অনলাইন ডেস্কঃ তুরস্কে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে জয় পেয়েছেন দুই দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা প্রেসিডেন্ট রেচেপ তায়েপ এরদোয়ান। দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মত দ্বিতীয় ধাপে নেয়া ভোটে এগিয়ে থাকায় রাত থেকেই উদযাপন করছেন মি. এরদোয়ানের সমর্থকরা।
রবিবার রাতে আঙ্কারার শহরতলীতে নিজের প্রাসাদের বাইরে জড়ো হওয়া সমর্থকদের উদ্দেশ্যে মি. এরদোয়ান বলেন, “সাড়ে আট কোটি মানুষের পুরো দেশই আজ জিতেছে।”
বিরোধী নেতা মি. কিলিচদারুলু অবশ্য এখনো স্পষ্টভাবে হার স্বীকার করেননি।তিনি অভিযোগ করেছেন এবারে ‘সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন’ হয়েছে।
মি. কিলিচদারুলু বলছেন যে, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের রাজনৈতিক দল তার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সব রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করেছে।
প্রায় পূর্ণাঙ্গ ফলাফল প্রকাশ করার পর দেখা যায়, মি. এরদোয়ান প্রায় ৫২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।
এরদোয়ানের গোছানো প্রচারণার বিপরীতে মি. কিলিচদারুলু টিকতেই পারেননি। প্রথম দফায় দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে ভোটের ব্যবধান ছিল ২৫ লাখের মত। দ্বিতীয় দফায়ও সেই ব্যবধান ছিল ২০ লাখের বেশি।সাত বছর আগে ২০১৪ সালে তুরস্কে নির্বাচনের পদ্ধতি পরিবর্তন করা হয়। সেসময় থেকে সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে ভোট দিতে পারে মানুষ।
ভোট গ্রহণের দিন বেশ আগে থেকেই জয় উদযাপন শুরু করেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।বিকেলে তুরস্কের সবচেয়ে বড় শহর ইস্তান্বুলে একটি বাসের ওপর দাঁড়িয়ে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন তিনি।
এরপর সন্ধ্যায় মি. এরদোয়ান তার প্রাসাদের সামনে জড়ো হওয়া বিশাল জনসমাগমের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। তিনি দাবি করেছেন, সেসময় সেখানে তিন লাখ বিশ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিল।
এই নির্বাচনকে তুরস্কের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়ে মি. এরদোয়ান বলেছেন, “কে জিতেছে, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল তুরস্ক জিতেছে।” তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে ব্যঙ্গ করে বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “বাই বাই বাই কেমাল।”আঙ্কারায় তার সমর্থকরাও পরে এভাবেই বিরোধী নেতার বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়।
চূড়ান্ত ফলাফল এখনো নিশ্চিতভাবে ঘোষণা হয়নি, কিন্তু তুরস্কের সর্বোচ্চ নির্বাচন কাউন্সিল বলছে যে মি. এরদেোয়ানের বিজয় নিয়ে কোনো সন্দেহই আর নেই।এই নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ২৫ বছর ধরে তুরস্কের ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হল।
বিজয় উদযাপনের লক্ষ্যে এদিন আঙ্কারায় প্রেসিডেন্টের প্রাসাদের দরজা খুলে দেয়া হয় সাধারণ মানুষের জন্য। এতে যোগ দেন আঙ্কারার সব জায়গা থেকে সমর্থকরা জড়ো হন।উপস্থিত অনেককেই দেখা যায় প্রাসাদের বাইরে ঘাসের ওপর তুরস্কের পতাকা রেখে নামাজ আদায় করতে।
তবে এরদোয়ানের সমর্থকরা অর্থনৈতিক টানাপোড়েন নিয়ে খুব একটা চিন্তা করছেন না। তারা সারা বিশ্বে তাদের নেতার জনপ্রিয়তার বিষয়টি নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট।সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে মি. এরদোয়ানের কঠোর নীতিরও প্রশংসা করেন তার সমর্থকরা।এরদোয়ানের এই বিজয়কে অনেকেই মুসলিম বিশ্বের জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন।ইস্তান্বুলের তাসকিম স্কোয়ারে জয় উদযাপন করতে এসেছিলেন ফিলিস্তিনি নাগরিক আলা নাসার, তার গায়ে জড়ানো ছিল তুরস্কের পতাকা।
তিনি বলছিলেন যে মি. এরদোয়ান নিজের দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি ‘আরব ও মুসলিম বিশ্বকেও সমর্থন করছেন।’
দুই হাজার ষোলো সালে বানচাল হয়ে যাওয়া এক সেনা অভ্যুত্থানের পর মি. এরদোয়ান প্রধানমন্ত্রীর পদ বাতিল করেন এবং ব্যাপক ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন।এবারের নির্বাচনের আগে তার বিরোধীরা অঙ্গীকার করেছিল যে তারা এই পদ্ধতির পরিবর্তন করবে।তুরস্কের বিরোধী দলগুলো এখন ২০২৪ সালের স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেবে।
তথ্যসূত্র-বিবিসি