ত্রিশাল প্রতিনিধিঃ ময়মনসিংহের ত্রিশাল একটি ঐতিহ্যবাহী নাম শিক্ষার মান উন্নয়নে এই উপজেলার নাম সর্বত্রই। শিক্ষার আলো সর্বত্র পৌছে দেয়ার যে প্রয়াস সরকার হাতে নিয়েছে তা সফলতার সাথে এগিয়ে গেলেও অনেক জায়গায় সকল সুবিধা থাকার পরও হুমকির মুখে পরতে হচ্ছে কমলমতি ছাত্র/ছাত্রীদের কারণ আশপাশের পরিবেশ নিয়ে এখন আতংকিত অবিভাবকরা । বিভাবকরা তাদের সন্তানদের শহর মুখি করছে। তাতে যেমন ফাকা হচ্ছে গ্রামের বিদ্যালয় গুলো তেমনি অসচ্ছল পরিবারের সন্তানরা দূরে থাকছে শিক্ষা থেকে।
তেমনি এক বিদ্যালয়ের কথা বলবো আজ যা রীতিমত মৃত্যুফাঁদে পরিনত হয়েছে । ত্রিশালের ৬৮ নং কোনাবাড়ী জি সি সরঃ প্রাথঃ বিদ্যালয়টি ১৯৬৯ সালে স্থাপিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সুনামের সাথে শিক্ষাপাঠ পরিচালনা করে আসলেও কালের বিবর্তনে এখন তা মৃত্যুফাঁদে পরিনত হয়েছে ।আর এভাবেই মাথা উঁচু করে থাকা বিদ্যালয়টি মাথানত করে দীর্ঘশ্বাস নিচ্ছে কখনো যেন কমলমতি কারো লাশ ভেসে না উঠে। কেন বলছি একথা কারণ বিদ্যালয়টির সীমারেখার চারপাশ হা করে আছে পাঙ্গাস সহ নানা দেশি বিদেশী মাছ। স্কুলটির রাস্তা এখন কোনটা তা বলাবাহুল্ল মৎস্য ফিসারীর ক্রমবর্ধমান চাহিদায় রাস্তাগুলো এখন পাড়ে পরিণত হয়েছে।
একজন ব্যবসায়ি নয় একজন অবিভাবক হিসাবে যখন স্কুলের মাঠে দাড়িয়ে চারপাশ অবলোকন করবেন তখন এর ভয়াবহতা আপনার চোখে দেখা দেবে। তবুও নানা ধরনের সমস্যা আর অনিশ্চয়তার মধ্যেও সফলতার সাথে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে জি.সি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়টি চারপাশে খোলা পুকুর যে কোন সময় ঘটতে পারে অপ্রত্যাশীত কিছু।
আশপাশের গ্রাম থেকে পড়াশুনা করতে আসা কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ভয়ের মধ্যেই দিনাতিপাত করে যাচ্ছে। দিনকে দিন কমতে শুরু করেছে উপস্থিতি। বিদ্যালয়ের চারপাশে মাছের পুকুর গুলো যেন গিলে খাওয়ার উপক্রম স্কুলটিকে। আর স্কুলে যাওয়ার রাস্তাটি পুকুরের পানিতে এমন অবস্থা যে, যেকোন সময় কমলমতি ছাত্র/ছাত্রী সহ রাস্তাটি পানি গর্বে সলিল সমাধি হতে পারে। যে ভাবে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, তাতে আদরের সন্তানদের কেউ এই ঝুঁকিতে পাঠাতে চাইছে না । যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় দূর্ঘটনা । মূলত স্কুলের মূলসড়কটিতে কোন যানবাহন চলাচলের উপায় নেই। তাতে দু পায়ে চলাই বাচ্চাদের জন্য ভয়ের হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অপরিকল্পিত ফিসারীব্যবস্থা হয়ে উঠেছে মরণ ফাঁদে।