ময়মনসিংহ নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত রমেশ সেন রোডের যৌন পতিতা পল্লী। সেখানে প্রায় তিন থেকে চারশত যৌনকর্মীর বসবাস রয়েছে। নগরীর গাঙ্গিনারপাড় এলাকা দিয়ে ঢুকতেই রমেশ সেন রোড, দেয়াল পেরিয়ে গেলেই বহু পুরানো ঠাকুর বাড়ী চোখে পড়বে।
জানা যায়, এই বাড়িটি বৃটিশ আমলে নির্মিত হয়ে ছিল। ততকালীন সময়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ভূমি মন্ত্রনালয়ের অর্পিত সম্পত্তি বলে জানা গেছে। জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লীজ নিয়েছিল সেখানকার জাহিদ নামে এক ব্যক্তি। কিন্তু তার মৃত্যু পর তারই বেতনভূক্ত কর্মচারী (ম্যানেজার) আলহাজ্ব নুরু মিয়া মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিজের নামে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লীজ নেয়। নুরু মিয়া একটি হত্যা মামলার যাবতজীবন সাজা প্রাপ্ত আসামি। তবে রায় হওয়ার পর উচ্চ আদালতে আপিল করে এখন তিনি জামিনে রয়েছে বলে জানা গেছে।
এটি দীর্ঘ কয়েক যুগ আগের ঘটনা। তবে এই লীজকৃত বাড়ীটিতে চলে যৌন ব্যবসা, সেই সঙ্গে দেদারছে চলছে মাদক ব্যবসাও। ঠাকুরবাড়ীতে ২৪ টি ঘর রয়েছে। এই ২৪ টি ঘর থেকে প্রতিদিন ৭শত টাকা করে ভাড়া দিতে হয় যৌনকর্মীদের। এখানে ১২ টি দোকান রয়েছে যা পৌরসভার (বর্তমান সিটি কর্পোরেশন) এর ড্রেনের উপর। প্রতিদিন এক একটি দোকান বাবত ৩শত টাকা ভাড়া। বাসা ও দোকান নিয়ে গড় ভাড়া উঠে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার টাকারও বেশি। নুরু মিয়াকে কে না চেনে এই শহরে ? যার এক সময় নূন আনতে পান্তা পুড়াতো। সেই ব্যক্তি এই ঠাকুর বাড়ী লীজ নিয়ে আজ কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।
যৌন পল্লীর অনেকেই বলেন, এই লীজকৃত বাড়ীটির ভাড়া উত্তোলন করে প্রশাসনের বড় কর্তাদেরও নাকি টু-পাইস দিতে হয়। নুরু মিয়া এক সময় বালুর চর ও ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে তিনতাশ ও চরচড়ী নিয়ে জুয়ার আসর বসাতো। জুয়ার আসর থেকে যে কয়টি অর্থ উপার্জন হতো তা থেকেই তার সংসার চলতো।
এই ঠাকুর বাড়ীর বিষয়ে একজন প্রবীণ আইনজীবির সাথে কথা বললে, তিনি বলেন, লীজের নিয়ম-কানুন ভঙ্গ করে এবং জেলা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ছোট ছোট চিলে কোঠা তৈরি করে ভাড়া দেয়া সম্পূর্ণ বে-আইনি। ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের অনুমতি বিহীন দু-তলা বাড়ী করা ঠিক না। এমনিতেই ঠাকুর বাড়ী প্রায় শত বছরের পুরনো। এটি যে কোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে। এতে অনেকের প্রাণহানী হতে পারে। এবিষয়ে জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
অন্যদিকে এই বাড়িটি নিজ নামে নেওয়ার জন্য জাল কাগজ মূলে আদালতে মামলা টুকে দিয়েছে। এখনই সময় জেলা প্রশাসনের প্রয়েজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের । এছাড়াও এই পল্লীতে বেশ কয়েকটি বাড়ি লিজ নিয়ে একাধিক জাল কাগজ সৃজন করে আদালতে মালিনা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মামলা চলছে। এসব কাজে ভূমি অফিসের কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা সহযোগিতা করছে অভিযোগ উঠেছে।