আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩ তম জন্মবার্ষিকী

আজ ২৫ মে কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে ময়মনসিংহের ত্রিশালে কবির বাল্য বিদ্যাপীঠ মাঠে বর্তমান সরকারি নজরুল একাডেমীর নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠান আর মাঠে মেলা যেন আনন্দ জোয়ার বইছে।প্রতি বারের ন্যয় সাথে চলবে নজরুল মেলা। ৩ দিন ব্যাপী  চলবে নানা আয়োজন।

কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি যিনি বিশেষত দেশজুড়ে বিদ্রোহী কবি হিসাবে পরিচিত। তিনি বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত কবি, সংগীতজ্ঞ ও দার্শনিক। বিখ্যাত কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখাগুলি সেইসময় বিপ্লবের জন্য কাজে এসেছিল। এবং তাঁর বিপ্লবী প্রয়াস তাঁকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হতে সহায়তা করেছিল।  তিনি ফ্যাসিবাদ এবং যে কোনও ধরণের নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন এবং দ্রুত ভারতীয় উপমহাদেশে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।

আজকে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর শৈশব থেকে কর্মজীবনের কথা আপনাদের কাছে শেয়ার করে নেব।

১৮৯৯ সালের ২৪ মে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তার পিতার ছিলেন কাজী ফকির আহমদ এবং মা ছিলেন জাহেদা খাতুন।তার পিতা ছিলেন সেখানকার মসজিদ ইমাম এবং মা ছিলেন গৃহবধূ।

পিতার মৃত্যুর পরে তাঁর প্রথম জীবনে তিনি যে কষ্টের মুখোমুখি হয়েছিল তার কারণে গ্রামবাসীরা তাঁকে ‘দুখু মিয়া’ ডাকনাম । মাত্র আট বছর বয়সে নজরুলের বাবা মারা যান। ছন্নছাড়া হয়ে যায় তাঁর শৈশব। ছোট থেকেই কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছিল তাঁকে। কখনও লেটো দলে গান গেয়েছেন, কখনও মসজিদে কাজ করেছেন। ছোট থেকেই তাঁর জীবনে নেমে এসেছিল দুঃখ-দুর্দশা। তবু তিনি হেরে যাননি। সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে নিয়েছিলেন। জীবন যুদ্ধে অপরাহত থেকেছেন ।

১৯১০ সালে তিনি  রানীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ স্কুল এবং পরে  মাথরুন উচ্চ ইংরেজি স্কুলে পড়াশোনা করেন। কিন্তু শীঘ্রই তিনি আর্থিক সঙ্কটের কারণে পড়াশোনা ত্যাগ করেন। ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনো করার পর তিনি আবার কাজে যোগ দেন এবং রান্নার কাজ শুরু করেন। পরে আসানসোলের বেকারি ও চায়ের দোকানে চাকরি নেন তিনি। চায়ের দোকানে কাজ করার সময় তার পরিচয় হয় আসানসোলের দারোগা রফিজউল্লাহ’র সাথে। দোকানে কাজ করার পাশাপাশি নজরুল কবিতা এবং ছড়া রচনা করতেন তা দেখে রফিজউল্লাহ মুগ্ধ হন। এবং  ১৯১৪ সালে তিনি কবি নজরুল ইসলামকে ময়মনসিংহের ত্রিশালের কাজীশিমলায় নিয়ে আসেন। এবং দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি করে দেন।এবং লজিং হিসাবে ত্রিশালের নামাপাড়ায় ( বর্তমান নজরুল যাদুঘর ) বিচুতীয়া ব্যপারী বাড়ীতে ছিলেন। পরবর্তীকালে ১৯১৫ সাল থেকে নজরুল আবার রানীগঞ্জে সিয়ারসোল রাজ স্কুলে চলে যান এবং সেখানে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হন। সেখানে  দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তিনি বাংলা, সংস্কৃত, আরবি, ফারসি সাহিত্য এবং হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীত অধ্যয়ন করেন।

১৯১৭ সালে তিনি সেনা হিসাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং তিন বছর ব্যাটালিয়ন কোয়ার্টার মাস্টার পদে উন্নীত হন। ১৯১৯ সালে সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় তার “বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী” সওগাত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এছাড়াও সেইসময় তিনি আরও গল্প লিখেছিলেন হেনা, ব্যথার দান, মেহের নেগার, ঘুমের ঘোরে”।

১৯২০ সালে কবি কাজী নজরুল ইসলাম সেনাবাহিনী কর্ম ত্যাগ করেন এবং কলকাতায় ফিরে কলেজ স্ট্রীটে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতির যোগদান করেন। যেখানে তিনি তার প্রথম কবিতা লেখেন বাঁধনহারা। ১৯২২ সালে তিনি বিদ্রোহী শিরোনাম কবিতা লিখেছিলেন যা “বিজলি” ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল। কবিতাটি এক বিদ্রোহী সংবেদনশীলতার বর্ণনা দিয়েছে এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির লোকের কাছ থেকে প্রশংসা পেয়েছিল।

১৯২১ সালে অক্টোবর মাসে বোলপুরের শান্তিনিকেতনে কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেখা হয় এবং তখন থেকে প্রায় বিশ বছর এই দুই কবির মধ্যে যোগাযোগ অক্ষুণ্ণ থাকে। তারা দুজনে একে অপরকে গভীর শ্রদ্ধা করতেন এবং ভালোবাসতেন।

১৯২২ সালে তার রাজনৈতিক কবিতা “আনন্দময়ীর আগমনে” ধূমকেতু পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এর ফলে ম্যাগাজিনের অফিসে পুলিশি অভিযানের সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ১৯২৩ সালে ডিসেম্বর মাসে মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কারাবন্দী থাকাকালীন প্রচুর সংখ্যক কবিতা ও গান রচনা করেছিলেন।

অবশেষে, তিনি “খিলাফত” আন্দোলন এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সমালোচক হয়েছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা না নেওয়ার জন্য। তিনি জনগণকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিলেন এবং শ্রমিক প্রজা স্বরাজ দল সংগঠিত করেছিলেন।

১৯২৬ সাল থেকে তিনি সমাজের দুর্বল অংশের জন্য কবিতা এবং গান রচনা করেছিলেন। পরবর্তীকালে তার রচনাগুলি বিদ্রোহ থেকে ধর্মে রূপান্তরিত হয়েছিল। ১৯৩৩ সালে তিনি ‘আধুনিক বিশ্ব সাহিত্য’ শীর্ষক রচনা সংকলন প্রকাশ করেছিলেন, যার বিভিন্ন থিম এবং শৈলী ছিল। তিনি ১০ খণ্ডে শাস্ত্রীয় রাগ, কীর্তন এবং দেশাত্মবোধক গানের উপর ভিত্তি করে ৮০০ টি গান লিখেছিলেন।