পুকুরের পাড় ভেঙ্গে রাস্তায় এখন চলাচল করা ছাত্র/ছাত্রীদের দুঃস্কর হয়ে পড়েছে। স্কুলের জমি মৎস্য চাষিদের পুকুরে চলে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা এখন স্কুলে আসার পর ভয়ে বাইরে খেলা-ধুলা করতে পারছেনা। পুকুরে ছাত্র/ছাত্রী পড়ে যাওয়ার ভয়ে শিক্ষকদের সব সময় আতংকের মধ্যে পাঠ দান করতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ের চারপাশে বাউন্ডারি ওয়াল নেই এবং খোলা পুকুরের কারণে মাঠে খেলা নিয়ে ভয়ে থাক শিক্ষকরা পড়ানো ছেড়ে মাঠের দিকে তাকিয়ে থাকে হয়। এক অনিশ্চয়তার মাঝে পাড় করতে হয় ছুটি অবদ্ধি।
কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের স্কুলের মাঠে যেতে ভয় করে কেউ যদি পানিতে গিয়ে পড়ে। তাই স্কুলের সামনের খালি জায়গা ও বারান্দায় খেলা করি। অনেক সময় পুকুরে খেলনা পরে গেলে সেটা আনতে পুকুরের পানিতে সাঁতার না জানা সহপাঠীরা ডুবে যাওয়ার ভয়ে খেলনা আনতে যায়না। আবার অনেকেই বাঁশের লম্বা লাঠি দিয়ে আনার চেষ্টা করে। তাছাড়া আমরা সাঁতার জানিনা ভয় লাগে যদি হঠাৎ খেলতে খেলতে পানিতে পড়ে যাই। তাই মন চাইলে সে ভাবে খেলতে পারিনা। বাবা মা বলে স্কুলে যাওয়ার দরকার নাই রাস্তা ভাল না বলে সতর্ক করে। কিন্তু স্কুলে আসলে ভয়ের সাথে থকতে হয়।
স্থানীয় অবিভাবকরা জানান, বিদ্যালয়টি অনেক পুরোনো কিন্তু সে অনুয়ায়ী সার্বিক উন্নতি হয়নি। দূর-দুরান্ত এখানে অনেক কোমলমতি শিশুরা পড়তে আসে। স্কুলটির সীমানা প্রাচীর না থাকায় অতংক বিরাজ করে শিক্ষক ও অবিভাবকদে মধ্যে এই আতংকের মধ্যে সফল পাঠদান সম্ভব নয়। পাশে পুকুর যেকোন সময় শিশুরা পানিতে পড়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ স্কুলটি আমাদের সন্তানদের জন্য নিরাপদ নয়। পাশেই পুকুর দেখতেই বাচ্চাদের জন্য ভয় লাগে ছোট রাস্তা চলাচলের বিশাল সমস্যা। বর্ষাকালীন সময় যাওয়ার মত কোন ব্যবস্থা থাকেনা। এত সমস্যার মাঝে কিভাবে আমাদের ছোট ছোট বাচ্চা স্কুলে পাঠাবো ?
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, পুকুর পাড়ের চারিদিক দিয়ে শিক্ষার্থীদের আসা যাওয়ার কোন রাস্তা নেই, চারিদিকে শুধু ফিসারী, ফিসারির পাড়ের দু’পায়ের রাস্তা দিয়ে শিক্ষার্থীরা আসা যাওয়া করে, এ কারনে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান করাতে হচ্ছে। অনেক সময় অবিভাবক শিশুদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দেন।তিনি আরো বলেন,পুকুর মালিকদেরকে অনেক বার অনুরোধ করেছি যদি রাস্তাটি একটু বড় করার সাথে পাড়গুলোতে বাঁশদিয়ে বন্ধ করে দেয়ার উদ্যোগ নেয় তাহলে স্কুলের যাতায়ত ব্যবস্থা সুন্দর হতো ছাত্র-ছাত্রীরা চলাচল করতো নিরাপদ ভাবে। কিন্তু তারা আমাদের কথা গুলে শুনছেন না বরং স্কুলের জমি তাদের পুকুরের দখলে চলে যাচ্ছে তাতে করো ভ্রক্ষেপ নেই।
এবিষয়ে উপেজেলা শিক্ষা অফিসার নূর মোহাম্মদ বলেন, বিষয়টি তার আগে জানা ছিলনা পরে জানতে পারছেন। সরেজমীনে গিয়ে দ্রুত একটা ব্যবস্থা নিবেন।