আরিফ রববানী, ময়মনসিংহঃ ৬ই এপ্রিল রাত অনুমান ১১.৫৫ ঘটিকার সময় কোতোয়ালী থানাধীন ২১০ মন্ডল প্লাজা চরপাড়ায় চৌধুরী ক্লিনিকের গলিতে শরীফ চৌধুরী @ শান্ত (২১) এর বুক, পেট, মুখ, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চাকু দিয়ে স্টেব (ঘাই) করা রক্তাক্ত মৃতদেহ পাওয়া যায়। আসামীগণ শরীফ চৌধুরীকে নৃশংসভাবে চাকু দিয়ে স্টেব করে হত্যা করে চলে যায়। এই ঘটনায় মাত্র ০১ দিনের মধ্যে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের সকল আসামীদের গ্রেফতারসহ মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করে পিবিআই ময়মনসিংহ জেলা।
অ্যাডিশনাল আইজিপি, পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই ময়মনসিংহ ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার জনাব গৌতম কুমার বিশ্বাস এর সার্বিক সহযোগিতায় পিবিআই ময়মনসিংহ টিম উক্ত হত্যাকান্ডের ছায়া তদন্ত শুরু করে।
শরীফ চৌধুরী @ শান্ত, পিতা-মোঃ শহীদুল আলম চৌধুরী, সাং-২১০ মন্ডল প্লাজা, চরপাড়া, থানা-কোতোয়ালী, জেলা-ময়মনসিংহ’র হত্যার সংবাদ প্রাপ্তির পর পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলা দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। অতঃপর সিসিটিভি ফুটেজ নিবিড় পর্যালোচনায় উক্ত ঘটনায় জড়িত আসামীদেরকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়। আসামী সনাক্তের পর পিবিআই ময়মনসিংহ জেলার চৌকস তদন্ত দল পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সের এলআইসি শাখার সহায়তায় দ্রুততম সময়ে আসামীদের অবস্থান নির্ণয়ে সমর্থ হয়।
আসামীদের ক্ষণে ক্ষণে অবস্থান বদলসহ নিজেদের গোপন করার সকল চেষ্টা ব্যর্থ করে গত ৮ই এপ্রিল শুক্রবার ভোর অনুমান ০৪.৩০ ঘটিকার সময় নারায়নগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানা এলাকার ভিন্ন ভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ঘটনায় জড়িত প্রধান আসামী কাশিগঞ্জের নুর মোহাম্মদ এর ছেলে রাকিবুল হাসান তপু(২৫),সানকিপাড়া এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের পুত্র মোঃ শান্ত ইসলাম (২০),পরানগঞ্জ ভাটিপাড়া এলাকার কেরামত আলীর পুত্র আরিফুজ্জামান আরিফ (২২)কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তাদের গ্রেফতারের পর নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নিহত শরীফ চৌধুরী @ শান্ত এবং হত্যাকান্ডে জড়িত আসামীগণ পরস্পর বন্ধু এবং এলাকায় একত্রে চলাচল করত। তারা চরপাড়া এলাকার ফুটপাতে অস্থায়ী দোকান হতে সাপ্তাহিক চাঁদা সংগ্রহ করত। গত ১০/১৫ দিন আগে নিহত শরীফ উক্ত বন্ধু-বান্ধব ত্যাগ করে আলাদা গ্রুপ তৈরি করে এবং চাঁদা আদায়ে নিজের আধিপত্য বজায় রাখে। চাঁদার ভাগ পেতে অন্যদেরকেও তার সাথে যোগ দিতে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। ফলে আসামীগণও তার উপর প্রতিশোধ নিতে ক্ষিপ্ত হয়।
বিগত কয়েক দিন তাদের মধ্যে এই ধরণের উত্তেজনা চলমান থাকাবস্থায় ঘটনার দিন ০৬ ই এপ্রিল রাত অনুমান ১১.৫৫ ঘটিকার দিকে পূর্ব হতে ওৎ পেতে থাকা উক্ত আসামীগণ মন্ডল প্লাজা, চরপাড়া চৌধুরী ক্লিনিকের গলিতে ডিসিস্ট শরীফকে একা পেয়ে অতর্কিতে তার উপর হামলা করে এবং উপর্যুপুরি ছুরিকাঘাত করে গুরুত্বর জখম করে। তাকে স্থানীয় জনগণ দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
উল্লেখ্য, অত্র হত্যাকান্ডে পাঁচ জন আসামী জড়িত বলে ধৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। ঘটনার সাথে জড়িত অপর দুই জন আসামীকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের নিয়ে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং ধৃত আসামী আরিফুজ্জামান আরিফ এর দেখানো ও সনাক্তমতে কোতোয়ালী থানাধীন পরানগঞ্জ ভাটিপাড়া গ্রামস্থ তার বাড়ীর পিছনের খড়ের পুঞ্জির ভিতর হতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দু’টি চাকু আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সকল আসামী তাদের অত্র ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে।
ইতোমধ্যে মামলাটি পিবিআই কর্তৃক গত ০৮/০৪/২০২২ তারিখে অধিগ্রহণ করা হয়েছে। যা কোতোয়ালী থানার মামলা নম্বর-২৭, তাং-০৭/০৪/২০২২ খ্রিঃ, ধারা-১৪৩/৩৪১/৩০২/৩৪ দঃ বিঃ। গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে অদ্য ০৯/০৪/২০২২ তারিখ ফৌঃকাঃবিঃ ১৬৪ ধারায় স্বেচ্ছায় জবানবন্দি গ্রহণের নিমিত্তে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হবে।
পিবিআই ময়মনসিংহ জেলার সকল অফিসার ও ফোর্সের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এবং পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সের এলআইসি শাখার সহযোগীতায় মাত্র ০১ দিনের মধ্যে উন্মোচন হয় চাঞ্চল্যকর ও নৃশংস হত্যাকান্ডের মূল রহস্য।