ত্রিশালে বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর একটি যৌক্তিক দাবী

প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিলো সরকার। আর এর জন্য সব দিক বিবেচনা করে ময়মনসিংহের ত্রিশালের চেলেরঘাট নামক স্থানকে বেছে নিয়েছিলো সরকার।

‘ত্রিশালে বিমানবন্দর চাই’ নামক কোন দাবী কিন্তু ত্রিশালবাসীর কখনই ছিলোনা। এটা ছিলো সরকারের পরিকল্পনা মাত্র। ত্রিশালের চেলেরঘাট নামক স্থানে সেনাবাহীনির জন্য একটা সেনানিবাস তৈরীর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সেখানে বড় আকারের একটা জমি নিয়েছিলো সরকার। পরবর্তী সময় সরকার সেখানে সেনানিবাস করার পরিকল্পনা বাতিল করে দেয়। সেনানিবাসের পরিকল্পনা বাতিল হলেও সেখানকার জমি কিন্তু রয়ে গিয়েছে। এর কিছুদিন পর সরকার যখন একটা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করার পরিকল্পনা হাতে নেয় তখন প্রথম পছন্দ হিসেবে ত্রিশালের চেলেরঘাটের সেই জমিটাকেই বেছে নিয়েছিলো সরকার।

ত্রিশালে বিমানবন্দরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের খবর ছড়িয়ে পড়ার সথে সাথে মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। এক শ্রেনীর মানুষ কোর ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই গুজব ছড়িয়ে দেয় যে ত্রিশালে বিমানবন্দর হলে ধংষ হয়ে যাবে ত্রিশাল, ধংষ হয়ে যাবে ত্রিশালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ধংষ হয়ে যাবে যুব সমাজ। সেইসাথে যুক্ত হয় অপরিপক্ক রাজনৈতিক স্বিদ্ধান্ত ও গুটি কয়েক মানুষের ব্যাক্তিগত স্বার্থ আর এই কারনে ত্রিশালে বিমানবন্দর স্থাপনে সরকারের যে পরিকল্পনা ছিলো সেটা বাতিল হয়ে যায়/করে দেয়া হয়।

একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলে পাল্টে যায় সেই এলাকার চেহারা। বিমানবন্দরকে ঘিরে তৈরি হয় আধুনিক ফাইভস্টার হোটেল/মোটেল। সেখানে কর্মসংস্থান হয় লক্ষ লক্ষ মানুষের। আধুনিকায়ন হয় সেই এলাকার রাস্তা-ঘাট। আন্তর্জাতিক ভাবে ছড়িয়ে পড়বে সেই এলাকার নাম।

ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজি নজরুল ইসলামের নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবী যখন উঠেছিলো তখন অনেকেই ব্যাঙ্গ/বিদ্রুপ করেছিলো। অনেককেই দেখা গিয়েছে নেতিবাচক দিক গুলি তুলে ধরে এর বিরোধিতা করতে। কিন্তু আজ ত্রিশালবাসী সেটার সুফল ভোগ করছে, তারা গর্ব করে বলে: বাংলাদেশের একমাত্র সংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের ত্রিশালে। পাল্টে গিয়েছে ত্রিশালের চেহারা। বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে তৈরি হয়েছে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান।

হাঁ, সবকিছুরই একটা ভালো আর একটা মন্দ দিক থাকে। কে কোন দিকটা বেছে নেবে সেটা একান্ত তাদের ব্যাক্তিগত বিষয়। ফেনসিডিল তৈরি হয়েছিলো কাশির সিরাপ হিসেবে ব্যাবহার করার জন্য, আজ যুব সমাজের কতিপয় বখে যাওয়া সদস্যরা সেটাকে মাদক হিসেবে নেশা করার জন্য ব্যাবহার করছে। এখন আমরা যদি ফেনসিডিল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করি তাহলে বোকামী। এর দায় কোন ভাবেই প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের উপর বর্তাবেনা। কারণ, তারা মানুষের সেবা করার উদ্দেশ্যেই তৈরি করেছিলো এই ফেনসিডিল নামক সিরাপ, নেশা করার জন্য নয়।

দেশে বর্তমানে তিনটি আন্তর্জাতিক ও পাঁচটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর আছে। এসব বিমানবন্দরের কোনোটারই ধারণক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার হয় না। এর মধ্যে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি দেশের প্রধান বিমানবন্দর। বছরে ৮০ লাখ যাত্রী পরিচালন ক্ষমতা রয়েছে এই বিমানবন্দরের। এখন এ বিমানবন্দর দিয়ে ধারণক্ষমতার অর্ধেকের চাইতেও কম যাত্রী আসা যাওয়া করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ব্যস্ত সময়ে স্বাভাবিকভাবে ঘণ্টায় গড়ে ৬০টির মতো বিমান ওঠানামা করে। বর্তমানে ব্যস্ত সময়ে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানসহ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ মাত্র ১০টি বিমান উঠানামা করে। এতেই বুঝা যাচ্ছে, ঢাকায় বর্তমানের চাইতে পাঁচগুণ বিমান উঠানামা এবং যাত্রীর পরিমাণ দ্বিগুণ হলেও এর জন্য শাহজালাল বিমানবন্দরই যথেষ্ট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আধুনিকায়নের মাধ্যমে এ বিমানবন্দরের ক্ষমতা-দক্ষতা আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

শাহজালাল বিমানবন্দরের পর্যাপ্ত জমি আছে। এরপরও যদি স্থান সংকুলান না হয় তাহলে বিমানবন্দর সংলগ্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে লীজ দেয়া বিমানবন্দরের ১৩০ একর জমি ফেরত নিয়ে সেদিকে বিমানবন্দরকে সম্প্রসারণ করতে পারে। ইতিমধ্যে ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণে অর্থায়নের মধ্যে সরকারি কোষাগার থেকে পাওয়া যাবে পাঁচ হাজার কোটি টাকা এবং বাকি অর্থ আসবে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) থেকে। জাপানের মিটসুবিশি এবং ফুজিতা ও কোরিয়ার স্যামসং একটি কনসোর্টিয়াম হিসেবে এর নির্মাণ কাজটি করবে।

এই অবস্থায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপনের যৌক্তিক কোন কারন নেই। তবে সরকার যদি নতুন করে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করতেই চায় তাহলে সেটা আমাদের ত্রিশালেই হোক। এটাই ত্রিশালবাসীর দাবী। আর এটা অবশ্যই যৌক্তিক। কারণ, ত্রিশালই ছিলো সরকারের প্রথম পছন্দ।

জাকারীয়া খালিদ
সম্পাদক ও প্রকাশক
ত্রিশাল প্রতিদিন।