ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার আন্ডারিয়া গ্রামে আজ শুক্রবার দুপুরে পরিত্যক্ত ইটভাটার পাশে এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেছে। পুলিশ বলছে, লাশটি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার মাদ্রাসাছাত্রী (১৩) ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি রাকিব মোল্লার (২০)। লাশের গলায় সুতা দিয়ে ঝোলানো সাদা কাগজে লেখা একটি চিরকুট পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। চিরকুটে লেখা রয়েছে, ‘আমি পিরোজপুর ভান্ডারিয়ার…(অমুকের) ধর্ষক রাকিব। ধর্ষকের পরিণতি ইহাই। ধর্ষকেরা সাবধান— হারকিউলিস।’
পরিবার বলছে, রাকিব মোল্লা সাত দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন। রাকিব মোল্লার বাড়ি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার ভিটাবাড়িয়া গ্রামে। তিনি বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।
গত শনিবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে মামলার আরেক আসামি সজল জমাদ্দারের (৩০) চিরকুট লেখা গুলিবিদ্ধ লাশ ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার বলতলা গ্রাম থেকে উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। চিরকুটে লেখা ছিল ‘আমার নাম সজল। আমি …..(অ
মুকের) ধর্ষক। ইহাই আমার পরিণতি।’ এ ঘটনায় সজলের বাবা বাদী হয়ে কাঁঠালিয়া থানায় গত সোমবার রাতে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার এজাহারে রাকিব, তাঁর বাবা, ধর্ষণের শিকার মেয়েটির বাবা, ফুপা, ফুপু ও মাদ্রাসার এক শিক্ষককে সন্দেহভাজন হত্যাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
পুলিশ, নিহত ব্যক্তির পরিবার ও স্থানীয় লোকজন বলছেন, ১৪ জানুয়ারি বেলা ১১টার দিকে ওই মাদ্রাসাছাত্রী বাড়ি থেকে তার নানাবাড়ি যাচ্ছিল। উপজেলার নদমূলা গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় রাকিব মোল্লা ও সজল জমাদ্দার মেয়েটির মুখ চেপে ধরে জোর করে পাশের একটি পানের বরজে নিয়ে যান। এরপর তাঁরা পালাক্রমে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন। রাকিব মেয়েটিকে ধর্ষণ করার সময় সজল ভিডিও করেন। এ ঘটনায় ১৭ জানুয়ারি রাতে মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে রাকিব মোল্লা ও সজল জমাদ্দারকে আসামি করে স্থানীয় থানায় মামলা করেন। এ ঘটনার পর রাকিব মোল্লা ও সজল জমাদ্দার এলাকা থেকে ঢাকা চলে যান। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় রাকিব মোল্লাকে ঢাকার সাভারের নবীনগর এলাকা থেকে কয়েকজন ব্যক্তি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। এক সপ্তাহ নিখোঁজ থাকার পর আজ দুপুরে তাঁর লাশ পাওয়া যায়।
রাকিব মোল্লার বাবার ভাষ্য, ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর রাকিব গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে যান। এরপর ঢাকার সাভারের নবীনগর এলাকায় এক বন্ধুর কাছে গিয়ে থাকেন। গত শুক্রবার (২৫ জানুয়ারি) নবীনগরের গণস্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একটি চায়ের দোকানে রাকিব মোল্লা ও তাঁর বন্ধু চা পান করছিলেন। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে একটি সাদা ও একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস এসে রাকিব মোল্লা ও তাঁর বন্ধুকে তুলে নিয়ে যায়। পরে রাকিবের বন্ধুকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকে রাকিব নিখোঁজ ছিলেন। এ ঘটনার পরের দিন গত শনিবার রাকিবের মা আশুলিয়া থানায় রাকিব নিখোঁজের ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি (জি
ডি) করতে যান। তবে পুলিশ জিডি নেয়নি। রাকিবের বাবার সন্দেহ তাঁর ছেলেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে গুলি করে মেরে ফেলেছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভান্ডারিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তারিকুল ইসলামের ভাষ্য, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা অন্ধকারে আছেন।
রাজাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন মুঠোফোনে বলেন, এলাকাবাসী গলায় চিরকুট ঝোলানো রাকিবের লাশ দেখে পুলিশকে খবর দেয়। নিহত রাকিবের মাথায় তিনটি জখমের চিহ্ন রয়েছে।তথ্য সূত্র-প্রথম আলো