সাইদুর রহমান খোকন : সারাদেশে গ্রামেগঞ্জে, জেলা-উপজেলায় নিবন্ধন ছাড়াই চলছে হাজার হাজার অনলাইন পোর্টাল । এসব অনলাইন পত্রিকা প্রকাশ হচ্ছে কোথা থেকে তা অনেকেরই জানা নেই । বিদেশ থেকেও বাংলাদেশের বিষয় নিয়ে অসত্য, ভূয়া, মনগড়া, মিথ্যা ও কাল্পনিক সংবাদও প্রকাশ করছে এসব অনলাইন পত্রিকা । অনলাইন পত্রিকার সাংবাদিকদের অধিকাংশ প্রকাশিত সংবাদ মানুষ জনকে বিরক্তিকর প্রশ্নের সম্মুখীন করছে । তথাকথিত অনলাইন পত্রিকার নামধারী সাংবাদিকরা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের পাশপাশি মূলধারার অনলাইন পত্রিকা ও সংবাদমাধ্যমগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং সাংবাদিকদের অবস্থান তলানিতে আনছে।
জানা যায়, এক শ্রেনীর নামধারী ওয়েবসাইট ডেভলপারদের মাধ্যমে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে চালু করছে অনলাইন পত্রিকা । মূল ধারার সংবাদপত্র থেকে কপি পেস্টের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ সংগ্রহ করে প্রকাশ করার পাশপাশি দেশের সাধারণ মানুষজনকে টার্গেট করে তাদের নামে মিথ্যাচার করছে এসব পত্রিকার নামধারী রিপোর্টার অর্থাৎ সাংবাদিকরা । পরে মানুষের চরিত্র হণন থেকে রক্ষায় পোস্ট ডিলিট অথবা প্রতিবাদ ছাপানোর নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এরা । খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রতিনিধি বা রিপোর্টার অর্থাৎ নামধারী সাংবাদিক হিসাবে পরিচয়পত্র বা আইডি কার্ড সরবরাহ করছে এসব পত্রিকার সম্পাদকরা । তাদের প্রকাশিত চটকদার খবরগুলো স্থান পাচ্ছে সাইবারস্পেসে। এসব সাংবাদিকরা অনলাইনে কাজ করার শুরুর আগে কেউ চালাতেন রিক্স, বিদ্যুৎ মিস্ত্রি, লাইনম্যান, আবার কেউ ঐ জাতীয় পেশার সাথে সম্পৃক্ত । অর্থাৎ দোকান কর্মচারি, মদ , হেরোইন , ইয়াবা বিক্রেতা থেকে শুরু করে অপরাধী চক্রও রয়েছে ।
সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে সব ধরনের মিডিয়ার পরিসংখ্যান থাকলেও অনলাইন মিডিয়ার কোনো পরিসংখ্যান নেই। বর্তমান সরকারের আমলে অনলাইন পত্রিকার নীতিমালা থাকার পরও তোয়ক্কা না করে প্রতিবছর গজিয়ে উঠছে এসব পত্রিকা । সাংবাদিকতার নামে চলছে যথেচ্ছাচার। সাংবাদিক হিসেবে করা হচ্ছে ক্ষমতা’র অপব্যবহার। জেলা সদর এমনকি মফস্বল থেকেও প্রচুর অনলাইন পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। অনেকেই অপসাংবাদিকতা করার সুযোগ পাচ্ছে।
তুলনামূলক অনেক সহজ হওয়ায় অন্য পেশায় থেকেও কেউ কেউ একটি অনলাইনভিত্তিক সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠা করে নিজেকে রিপোর্টার হিসাবে জাহির করছেন। এদের অনেকেরই সাংবাদিকতার ন্যূনতম জ্ঞান নেই। সামাজিক প্রভাব বিস্তারের জন্যই তারা নিজের প্রতিষ্ঠিত মিডিয়াকে ব্যবহার করছেন। এ ধরনের সাংবাদিকতা ‘মহামারি’ আকারে ছড়িয়ে পড়ার আগেই এটি বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানান মিডিয়া-সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে” বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি খায়রুল আলম রফিক জানান, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে অনলাইন সাংবাদিকতা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমান সরকার সুষ্ঠু সাংবাদিকতার স্বার্থে নীতিমালা করেছে । এরই ধারাবাহিকতায় রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা হয়েছে অনেক অনলাইন পত্রিকা । অপরদিকে রেজিস্ট্রেশনের তোয়ক্কা না করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল নিজেকে মিডিয়াব্যক্তিত্ব হিসেবে সমাজে পরিচয় দেয়ার লোভ থেকেই অনলাইন মিডিয়ার নামে অপসাংবাদিকতা করছে । সাংবাদিকতার নামে দুর্নীতিও করছে। এর ফলে পুরো সাংবাদিক-সমাজের ওপর কলঙ্ক আসছে। এটি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
জানা যায়, বাংলাদেশে অনলাইন সাংবাদিকতায় হাজার অনলাইন নিউজ-পোর্টাল রয়েছে । সেই সঙ্গে সংবাদপত্রের লিঙ্কিং সাইটও রয়েছে অগুনতি। এসব সংবাদপত্রকে কতোটা সংবাদপত্র বলা যায় তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞরা। এসব অনলাইনের অনেক সাংবাদিক পেশাদার নয় । অনেক কম্পিউটার অপারেটরও একটি সাইট তৈরি করে ‘সম্পাদক’ বনে যাচ্ছেন । তারা পরিচয়পত্র নিজেদের ফেসবুকে শেয়ার করছে।
আন্ডারগ্রাউন্ড অনলাইন পত্রিকার ভূয়া সাংবাদিকদের মোটা অংকের অর্থ আয় দেখে দেশের শিক্ষিত যুব সমাজ হাতাশায় ভূগছে । সুস্থ্য ধারায় ভাল কোন কাজ করার মানসিকতাও হারিয়ে ফেলেছেন তারা।