জাককানইবি প্রতিনিধি:: সম্প্রতি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী লিয়োনাকে র্যাগিং এর অভিযোগে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের দুই শিক্ষার্থী তৈয়বা নুসরা মীম এবং সাইরা তাসনিম আনিকা কে এক শিক্ষাবর্ষের (২ সেমিস্টার)জন্য বহিষ্কার করা হয় এবং চারুকলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মৌমিতা আক্তার কে মুচলেকা নিয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে৷
গত ৬ ফেব্রুয়ারী (বৃহস্পতিবার) লিয়োনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের একটি বাসায় ম্যানার শিখানোর নামে শারিরীক ও মানসিক ভাবে টর্চার করা হয় বলে অভিযোগ উঠে। যার ফলশ্রুতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দুই শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করে এবং একজনকে সতর্ক করে দেয়।
কিন্তু বহিষ্কৃত দুই শিক্ষার্থীদের অভিযোগ তারা কোনো ধরনের র্যাগিং এর ঘটনা ঘটাননি। তারা ওই শিক্ষার্থীর উপর ম্যানার শিখানোর নামে কোনো ধরনের শারিরীক বা মানসিক নির্যাতন চালাননি বলে তাদের দাবি। তারা দাবি করে বলেন , লিয়োনা শারিরীক অসুস্থতার কারনে বাসার সিড়ি দিয়ে নামার সময় পড়ে গিয়ে অসুস্থ হোন। এর আগেও লিয়োনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে শারীরিক দুর্বলতার কারনে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জানান তারা ।
আরো জানা যায় যে, (৬-০২-২০২০) তারিখে যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেচ্ছে তা গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অফিসে বসে ৪ জনের পরিবার (মিম, আনিকা, মৌমিতা ও লিয়োনা) মিলে এক আপোশনামা করা হয় যেখানে সকলের স্বাক্ষর রয়েছে। কিন্তু এর পর ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুইজনকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আসে।
বহিষ্কারের পর শাইরা তাসনিম আনিকা নিজেদেরকে নির্দোষ দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক আবেগঘন স্টাটাস দেয়। নিম্নে তার স্টাটাসটি তুলে ধরা হলোঃ
আমি শাইরা তাসনিম আনিকা, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম ব্যাচ এর একজন শিক্ষার্থী এবং সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১ম ব্যাচ এর শিক্ষার্থী। আমাকে গতকাল ১৩/০২/২০২০ তারিখে ফারহানা আমবেরীন লিয়োনা কে র্যাগিং এর অপরাধে ১ বছর এর জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল উপাচার্য মহোদয় এর কার্যালয়ে আমাদের ৪জন (আমরা তিনজন এবং লিয়োনা) এর পরিবার ও আরো অনেকের উপস্থিতি তে সকলের সম্মতিক্রমে তৈরি করা হয়।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যেখানে আমাদের নিজেদের মধ্যেই ব্যাপারটি মিটমাট হয়ে গেছে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এরকম একটি সিদ্ধান্তের মানে কি দাঁড়ায়? আমাদের সাথে কি তাহলে বিচার করা হলো নাকি অবিচার করা হলো?
আমাদেরকে সতর্ক না করে এরকম একটি আইনের আওতাভুক্ত করা টা কতটুকু যৌক্তিক সেটা আমি জানিনা। যেখানে লিয়োনা নিজের মুখে স্বীকার করেছে যে তার সাথে কোনো ধরনের শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন হয়নি সেখানে কিছু সাংবাদিক এর ভুল নিউজের জন্য ব্যাপারটা এতটা জলঘোলা করা হয়েছে। এখন এই ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে যদি আমাদের পরিবারের বা আমাদের কোনো ধরনের ক্ষতি হয়ে যায় এর দায়ভার ও নিশ্চয়ই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সাংবাদিকেরা (যারা এসব নিয়ে উত্তাল) নিবেন বলে আশা করছি।
শেষে একটা কথাই বলবো, দয়া করে এরকম কোনো সিদ্ধান্ত নিবেন না যাতে করে আপনাদের মধ্যেই এই প্রশ্নটি থেকে যায় যে, মেয়ে দুটির সাথে কোনো অবিচার করলাম না তো ?
আপনারা যেমন আমাদের শাস্তি দিয়েছেন সেরকম আরো একজনও রয়েছেন, তিনি সত্য মিথ্যার সব জেনেই একদিন সবার শাস্তি নিশ্চিত করবেন। সেদিন হয়তো আমরা বা আপনারা বুঝতে পারবো আজ আমাদের বিচার হয়েছিলো নাকি অবিচার।
ধন্যবাদ।
তার এই স্টাটাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ফিরোজ আহম্মেদ নামের এক শিক্ষার্থী লিখেন “পারিবারিক ভাবে বিষয়টি মিমাংসা হওয়ার পরো করা কেন এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো??
প্রশাসন যেখানে বলছে র্যাগিংয়ে জড়িত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকলে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে সেখানে একটি মেয়েকে ঠিকি মুচলেকা দেওয়া হলো কেন??
আর হলুদ সাংবাদিকতা বাদ দিন। যে সাংবাদিকতায় অন্যের জীবন নষ্ট হয় সেটা করে কি লাভ আছে?? শেষে একটি কথাই বলব মাননীয় ভিসি মহোদয় স্যারের কাছে আপনি এদের ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখেন আবার যাতে এরা সবাই ক্লাসে ফিরতে পারে।”
রিয়াজুল রাকিব নামের একজন লিখেছেন “আপোস মিমাংসার পরেও প্রশাসনের এরকম সিদ্ধান্ত সত্যিই আক্রমনাত্মক, যেখানে মিমাংসা হয়ে গেছে সেখানে প্রশাসনের এরকম একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আরো ২বার ভাবা উচিত ছিলো! প্রশাসনের মন মতো সব হবেনা। উপরে একজন আছেন, উনিই বিচার করবেন।”
শাহীন খান নামের একজন লিখেছেন “প্রশাসনের এরকম একটি সিদ্ধান্ত সত্যি হতাশাজনক, যেখানে পারিবারিক ভাবেও বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে সেক্ষেত্রে সতর্ক করে দিলেও হত। আর বিচার যখন হলো তখন একজন কি করে মুচলেকা পায়? হলুদ সাংবাদিকতায় বিশ্বাস করে একজন ছাত্রীর জীবন নষ্ট করা কতটা যৌক্তিক? তাই মাননীয় ভিসি স্যারের কাছে আমাদের একান্তই অনুরোধ যে বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা পূর্বক তাদের শাস্তি মওকুফ করবেন এবং তারা যেন আবার ক্লাসে ফিরতে পারে।”