ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) পুরান ঢাকার বকশিবাজারে ঢাকার অস্থায়ী পাঁচ নম্বর আদালতে উপস্থিত হয়ে আত্মসমর্পণ করে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এই শঙ্কা প্রকাশ করেন।
ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার খালেদার পক্ষে আত্মপক্ষ সমর্থনের আবেদন করলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন। পরে খালেদা জিয়া তার বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সম্প্রতি বলেছেন, বিচারবিভাগের হাত পা বাঁধা। তিনি আরও বলেছেন, বিচারকরা স্বাধীন নন। এসব কারণে আমাদের বিষয়ে ন্যায়বিচার হবে কিনা তা নিয়ে জনমনে ব্যাপক সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এমন ধারণা প্রবল যে, দেশে ন্যায়বিচারের উপযোগী সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ নেই। বিচার বিভাগ স্বাধীন ও স্বাভাবিকভাবে বিচারকাজ পরিচালনা করতে পারছে না।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমিসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, হয়রানিমূলক মামলা করা হয়েছে। এই মামলার সব অভিযোগ কাল্পনিক ও বানোয়াট। সব অভিযোগ স্ববিরোধী বক্তব্যে ভরপুর। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে অর্থায়ন পরিচালনা বা অন্য কোনও কিছুর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আমি জড়িত ছিলাম না। এখনও নেই।’
তিনি বলেন, ‘দুদকের আইনগত কর্তৃত্ব ও এখতিয়ারের বাইরে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভিত্তিহীন অভিযোগে দায়ের করা এই মামলায় বিচারের নামে দীর্ঘদিন ধরে হয়রানির শিকার হচ্ছি। আমার স্বাভাবিক জীবনযাপন বিঘ্নিত হচ্ছে। রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। দেশ, জাতি ও জনগণের জন্য তাদের স্বার্থ ও কল্যাণে নিয়োজিত আমার প্রয়াস ও পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমন সব মিথ্যা মামলার কারণে আমাদের দলের নেতা-কর্মী, শুভানুধ্যায়ী ও জনগণের একাংশকে থাকতে হচ্ছে গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে।
খালেদা আরও বলেন, ‘শাসক মহলের নানামুখী প্রভাব বিস্তারের কারণে, বিচারকগণ আইন অনু্যায়ী ও বিবেকশাসিত হয়ে বিচার করতে পারছেন না। রায় ও নির্দেশের ক্ষেত্রে বিচারকদের নির্ভর করতে হচ্ছে সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর, ক্ষমতাসীনরা কিসে তুষ্ট এবং কিসে রুষ্ট হবেন সেকথা মাথায় রেখে। এসব কারণে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ হয়। তাই এই বিচারকদের ভয় থাকা স্বাভাবিক।’
আদালতকে তিনি বলেন, ‘একটি ছোট্ট উদাহরণের কথা উল্লেখ করতে চাই। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে অর্থপাচারের একটি বানোয়াট অভিযোগে তার অনুপস্থিতিতে একজন বিচারক বেকসুর খালাস দিয়েছিলেন। এই অপরাধে ওই বিচারকের বিরুদ্ধে এমন তৎপরতা শুরু করে যে, আত্মরক্ষার জন্য সপরিবারে তাকে দেশ ত্যাগ করতে হয়েছে। এই একটিমাত্র উদাহরণই ব্যক্তি হিসেবে বিচারকদের নিজস্ব নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এমন সব ঘটনা সরবে ও নীরবে অহরহই ঘটছে। এসব কারণে দেশে ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব কারণে সর্বোচ্চ আদালতের সঙ্গে শাসকমহলের বিরোধ প্রায় প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে।’