করোনাভাইরাসের আঘাতের পর থেকে সবার দৃষ্টি ছিল ভ্যাকসিন গবেষণায়। অনেক গবেষনার পর সকল গবেষক এক মতে আসে, কেবল একটি সফল ও কার্যকর ভ্যাকসিনই পারে এই মহামারীর স্থায়ী সমাধান নিয়ে আসতে।আর তাই পুরো বছরটা জুড়েই ছিল ভ্যাকসিন তৈরির অভূতপূর্ব কর্মযজ্ঞ! সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় ডিসেম্বরেই অনুমোদন পায় প্রথম ভ্যাকসিন। এরপর একে একে বিভিন্ন পর্যায়ে অনুমোদন পেয়েছে আরও প্রায় ২০টি ভ্যাকসিন, যার মধ্যে ব্যাপক হারে প্রয়োগ হয়েছে ফাইজার ও মডার্নার এমআরএনএ ভ্যাকসিন, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, জনসন অ্যান্ড জনসন ও রাশিয়ার এডিনোভাইরাসভিত্তিক ভ্যাকসিন, আর চীনের নিষ্ক্রিয় ভাইরাস ভ্যাকসিন।
বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৩.৭ বিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, এরকম অসাধারণ এক ভ্যাকসিন প্রচেষ্টাকে আজ হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে এই করোনাভাইরাস। কারণ বিভিন্ন সময় ভিন্ন রকমের ভ্যারিয়েন্টের আবির্ভাব। এসব ভ্যারিয়েন্ট কোনো না কোনো ভাবে আগের ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় শক্তিশালী। কোনোটার রোগ ছড়ানোর ক্ষমতা বেশি, কোনোটার গুরুতর রোগ ঘটানোর ক্ষমতা বেশি আর কোনোটার ভ্যাকসিনের সুরক্ষাকে পাশ কাটিয়ে যাবার ক্ষমতা বেশি।
প্রাথমিকভাবে যুক্তরাজ্য (আলফা), দক্ষিণ আফ্রিকা (বেটা) ও ভারতে (ডেল্টা) উদ্ভুত এসব ভ্যারিয়েন্ট এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে। এগুলোর মধ্যে সর্বশেষ হলো ভারতের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। বাংলাদেশেও এখন ডেল্টা করোনার তৃতীয় ঢেউ চলছে, সেটা ডেল্টার কারণেই।
ইতিমধ্যে জনসংখ্যার একটি অংশ পেয়েছে ভারতের কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন আর বর্তমানে অনেকেই পাচ্ছে চীনের সিনোভ্যাক বা মডার্নার এম-আরএনএ ভ্যাকসিন। প্রশ্ন হল, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিপরীতে এসব ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কেমন?
সে জন্য সার্স কোভি-২ ভাইরাসের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণাপত্রগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যেতে পারে।
এগুলো থেকে জানা যায়, মূলত দুধরনের গবেষণা হচ্ছে: ইমিউনিলোজিক্যাল আর এপিডেমিওলজিক্যাল। ইমিউনিলোজিক্যাল গবেষণায় কথায় আসা যাক। এক্ষেত্রে যাঁরা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তাঁদের শরীর থেকে সেরাম সংগ্রহ করে ল্যাবরটিরেতে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে, ভ্যাকসিনের কারণে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি ভাইরাসের এসব ভ্যারিয়েন্টকে প্রশমিত করতে পারে কিনা।
ফিনল্যান্ডে এ ধরনের এক গবেষণা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, ফাইজার ভ্যাকসিন নেওয়া স্বাস্থ্যকর্মীদের শরীরে তৈরি অ্যান্টিবডি আলফা ভ্যারিয়েন্টকে সম্পূর্ণ প্রশমিত করতে পারে কিন্তু বেটা ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে সফলতা পাঁচ ভাগের এক ভাগ। কারণ খুব অল্পসংখক মানুষের স্যাম্পল নিয়ে এসব গবেষণা করা হয়।
এ মাসেই নেচার জার্নালে আরেকটি গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এ গবেষণায় ফাইজার বা অ্যাস্ট্রাজেনেকা দুই ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়া ব্যক্তির থেকে সংগ্রহ করা সেরাম ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে প্রশমিত করতে পারছে। কিন্তু তা আলফা ভ্যারিয়েন্টন্টের তুলনায় দুই থেকে পাঁচ গুণ কম।
