শামিম ইশতিয়াক, ময়মনসিংহঃ জীবনযাপন আর জীবিকার প্রয়োজনে সামাজিক জীব মানুষকে বের হতে হয় ঘরের বাইরে, যেতে হয় রাস্তা ঘাট মাঠ আর নির্জন স্থানে, থাকেনা মানব জীবনের নিরাপত্তা হিংস্র জীবের আক্রমণের ভয় যেনো লেগেই থাকে পিছুপিছু, হিংস্র জীবের বাইরেও প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়া মানুষের জন্য আতংক হয়ে উঠে আরেক শ্রেণী তারা হলো সামাজিক জীব মানুষ শ্রেণীর বিবেকহীন শ্রেণী ছিনতাইকারী।
প্রাচীনকালে কিংবা কিছুকাল আগেও ডাকাত কথাটা ছিলো প্রচলিত, গ্রামে গঞ্জে মানুষের আতংক ছিলো ডাকাত দলেরা, যদিও ক্রমেই এই ডাকাত দল এখন বিলুপ্তপ্রায়, দেখা মিলেনা তাদের কিন্তু তাদের প্রেতাত্মা হয়ে যেনো নতুন ভাবে জন্ম নিয়েছে এক ছিনতাইবাজ নামে শ্রেনীর ডাকাত দল।
এই দলের জন্য এখন শহরের মানুষ ভীত হয়ে থাকে, এদের ভয়ে একা চলা ফেরা করতে বুক কেপে উঠে সাহসী ব্যাক্তিটারো।
ময়মনসিংহে শহরেও ইদানিং বেড়ে গেছে এই শ্রেণীর উপদ্রব, ক্রমেই এরা রূপ নিচ্ছে ভয়ংকর হয়ে, নির্জন রাস্তা পথিক, একা ব্যাক্তি আর অটো রিক্সার নিরিহ যাত্রীরাই এদের টার্গেট।
বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারীর অনেকগুলো চক্র, এদের হামলার মুখে সম্পদ তো যাচ্ছেই, ঘটছে প্রাণহানির মতো ঘটনাও, আগে রাতে ছিনতাই হলেও এখন দিনের বেলায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এরা।
নগরীর ব্রিজ এলাকা, চরপাড়া, মাসকান্দা, ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড, স্টেশন, জুবলিঘাট, কাচারি ঘাট, আকুয়া, সানকিপাড়া, জয়নুল আবেদিন পার্ক, এলাকায় ঘটছে নিয়মিত ছিনতাই, নগরীর অনেক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা শিকার হচ্ছে ছিনতাইয়ের।
ছিনতাইকারী চক্র নির্জন রাস্তা, কিংবা একাকি চলাচল করা ব্যাক্তি, আর সন্ধার পর বিভিন্ন স্থানের ব্যাক্তিকে টার্গেট করে বিভিন্ন অস্ত্র ঠেকিয়ে তাদের থেকে হাতিয়ে নেয় টাকা পয়সা মোবাইল সহ মূল্যবান অনেক সম্পদ ।
বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আসা সংবাদের ভিত্তিমতে, শহরের মহাসড়কসহ অন্তত অর্ধশত স্পটে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে নিয়মিত, যার সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্থানীয় পত্রিকা সহ জাতীয় গণমাধ্যমে কিন্তু হচ্ছেনা এর কোন প্রতিকার, বরং বেড়ে চলছে ছিনতাইকারীদের এই অত্যাচার।
ছিনতাইকারীরা এখন ছিনতাইয়ে নিচ্ছে বিশেষ কৌশল, তাদের টার্গেটে পরিণত হচ্ছে মোটরসাইকেল চালক সহ শহরের বিভিন্ন রিক্সা চালক,অটো চালকেরা। রাস্তায় আচমকা উদয় হওয়া আর এই ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ায় এখন সর্বদা আতঙ্কিত থাকে শহরের সাধারণ মানুষেরা।
নেশাগ্রস্থ, বখাটে শ্রেণীর অভাবগ্রস্ত যুবক কিশোররা জড়িয়ে যাচ্ছে ছিনতাইকারী চক্রে, এদের পরিচালনা করছে শহরের অনেক বড় বড় মাথারা, যাদের ছত্রছায়ায় ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে এদের অগ্রগতি।
নগরীতে ছিনতাইকারীদের উপদ্রব থেকে প্রতিকার পাওয়া এবং ছিনতাইকারীদের প্রতিহত করায় করণীয় জানতে চাওয়া হলে ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সহঃ সাধারণ সম্পাদক কাজী আজাদ জাহান শামীম “ত্রিশাল প্রতিদিন” কে বলেন “শহরে এখন আর আগের মত ছিনতাইয়ের উপদ্রব নেই তবে এখন যারা এসব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে তারা উঠতি মাস্তান ও নেশাগ্রস্ত কিশোর ও যুবক, পুলিশ এদের নিয়ন্ত্রণ করছে, এবং পুলিশ জানে যে কে বা কারা এর সাথে জড়িত, পুলিশ সচেষ্ট হলেই এর প্রতিকার সম্ভব” ।
শহরে ছিনতাই প্রতিরোধে পুলিশের অগ্রণী ভূমিকা আগের থেকেও বেশী তবুও কমছেনা এদের উপদ্রব, এই ব্যাপারে পুলিশের করণীয় বা পরবর্তী পদক্ষেপ কি জানতে চাওয়া হলে ময়মনসিংহ সদর পুলিশ ইনস্পেকটর (তদন্ত) মুনসুর আহমেদ “ত্রিশাল প্রতিদিন” কে বলেন – ” কারা এই ছিনতাই কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে বা কারা এর সাথে জড়িত আমরা তার তালিকা তৈরি করতেছি এবং তাদের বিরুদ্ধে একশনে যাচ্ছি, আশা করি ময়মনসিংহ শহর পুলিশের সহযোগিতায় ছিনতাই মুক্ত হবে”।
শহরের বাসিন্দাদের রোজ বের হতে হয় বাইরে, অফিস আদালত ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠান কিংবা স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় যাওয়া মানুষগুলো আতংকিত থাকে ছিনতাইয়ের ভয়ে, সাথে নিয়ে ভয় পায় টাকা, দামি মোবাইল, ঘড়ি কিংবা অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ যেনো অজানা আতংক নিয়ে বসবাস করে এই ব্রম্মপুত্রের তীরের এই চমৎকার শহরে।
নগরীর প্রতিটি মানুষ কামনা করে ছিনতাই যেনো অবিলম্বে বন্ধ হয়, তার জন্য প্রশাসনের পানে সকলে চেয়ে আছে তাদের যথাযথ প্রদক্ষেপে ছিনতাই নির্মুলের নতুন মাধ্যমে একটি নিরাপদ ময়মনসিংহ শহর দেখার।