ত্রিশাল প্রতিদিন ডেস্ক::প্রায় ১৮ বছর আগে নিজ বাপেরভিটা ও ক্রয়সূত্রে মালিক হয়ে বসত ভিটায় টিনের ঘর নির্মাণ করেন মাথা গুজার জন্য। প্রতিবেশিদের অত্যাচারে থাকতে পারেনি বেশি দিন। কিছুদিন পর এক ঝরের রাতে সংসারেও নেমে আসে এক নির্মমতা। রাতের অন্ধকারে প্রতিপক্ষ বৃদ্ধ স্বামীকে কুপিয়ে নির্মম ভাবে আহত করে।
অভাব-অনটনের সংসারে ওই সময় চিকিৎসার জন্য টাকা না থাকায় বসত ভিটার শুধু ঘরটি ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে চিকিৎসা করান স্বামীর। বসত ঘরটি বিক্রি করে দেয়ায় থাকার জায়গা হয় খোলা আকাশের নিচে। কয়েক দিন হুমকি ধমকিতে থেকে জীবন বাচাঁতে বসত ভিটা ছেড়ে চলে যান ঢাকার ঈমামগঞ্জে।
স্বামী বৃদ্ধ বয়সে সেখানে এক মার্কেটে চাকুরি নেন দাড়োয়ানের। আর স্ত্রী অন্যের বাড়িতে ঝি’র কাজ নেন। দুই সন্তানের একজন প্রতিবন্ধী অপরজন গ্রামে গ্রামে ফেরীতে ভাঙ্গারী ক্রয় করে বিক্রি করে। জীবনের শেষ সময়ে নিজ ভিটাতে থাকতেই ১৭ বছর পর আসেন নিজ ভূমিতে ঘর নির্মাণ করতে।
দীর্ঘদিনের উপার্জনের মুষ্টিময় টাকা দিয়ে একটি টিনসেট ঘর করতে গেলে প্রতিপক্ষ মারধর করে নিয়ে যায় সব কিছু। সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের বাহাদুর গ্রামের হতদরিদ্র বৃদ্ধ দম্পতির বাড়িঘর ভেঙে নির্যাতন করে ভিটেমাটি দখলের পায়তারা করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ফলে ২৬ দিন ধরে খোলা আকাশের নিচে পলিথিনের ছাউনি দিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও প্রতিকার মিলছে না।
এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ত্রিশাল থানার অফিসার ইনচার্জ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, হতদরিদ্র বৃদ্ধা আমিনা বেগম পৈত্রিক ওয়ারিশ ও ক্রয়সূত্রে পাওয়া ১৩ শতক জমিতে প্রায় ১৭ বছর আগে ঘর নির্মাণ করে স্বামী-সন্তান নিয়ে বসবাস করছিলেন। কিছুদিন পর ভাইপো বাচ্চুর নেতৃত্বে স্থানীয় প্রভাবশালীরা তার স্বামী জয়নাল আবেদীন (৭৭) কে কুপিয়ে জখম করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। পরে ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যায় ঢাকার ঈমামগঞ্জে। সম্পতি এ জমিতে এসে ঘর নির্মাণ করলে রাতের আধারে ঘর ভেঙে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। গত ২৬ দিন ধরে পলিথিনের ছাউনি দিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
আমেনা জানান, ভূমিটি এলাকায় আমেনার ভিটা নামেই পরিচিত। এখানে পূর্বে ঘর করেছি আমি, গাছপালা লাগিয়েছি, গাছগুলোও অনেক বড় হয়েছে। আমরা ঈমামগঞ্জ থাকাবস্থায় জমিটি ভাইপো কাশেম নামের একজনের কাছে বিক্রি করে দেয় এবং কাশেম তার নামে জমা-খারিজ করে নেয়। বিষয়টি আমি শুনে স্ব-পরিবারে আমার ভিটায় অবস্থান নিয়েছি। কিছু জমি পৈত্রিক সূত্রে আর সাড়ে ৬ শতক জমি বোন ফাতেমা খাতুনের কাছ থেকে ২৪/৬/২০০১ সালে ক্রয় করি। ত্রিশাল সাব: রেজিষ্ট্রি অফিসের মাধ্যমে ক্রয়কৃত দলিল যাহার নং-৪৬০৫। আমার জমিতে ভূল খারিজ দেয়ায় তা বাতিলের জন্য ২০/৯/২০১৮ ইং তারিখে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর একটি মামলা দায়ের করি। যাহার নং-১৪১/১৮-১৯।
আমেনার বোন ফাতেমা খাতুন জানান, সাড়ে ৬ শতক জমি বোনের কাছে বিক্রি করি, প্রতিপক্ষরা ভূয়া খারিজ দিয়ে ভিটে ছাড়া করতে চাচ্ছে। তিনি আরো জানান, ভিটে না ছাড়ায় রাতে তাদের ছাউনির ভিতরে ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের ওপর মলমূত্র নিক্ষেপ করে প্রতিপক্ষের লোকজন। তবে অভিযুক্তরা বলছেন, ওই জমিতে ঝামেলা থাকায় ঘর তৈরিতে বাধা দেয়া হয়েছে। কোনো দোষ না করলেও তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে।
বালিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ বাদল জানান, এটা আসলে আমেনার ভিটা, এ নামেই পরিচিত ওই এলাকায়। ওরা একেবারেই নিরীহ, ঘর ভেঙ্গে নেয়ার পর আবার ঘর নির্মাণের জন্য সরকারী বরাদ্ধ হতে আমি টিনও দিয়েছি। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্ত মূলক বিচার দাবি করেছেন তিনি।
উপজেলা সহকারী কমিশিনার (ভূমি) মোঃ এরশাদ উদ্দিন জানান, আমেনা খারিজ বাতিলের জন্য একটি মামলা করেছে। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দ্রুত এ মামলার রায় দেয়া হবে।
ত্রিশাল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আজিজুর রহমান জানান, এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ‘জড়িতদের’ বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের এবং আদালতে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।