মানবতার রিপোর্টঃ ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার গ্রামীণ জনপদের অধিকাংশ এলাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে এক শ্রেনীর মাতাব্বর সালিশ বৈঠকের নামে গরিব নিম্নবিত্ত পরিবারের যুগপৎভাবে একদিকে নিঃস্ব করছে অন্যদিকে গ্রাম ছাড়ার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
এই সুযোগে মাতাব্বর গোত্রের লোকেরা স্থানীয় চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সাথে আঁতাত করে ঘৃণ্য কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে তাদের বসতভিটা সহ জমি জিরাৎ আত্মসাতের পায়তারা চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে চক্রটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্থানীয় চেয়ারম্যানের নাম এবং সরকারি দলের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গদের ব্যবহার করছে।এমনকি উপজেলা প্রশাসনকে আড়ালে রেখে এই ঘৃণ্য চক্রটি সালিশী বৈঠকের মাধ্যমে কন্যাদায়গ্রস্ত অভিভাবকদের হুমকি ধামকি দিয়ে বাল্য বিবাহের মতো আইন বিরুদ্ধ কাজটি করে যাচ্ছে আবার দিন কয়েক কথিত স্বামীর ঘরে থাকার পর এই চক্রটিই কৌশলে তালাকের ব্যবস্থা করার দুঃসাহস পর্যন্ত দেখাচ্ছে। মাঝখান থেকে দরিদ্র মেয়ের জীবনে নেমে আসে গভীর অমানিশা। এক্ষেত্রে কাবিনের টাকা, খড়পোষের টাকা কিছুই পায় না মেয়ে এবং তার পরিবার।এমনি এক ঘটনা ঘটেছে মুক্তাগাছা উপজেলার দাওগাঁও ইউনিয়নের বাওকপালীয়া গ্রামের নাবালিকা কন্যা সোনিয়া আক্তারের জীবনে। সোনিয়া পাটুলী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেনীতে লেখাপড়া করতো। তার বাবার নাম মোতালেব হোসেন।
গত ২০২১ সনে বাওকপালীয়া গ্রামের পার্শ্ববর্তী চন্দনীআটা গ্রামের দুলাল উদ্দিনের ছেলে নাজমুলের সাথে কৌশলে বিয়ে দিয়ে দেয় মাতব্বর চক্রটি।অনুসন্ধানে জানাযায়, স্থানীয় যুবলীগ নেতা পরিচয়ে শফিকুল দুই হাজার টাকা উৎকোচের মাধ্যমে সোনিয়ার বয়স বাড়িয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্মনিবন্ধন করিয়ে দেয়। জন্মনিবন্ধন করিয়ে দেওয়ার পর বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন হয় সোনিয়া ও নাজমুলের। এর পরপরই চক্রটি সুযোগ খুঁজতে থাকে কি করে আবার সোনিয়া এবং নাজমুলের মধ্যে ছাড়াছাড়ি করানো যায়। এনিয়ে মাতাব্বর শ্রেনী এবং রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গের কয়েক দফা বৈঠক হয়।বৈঠকে কুচক্রী মহলটি স্বামী স্ত্রী দুই পরিবারের মাঝেই কুৎসা রটাতে থাকে। সেই সাথে চলতে থাকে টাকার খেলা। মাতাব্বর শ্রেনী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ গত আগষ্ট মাসেই দুই পরিবারের উপস্থিতিতে সোনিয়া নাজমুলের তালাক সম্পন্ন করে।জানাগেছে,সেই সাথে চক্রটি হাতিয়ে নেয় সোনিয়ার কাবিনের টাকাসহ খড়পোষের টাকা। সোনিয়া শুধু শুধু কলঙ্ক নিয়ে পিতার বাড়িতে ফিরে আসে।
জানাগেছে সোনিয়া এবং তার পিতার কলঙ্কের অপবাদ ছাড়া এখন কিছুই করার নেই।কারণ তাদের নেই অর্থ। নেই প্রতিপত্তি। নেই গ্রামের কোন সহযোগী মানুষও যারা তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে। সোনিয়ার সাথে যে অমানবিক ও অন্যায় করা হয়েছে তার বিচার কোথায় পাবে? কে করবে? কার কাছে যাবে সোনিয়া? যাওয়ার জায়গা নেই আর কথিত মাতাব্বর ও রাজনৈতিকদের ভয়ে কারো কাছে বিচার চাওয়া তো দুরের কথা এই বিষয়ে মুখ খুলতেও ভয় পাচ্ছে তার পরিবার। তবে কি সোনিয়া সবসময় অন্যায় অবিচার এবং কলঙ্কের ভাগীদার হবে।
স্থানীয়রা অভিমত প্রকাশ করে বলেন, শুধু একজন সোনিয়া নয় এমন অনেক সোনিয়ারাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও কলঙ্কিত জীবন নিয়ে বেঁচে আছে। আর মুক্তাগাছা উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করে আসছে। সোনিয়ার সাথে যা হয়েছে তার সুষ্ঠু বিচার হলে এবং মাতাব্বর চক্রটিকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হতো তাহলে আর কোন সোনিয়ার বেলায় এমন ঘটনা ঘটার সাহস দেখাতে পারতো না মাতাব্বর শ্রেনীর কথিত ধান্দাবাজ মাতব্বর শ্রেণী।স্থানীয়রা প্রশ্ন রেখেছেন সোনিয়া কি বিচার পাবে? মানবাধিকার কর্মী সুমন ভট্টাচার্য অভিমত প্রকাশ করে বলেন, সম্প্রতি মুক্তাগাছা উপজেলায় গ্রামীণ জনপদে বাল্যবিবাহ পরে ছাড়াছাড়ির ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। সেই সাথে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে সামাজিক অপরাধ।
এই জঘন্য সামাজিক অপরাধ বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের একটি শক্তিশালী টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে এই ঘৃণ্য মাতাব্বর চক্রকে সনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচারের ব্যবস্থা করা না হলে সোনিয়াদের মতো নাবালিকা দরিদ্র কন্যাদের রক্ষা করা দিনকে দিন কঠিন হয়ে উঠবে।