মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্ত্রীকে দিয়ে দেহব্যবসা করানোর চেষ্টা। রাজী না হওয়ায় শিকলে বেঁধে স্ত্রীর উপর নির্যাতন। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কুমারগাতা ইউনিয়নের খুকশিয়া গ্রামে। গৃহবধুর বাবা মুকছেদুল আলম ৯৯৯ ফোন করে পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে শিকলবাধা তালা ভেঙ্গে গৃহবধুকে উদ্ধার করে। এঘটনায় মুকছেদুল আলম বাদি হয়ে মুক্তাগাছা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৯ (০৯), তারিখ: ০৪/০৯/২০২২ইং।
অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার কুমারগাতা ইউনিয়নের কুমারগাতা গ্রামের মুকছেদুল আলমের বড় মেয়ে মাহফুজা আক্তার তামান্না (২২) কে পাশ^বর্তী খুকশিয়া গ্রামের আব্দুল বারেকের ছেলে মনিরুজ্জামানের সাথে পারিবারিক ভাবে ২০১৬ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিয়ের ২বছরের মাথায় তাদের ঘরে এক মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়। বিয়ের পর থেকেই জামান তার ব্যবসা বাড়ানোর কথা বলে তামান্নার বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য বিভিন্ন ভাবে চাপ দিতে থাকে। ইতোমধ্যে তামান্না বাপের বাড়ি থেকে ১লক্ষ টাকা এনে দেয়। কিন্তু তার আরও টাকা চাই। নির্যাতনের ভয়ে তামান্না বাপের বাড়িতে এসে অবস্থান নেয়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) জামান তার শাশুড়িকে বুঝিয়ে সুজিয়ে তামান্নাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে। শুক্রবার দিবাগত রাতে জামান তামান্নাকে পুনরায় টাকার জন্য চাপ দেয়। টাকা আনতে অস্বীকার করলে তাকে জ¦লন্ত সিগারেট দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছেঁকা দেয়। পরশিরা তার পরিবারকে খবর দিলে তামান্নার পিতা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তামান্নাকে উদ্ধার করে ম্ক্তুাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে।
এব্যাপারে তামান্না বলেন, যৌতুকের টাকা আনতে অস্বাীকার করলে আমাকে দেহব্যবসার করতে বলে। এতে আমি রাজি না হলে আমাকে জোর পূর্বক সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে চারটি জ¦লন্ত সিগারেট পর্যায়ক্রমে তার মুখ চেপে ধরে সিগারেটের ধোঁয়া তাকে গিলতে বাধ্য করে। এসময় সিগারেট দিয়ে আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর জায়গাসহ নি¤œাঙ্গে ছেঁকা দেয় এবং বলে টাকা না দিলে বেশ্যাগিরি করে তোর কাছ থেকে টাকার উসুল তুলব। কোনভাবে তার স্বীকারোক্তি না পেয়ে বিবস্ত্র অবস্থায় তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে সারা রাত গরুর গোয়াল ঘরে রেখে দেওয়া হয়। সকালে বিষয়টি প্রতিবেশিরা জানতে পেরে তামান্নার পরিবারকে খবর দেয়। তামান্নার বাবা মুকছেদুল আলম ৯৯৯ ফোন করে পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে পুলিশের সহায়তায় শিকলের তালা ভেঙ্গে তামান্নাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে। এসময় তামান্নার ৪ বছরের মেয়ে সিদরাতুল জান্নাত সুমাইয়াকে পুলিশ স্বামীর পরিবারের লোকজনের কাছে তুলেদেন। এ সময় তামান্না ও তার পরিবারের লোকজন পুলিশকে পাষন্ড স্বামীকে গ্রেফতার করতে বললেও পুলিশ তা করেনি।
এ বিষয়ে তামান্নার মা জুলেখা খাতুন বলেন, বিয়ের পর থেকেই আমার মেয়েকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে আসছে। গত শুক্রবার রাতে টাকার জন্য আমার মেয়েকে টাকার জন্য মারধর করে, জ¦লন্ত সিগারটের আগুন দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছেঁকা দেয়। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে এব্যাপারে মুক্তাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক বলেন, তামান্নার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর অঙ্গসহ শরীরের নিম্নাঙ্গে জলন্ত আগুনে পোড়ার দাগ পাওয়া গেছে।
মুক্তাগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাহমুদুল হাসান বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটিমকে উদ্ধার করে। থানায় মামলা হয়েছে। আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। উদ্ধারকালে ঘটনাস্থলে তামান্নার স্বামী জামান উপস্থিত থাকলেও পুলিশ গ্রেফতার না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান বিষয়টি একান্তই স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপার বলে ওই সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। এখন তারা বাড়ি-ঘর ফেলে পালিয়েছে। জামানকে ধরার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।