আত্মহত্যা কোন সমাধান নয়, পারিবারিক বন্ধনই এর প্রতিষেধক

প্রতিকি আত্মহত্যা

জীবনে সুখকে উপলব্ধি করতে হলে দুঃখকে গ্রহণ করতেই হবে। আপনার চারপাশের সবাই হাসিখুশি হয়ে চললেও প্রত্যেকের জীবনেই রয়েছে নিজস্ব জটিলতা। অনেকেরই মনে হয়, তার ব্যতিত আর কারো জীবন এতো কঠিন নয়। কিন্তু সেটা সত্য না, জীবনের পথ কঠিন, আর এই কঠিন পথ পাড়ি দিতেই হবে। এটি আপনার এবং আপনার চারপাশের সকল মানুষের জন্যই প্রযোজ্য। কিন্তু সকলে মানসিকভাবে এই সত্যটাকে গ্রহণ করতে পারে না, বেছে নেয় আত্মহননের মতো পথ, যা আদৌ কোন সমাধানের পথ নয়।

সারা পৃথিবীতে আত্মহত্যা প্রবণতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ হল আত্মহত্যা। এর চেয়েও আশঙ্কাজনক তথ্য হল, আগামী ২০ বছরের মধ্যে এটিই মৃত্যুর এক নম্বর কারণে পরিণত হতে পারে। জরিপে দেখা গেছে, পনেরো থেকে ঊনত্রিশ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা মারাত্মকভাবে কাজ করে।

অন্য একটি জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে আত্মহত্যা প্রবণতা এক প্রকার ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। জরিপ মতে, সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালের ছেলেমেয়েরা জীবনের নানা বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পেতে আত্মহত্যার দিকে ঝুঁকছে। প্রেমে ব্যর্থতা, সকলের সামনে দুর্বলতা লুকানো, বাবা মায়ের সাথে সময় কাটানোর অভাবে, বন্ধুর অভাবে, বিষন্নতা, হতাশা, বাবা মায়ের বিচ্ছেদ, ভোগবাদী সমাজ, মানসিকতার সমস্যা, অতিরিক্ত প্রতিযোগী মনোভাব , আরও একটি মারাত্ব্যক বিষয় পারিবারিক সমস্যা সেটা বাবা মার সাথে ও হতে পার স্ত্রীর সাথেও হতে পারে  ইত্যাদি কারণে আত্মহত্যার প্রবনতা দিন দিন বেড়ে চলেছে বলে জানা যায়।এটা এখন শুধু দেশে নয় তা দেশের বাইরেও বিদ্ধ্যমান।যারা দেশের বাইরে কাজ করেন তাদের মধ্যে এর প্রবনতা কঠিন ভাবে প্রকোপ হয়।সংসারের চাহিদা পূরন ,অবমূল্যায়ন,অবহেলা , অবাধ্যতা,মানসিক চাপ নানা কারনে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়।

তরুন সমাজকে আত্মহত্যার মতো ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখতে পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হওয়া অত্যন্ত জরুরী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সন্তানদের বাবামায়ের উদ্দেশ্যে পরামর্শে জানান, শিশুকে লালনপালনের ক্ষেত্রে বাবা মায়েদের সচেতনতার সাথে কিছু বিষয়ের উপর খেয়াল রাখতে হবে। সন্তানকে ভালো কোন কাজের জন্য পুরস্কৃত করুন। সন্তানের কাজ ভাগ করে দিন, এতে সে দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হবে।

মনে রাখা উচিত, আদর ও শাসন, অতিরঞ্জিত কোনটাই ভালো নয়। সন্তানের সব চাহিদা পূরন করবেন ঠিকই কিন্তু তার সব চাওয়া মেনে নেয়া ঠিক নয়। হাতের কাছে সব পেয়ে গেলে আপনার শিশুর ব্যর্থতা মেনে নেয়ার মানসিকতা গড়ে উঠবে না। বয়সের আগেই বাচ্চাদের হাতে ডিভাইস তুলে দেয়া ঠিক না। খেলনা বা দামি উপহারের বদলে শত ব্যস্ততার মাঝেও সন্তানকে সময় দিন বেশি বেশি। সময়ের সাথে সাথে বাস্তবতা শেখান। দেখতে হবে আপনার কিশোর সন্তানটি ঠিক ভাবে সবার সাথে মেলামেশা করছে কিনা, নাকি সে নিজেকে বেশিরভাগ সময় ঘরে আবদ্ধ করে রাখছে।

তাছাড়া তার স্কুল বা কলেজের ফলাফলের উপরও নজর রাখুন। তাহলেই বুঝতে পারবেন আপনার সন্তানটি সঠিক ভাবে বেড়ে উঠছে কিনা। সুস্থ থাকুক আপনার সন্তান, নিরাপদ হোক তাদের ভবিষ্যৎ।