বিশেষ প্রতিনিধি:: উদ্বোধনের ছয় দিন যেতে না যেতে বিমানের ড্রিমলাইনার আকাশবীনার র্যাফট (দরজার অংশ বিশেষ) ভেঙ্গে গেছে। অভিযোগ মঙ্গলবার সকালে অদক্ষ প্রকৌশলী দিয়ে কাজ করানোর ফলে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ঢাকা সিঙ্গাপুর ফ্লাইট দেড় ঘন্টা বিলম্বের শিকার হয়। তোলপাড় করা এ ঘটনায় বিমানের প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানকে তাৎক্ষনিক সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিমানের প্রকৌশল শাখার পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান বলেছেন, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে এই ঘটনার সঙ্গে যার জড়িত থাকার প্রমান পাওয়া যায় তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদ জানান, এতে যে বা যারাই দায়ি হবে তাদেরকে বাড়ি পাঠানো হবে। কাউকেই ছাড় দেয়া হবেনা। তিনি বলেন, ভেঙ্গে যাওয়া দরজার অংশটি ইতিমধ্যে লন্ডনে পাওয়া গেছে। তিন দিনের মধ্যে সেটি এনে সংযুক্ত করা হবে।
প্রকৌশল শাখার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় ড্রিমলাইনার দিয়ে সিঙ্গাপুর ফ্লাইট করার প্রস্তুতি চলছিল। এটি বোর্র্ডিং ব্রিজে সংয্ক্তু অবস্থায় বিএফসিসি থেকে যাত্রীদের জন্য ড্রিমলাইনারে খাবার তোলা হচিছল। এ সময় প্রকৌশল বিভাগের স্টাফ মোস্তাফিজুর রহমান হঠাৎ সজোরে দরজা অন করতে গিয়ে অন্য এ বাটনে চাপ পড়ে। এতে খুলে পড়ে রাফট নামে দরজার একটি অংশ। এতে মোস্তাফিজসহ উপস্থিত অন্যরা হতবম্ভ হয়ে খেয় হারিয়ে ফেলেন। তাৎক্ষনিক তারা এই ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য ম্যানুয়ালি জোড়াতালি দিয়ে লাগানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হওয়ার পর বিষয়টি মুহুর্তেই রটে যায়। এরপর অন্যান্য প্রকৌশলীরা গিয়ে খুলে পড়া রাফট সংগ্রহ করে নিয়ে যায় প্রকৌশল বিভাগে। তারা সিঙ্গাপুরে ফ্লাইট বিলম্বে হলেও অপারেট করার সিদ্বান্ত দেন। প্রকৌশল বিভাগ নিশ্চিত করে-রাফট ছাড়াই ড্রিমলাইনার দিয়ে ফ্লাইট অপারেট করা সম্ভব হবে। তারা বলেছেন, দেখতে কিছুটা দৃষ্টিকটু লাগলেও নিরাপত্তা হুমকি নেই।
বিমানের একজন কর্মকর্তা জানান-এ ঘটনায় নির্দিষ্ট সময়ের দেড় ঘন্টা পর সিঙ্গাপুর ফ্লাইট ঢাকা ছেড়ে যায়। ওই ফ্লাইটের যাত্রী মামুন বলেন, অনেক শখ করে শুধু ড্রিমলাইনারে চড়ার জন্য সিঙ্গাপুর যাচিছলাম। কিন্তু এটা কল্পনাও করতে পারিনি এমন একটা নতুন ফ্লাইটের দরজা ভাঙ্গে যাবার দৃশ্য দেখে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ জানান, ১২৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে যে উড়োজাহাজটি ক্রয় করা হয়েছে সেটি থেকে এভাবে দরজার র্যাফট ভেঙ্গে পড়ার ঘটনা রহস্যজনক। বিষয়টি নিয়ে নিবিড় তদন্ত হওয়া দরকার। এর সঙ্গে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কোন দুর্বলতা আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা দরকার। একই সঙ্গে বিমানের প্রকৌশল শাখার পরিচালকসহ শীর্ষ ব্যক্তি যারা একাধিকবার উড়োজাহাজটি দেখে শুনে দেশে এনেছেন তাদেরও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। ওই কর্মকর্তা বলেন, বিমান কতৃপক্ষ ড্রীমলাইনারের অনেক স্পেয়ার্স পার্টস বিভিন্ন কোম্পানীর কাছ থেকে কিনে এনে বোয়িং কোম্পানীকে সংযোজন করতে দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে এসব স্পেয়ার্স পার্টস ক্রয় নিয়ে কোন অনিয়ম-দুনীতি হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখতে হবে। তিনি এই ঘটনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। কারণ এই ড্রিমলাইনারটি প্রধানমন্ত্রীর খুবই পছন্দের একটি উড়োজাহাজ ছিল।
এদিকে বিমানের জেনারেল ম্যানেজার শাকিল মেরাজ বলেন, র্যাফট ভেঙ্গে গেলেও উড়োজাহাজটি দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনায় কোন বিঘ্ন ঘটেনি। মঙ্গলবারও যাত্রী নিয়ে ফ্লাইটটি ঢাকা ত্যাগ করেছে। তবে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় চৌধুরী বলেন, এধরনের র্যাফট বিহীন এয়ারক্রাফট দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা চরম ঝুকিপুর্ণ। কারণ এতে যাত্রীরা আতঙ্গে থাকবেন। তিনি বলেন, ফ্লাইট চললেও র্যাফট বিহীন এই এয়ারক্রাফট চালাতে হলে প্রতি ফ্লাইটে কমপক্ষে ৫৫ জন যাত্রী কম নিতে হবে। তথ্যসূত্র: এভিয়েশন নিউজ।