অ্যান্টিবডির কার্যকারিতা বিচারে ফাইজার ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে যথাক্রমে শতকরা ৮৮ ভাগ ও ৬০ ভাগ কার্যকরী। এসব তথ্য ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা দেয়। কিন্তু সমস্যা হলো এ ধরনের গবেষণা থেকে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত করে বলা যায় না।
কারণ খুব অল্পসংখক মানুষের স্যাম্পল নিয়ে করা হয় এসব গবেষণা করা হয়। এছাড়া এসব গবেষণার ফলাফল শুধু ল্যাবরেটরির কৃত্রিম কন্ডিশনে করা পরীক্ষানিরীক্ষা থেকে পাওয়া। বাস্তবে মানুষের শরীরে কী ঘটছে তা শুধু ল্যাবরেটরিতে দেখা অ্যান্টিবডির কার্যকারিতা পরীক্ষা করে নিশ্চিত করে বলা যায় না। এ কারণেই ভ্যাকসিনের যথাযথ কার্যকারিতা বিচারে প্রয়োজন জরিপ ভিত্তিক বা এপিডেমিওলজিকাল স্টাডি। এ ধরনের গবেষণায় ভ্যাকসিন নেওয়া এবং না নেওয়া হাজার হাজার মানুষের মধ্যে সংক্রমণের হার দেখে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নির্ধারণ করা হয়।
ভ্যাকসিন অনুমোদন পাবার পর এবং যথেষ্ট পরিমাণে প্রয়োগ করার পর যে এপিডেমিওলজিকাল স্টাডি করা হয় তাকে বলে রিয়েল লাইফ ইফেক্টিভনেস বা বাস্তবভিত্তিক কার্যকারিতা নির্ধারণের গবেষণা। গত কয়েক মাসে আলফা ও বেটা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে ফাইজার ও মডার্নার এম-আরএনএ ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে এরকম বেশ কিছু উচ্চ মানের গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে ইজরায়েল, কাতার ও ফ্রান্স থেকে।
এসব গবেষণায় দেখা যায় , দুই ডোজ নেওয়ার পর এম-আরএনএ ভ্যাকসিন আলফা, বেটা বা মূল ভ্যারিয়েন্ট সবগুলোর বিরুদ্ধে যথেষ্ট কার্যকর। যদিও বেটা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কার্যকারিতা আলফা বা মূল ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় বেশ কম। আবার কাতারে করা গবেষণায় দেখা গেছে, আলফা ও বেটা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে মডার্নার ভ্যাকসিন ফাইজারে ভ্যাকসিনের তুলনায় বেশি কার্যকর। এম আরএনএ ভ্যাকসিনের তুলনায় এডিনোভাইরাস জাতীয় ভ্যাকসিন যেমন অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন নিয়ে রিয়েল লাইফ ডাটা অনেক সীমিত।
গত মে মাসে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন-এ একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। তাতে দেখানো হয়েছে, বেটা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে এডিনোভাইরাস ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ছিল হতাশাব্যাঞ্জক। কিন্তু যুক্তরাজ্যে সম্পাদিত আরেকটি গবেষণায় আলফা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে এর কার্যকারিতা দেখানো হয়েছে শতকরা ৬০ থেকে ৭৩ ভাগ। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, বেশির ভাগ গবেষণায় দেখা গেছে, দুডোজের তুলনায় একডোজ ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্য হারে কম। অন্যদিকে বেশিরভাগ ভ্যাকসিন করোনাভাইরাসজনিত গুরুতর রোগ প্রতিরোধে বা হসপিটালাইজেশন প্রতিরোধে বেশি কার্যকারিতা দেখতে সক্ষম হয়েছে।
সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে বহু প্রতিক্ষিত ও প্রত্যাশিত ডাটা প্রকাশিত হয় নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন-এ। দুই ডোজ সম্পূর্ণ করার পর ফাইজার ভ্যাকসিন শতকরা ৮৮ ভাগ আর অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন শতকরা ৬৭ ভাগ কার্যকরী। যদিও আলফা ভ্যারিয়েন্ট বা ইউকে ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় কিছুটা কম। এর আগে প্রকাশিত তথ্যের সাথে তুলনা করলে বেটা ভ্যারিয়েন্ট বা সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টের চাইতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে বেশির ভাগ ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বেশি হবে বলে মনে হচ্ছে। যদিও মডার্না ভ্যাকসিনের ডাটা এখনো প্রকাশিত হয়নি। অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কার্যকারিতার তথ্যের সাথে তুলনা করলে আশা করা যায়, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা আরও ভালো হবে।
এর স্বপক্ষে কানাডায় সম্পাদিত একটি অপ্রকাশিত গবেষণার তথ্য অনুযায়ী ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে এক ডোজ মডার্না ভ্যাকসিন শতকরা ৭২ ভাগ কার্যকরী দেখানো হয়েছে। যদিও যথেষ্ট তথ্যের অভাবে দু ডোজ ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে মোটামুটি নিশ্চিত করে বলা যায়, মডার্না ভ্যাকসিন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ রোধে ভালো ভূমিকা রাখবে। সুনির্দিস্টভাবে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ রোধে অন্যান্য ভ্যাকসিন যেমন স্পুৎনিক-৫, জনসন অ্যন্ড জনসন ও সিনোভ্যাক ভ্যাকসিন নিয়ে প্রকাশিত গবেষণা তথ্য খুবই সীমিত। যদিও ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি অনুযায়ী, এসব ভ্যাকসিন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ রোধে ও সংক্রমণজনিত গুরুতর রোগ বা মৃত্যু প্রতিরোধে সক্ষম।
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত দুই ডোজ ভ্যাকসিন সম্পূর্ণ করেছে জনসংখ্যার প্রায় শতকরা ২.৬ শতাংশ। যার বেশির ভাগই পেয়েছে কেভিশিল্ড ভ্যাকসিন। যা অ্যাস্ট্রজেনেকার ভ্যাকসিনের সমতুল্য। যদিও কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নিয়ে এখনো কোনো পিয়ার রিভিউড গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়নি। ভারত থেকে বেশ কিছু প্রি-প্রিন্ট প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি। এরকম একটি গবেষণায়, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ও তা থেকে গুরুতর রোগের বিপরীতে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা দেখানো হয়েছে যথাক্রমে ৬৩ ভাগ ও ৮২ ভাগ। যদিও এই গবেষণাপত্রটির পিয়ার রিভিউ এখনো শেষ হয়নি। সম্প্রতি প্রকাশিত এস্ট্রজেনেকার ভ্যাকসিনের ডাটার সাথে এর মিল রয়েছে। কাজেই এই তথ্য নির্ভরযোগ্য বলে ধরা যায়।
কোভিশিল্ড ছাড়াও এ সময়ে বাংলাদেশে বর্তমানে কোভ্যাক্সের আওতায় মডার্নার এম-আরএনএ ভ্যাকসিন আর সরকারের কেনা চীনের সিনোভ্যাক ভ্যাকসিন আসছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে মডার্নার ভ্যাকসিনের সুনির্দিস্ট ডাটা খুব সীমিত। যেসব দেশে এর ব্যাপক ব্যবহার হয়েছে, সেসব দেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সফলতা ও অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার হার সর্বোচ্চ। কাজেই গুণগত মান বিচারে মডার্না ভ্যাকসিন যত বেশি ব্যবহার করা যায় ততই ভালো। সিনোভ্যাক ভ্যাকসিন এ পর্যন্ত বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা সহ প্রায় ৩৭টি দেশে অনুমোদন পেয়েছে এবং প্রয়োগ হয়েছে ও হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের ডাটা অনুযায়ী কার্যকারিতা ছিল ৫০ ভাগ থেকে ৭৯ ভাগ। কিন্তু এটা দুঃখজনক যে গত ডিসেম্বর থেকে উদ্ভুত, করোনাভাইরাসের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার কোনো নির্ভরযোগ্য ডাটা নেই। সম্প্রতি থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় দুডোজ সিনোভ্যাক ভ্যাকসিন নেওয়া স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে গেছে। ফলে এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে কিছুটা আশংকা দেখা দিয়েছে। তাই এই দেশগুলো, তাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের অ্যাস্ট্রাজেনেকা বা মডার্না ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ রকম অনিশ্চয়তায়, বাংলাদেশে সিনোভ্যাক ভ্যাকসিনের উপর নির্ভরশীলতা যত কমানো যায় ততই ভালো। অন্তত যতক্ষণ নির্ভরযোগ্য গবেষণা তথ্য না পাওয়া যাচ্ছে।
অবস্থাদৃষ্টে, এটা মোটামুটি নিশ্চিত, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঘটানোর ক্ষমতা অন্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় বেশি। কিন্তু গুরুতর রোগ বা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ব্যাহত করার ক্ষমতা বিচারে এই ভ্যারিয়েন্ট অন্তত বেটা ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় কম শক্তিশালী। কিন্তু অতি সংক্রমণ ঘটানোর ক্ষমতার কারণে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টকে দমিয়ে নিজের পথ তৈরি করে নিচ্ছে। আর বেশি সংক্রমণ মানেই বেশি গুরুতর রোগ, বেশি হসপিটালাইজেশন, বেশি মৃত্যু আর আরো ভয়ঙ্কর নতুন ভ্যারিয়েন্ট সৃষ্টির ঝুঁকি। তাই যেকোনো মূল্যে, যেকোনো ভ্যাকসিনের সহায়তা নিয়ে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে থামাতে হবে।
সংক্রমণ রোধে সব ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সমান না হলেও বেশিরভাগ ভ্যাকসিন গুরুতর রোগ, হসপিটালাইজেশন ও মৃত্যু প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। যেসব দেশে জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য অংশ দু ডোজ ভ্যাকসিন পেয়ে গেছে, সেসব দেশে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ মূলত ভ্যাকসিন না নেওয়া মানুষের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। জনসংখ্যার অন্তত ৭০ ভাগ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসতে বাংলাদেশের সামনে এখন পাহাড় সমান চ্যালেঞ্জ। শুধু ভ্যাকসিনের সরবরাহই নয়, দৈনিক ভ্যাকসিন প্রদান করার ক্ষমতাও অনেক বাড়াতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনে সারাদেশ জুড়ে অস্থায়ী ক্যাম্প করে ভ্যাকসিন দিতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দিতে হবে। ভ্যাকসিন সংরক্ষণ ও পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হবে। সবশেষে জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও ভ্যাকসিন বিষয়ক তথ্যগুলো কম্পিউটারে সংরক্ষণ করতে হবে। যাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে, এটা নিশ্চিত করতে হবে, তারা দুডোজ সম্পূর্ণ করছে। আর ভাইরাসের সংক্রমণের গতির সাথে পাল্লা দিয়ে যেহেতু ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব নয়, স্বাস্থ্যবিধি আর সামাজিক দূরত্বের কথাটাও ভুলা যাবে না।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ওয়েল কর্নেল মেডিকেল কলেজ, দোহা, কাতার
তথ্যসূত্র-প্রথম আলো