ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় ৪০ সিআরপিএফ জওয়ান নিহতের ঘটনায় পাকিস্তানের কোনো ভূমিকা নেই বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। দুই দেশের মাঝে চলমান উত্তেজনার মাঝে মঙ্গলবার তিনি হুমকির সুরে বলেছেন, ‘ভারত আক্রমণ চালালে পাকিস্তান পাল্টা প্রতিশোধ নেবে। যুদ্ধ শুরু করা সহজ, কিন্তু শেষ করা কঠিন। যুদ্ধ শুরু হলে এর নিয়ন্ত্রণ আর মানুষের হাতে থাকে না।’
জাতির উদ্দেশে টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে পাকিস্তানের এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলওয়ামা হামলায় পাকিস্তানের হাত রয়েছে বলে ভারত যে অভিযোগ করেছে, আমি এর জবাব সঠিক সময়েই দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের দেশে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের গুরুত্বপূর্ণ সফর ছিল।
তিনি বলেন, আমরা বিনিয়োগ সম্মেলন করেছি, যেটা নিয়ে আমাদের দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি চলছিল। এমন পরিস্থিতিতে আমি প্রতিক্রিয়া জানাব না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কারণ তখন যুবরাজের সফর থেকে আমাদের মনোযোগ অন্যদিকে সরে যেত।
ভারতের আসন্ন নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে ‘পাকিস্তান আক্রমণ’র কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এটা যদি আসলেই হয়, তাহলে একটা বিষয় পরিষ্কার করে লিখে রাখুন – পাকিস্তান প্রতিশোধ নেয়ার চিন্তা করবে না, প্রতিশোধ নেবে।
‘তখন পাকিস্তানের সামনে আর কোনো বিকল্প উপায় থাকবে না।’ কাশ্মীরে জয়েশ-ই-মোহাম্মদ জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রাণঘাতী হামলার পর এই প্রথম এমন কড়া প্রতিক্রিয়া জানালেন পাকিস্তানের এই প্রধানমন্ত্রী। পুলওয়ামা হামলার পর পাকিস্তানভিত্তিক এই জঙ্গিগোষ্ঠীর প্রধান মাসুদ আজহারকে ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাসী’ হিসেবে ঘোষণা দিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ভারত।
পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করতে পদক্ষেপ নিতেও শুরু করেছে নয়াদিল্লি। এর অংশ হিসেবে পাকিস্তানকে দেয়া সর্বাধিক সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের (এমএফএন) তকমা বাতিল করেছে ভারত। ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানকে এই সুবিধা দিয়েছিল নয়াদিল্লি।
ইমরান খান বলেছেন, ‘পাকিস্তান স্থিতিশীলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কেন আমরা এ ধরনের কাজ (হামলা) করবো। যদি কার্যকর কোনো গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া যায়, তাহলে আমি আশ্বস্ত করছি যে, সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েই পাকিস্তান ব্যবস্থা নেবে।’
ভারতে হামলা চালানোর জন্য পাকিস্তানের মাটি ব্যবহার হচ্ছে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গত বছরের আগস্টে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়া সাবেক এই ক্রিকেট তারকা। ‘কীভাবে একটি দেশের নেতৃত্ব এভাবে বিচারক, জুরি এবং দণ্ড নির্বাহী হতে পারে…এটা কোন ধরনের বিচার’- প্রশ্ন ইমরানের।
তিনি বলেন, যুদ্ধ শুরু করা সহজ, কিন্তু শেষ করা কঠিন। অতীতে বাস করতে চাইলে আমি ভারতকে বলবো, এটা আমাদের কাজ নয় যে, এখান থেকে কেউ ভারতে গিয়ে অথবা এখানে এসেও কেউ সন্ত্রাসবাদ করতে পারবে না।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উদ্দেশ্য করে ইমরান খান বলেন, প্রথমত আপনি পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করছেন। কিন্তু সেখানে কোনো প্রমাণ নেই। আপনি কখনই চিন্তা করেন না যে, এটা পাকিস্তানের জন্য কেমন।
দ্বিতীয়ত, আপনি নির্বাচনী বছরের মুখোমুখি হয়েছেন। এবং আমরা বিশ্বাস করি যে, নির্বাচনের সময় (আপনি মনে করেন) পাকিস্তানকে একটি শিক্ষা দিতে পারলে সেটা আপনার জন্য বড় ধরনের সমর্থন বয়ে আনবে। আপনি যদি এটা মনে করেন যে, পাকিস্তানের ভেতরে যে কোনো ধরনের হামলা চালাতে পারবেন, তখন পাকিস্তান শুধুমাত্র প্রতিশোধ নেয়ার চিন্তা করবে না। আমরা প্রতিশোধ নেব।
তিনি বলেন, এর পরের ঘটনা কী হবে? আমরা সবাই জানি যে একটি যুদ্ধ শুরু করাটা সহজ। এটা মানুষের হাতেই শুরু হয়। কিন্তু এর সমাপ্তি আমাদের হাতে থাকবে না। কোথায় গিয়ে শেষ হবে আল্লাহ ভালো জানে। সেজন্য আমি আশা করছি আরো ভালো উপলব্ধি হবে ভারতের। শুধুমাত্র আলোচনা এবং কথার মাধ্যমেই এই সঙ্কটের সমাধান সম্ভব।মোড়ল নিউজ