হোসেনের একজন পেশাদার ও অভ্যাসগত অপরাধী। সে দীর্ঘদিন ধরে চুরি, ডাকাতি, হত্যাসহ নানা অপরাধ করে আসছে। একেক সময় লোকজনকে ডেকে এনে ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জের সীমান্তবর্তী এলাকায় অটোসহ বিভিন্ন চালককে মারপিট, কখনো নেশাজাতীয় বিষ প্রয়োগে অচেতন করে আবার কখনো নির্দিষ্টস্থানে রেখে দেওয়া অটোরিক্সা ছিনতাই করে আসছে। চক্রটি জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে একটি অটোরিক্সা চুরি চক্র গড়ার জন্য সংঘবদ্ধ হতে চেষ্ঠা করছে। গ্রেফতারকৃত মকবুলের বিরুদ্ধে একাধিক চুরি, ডাকাতি, অস্ত্র ও হত্যা মামলা রয়েছে।

 তিনি আরো বলেন, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার পুলেরঘাট বাজারে মকবুল হোসেন একটি সেলুনে কাজ করার আড়ালে অপরাধ চক্রের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ও পরিকল্পনায় জড়িত থাকে। গত অক্টোবর মকবুল হোসেন গ্রেফতারকৃত অন্যান্যদেরকে পুলেরঘাট বাজারে ডেকে এনে চালক হত্যা ও অটোরিক্সা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। গত ২৯ অক্টোবর চক্রটি পুলেরঘাট বাজারে একত্রিত হয়ে প্রথমে হোসেনপুর এবং পরবর্তীতে ময়মনসিংহের গফরগাঁও জামতলা চৌরাস্তায় আসে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে চক্রটি যাত্রীবেশে হোসেনপুর যাওয়ার কথা বলে রাত ৮ টার দিকে নাছির উদ্দিনের অটোরিক্সায় উঠে। রাত পৌনে ০৯ টার দিকে হোসেনপুর ব্রীজের পাশে নির্জন স্থানে পৌঁছে নাছির উদ্দিনের গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে তার  লাশ রাস্তার পাশে জঙ্গলে ফেলে অটোরিক্সা ও নাছির উদ্দিনের ব্যবহৃত মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়। গ্রেফতারকৃতদেরকে শনিবার আদালতে পাঠানো হলে, তারা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত মর্মে স্বেচ্ছায় স্বিকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলেও পুলিশ জানিয়েছেন। ব্রিফিংকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হানুল ইসলাম, ফাল্গুনী নন্দি, শাহীনুল ইসলাম ফকির, ডিবির ওসি সফিকুল ইসলামসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।