বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের জন্য এখন প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বড় দুই রাজনৈতিক জোট। তবে অনেক আসনেই এসব দলের যেমন একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছে, তেমনি জোটের শরীক নেতারাও প্রার্থী হতে চান। দুই জোটের ক্ষেত্রে আসন বণ্টনের বিষয়টি কতটা চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে?
রবিবার থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিতে শুরু করেছে বিএনপি, পাশাপাশি তাদের দুইটি জোটের শরীকদের সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে আলোচনাও চলছে।
এই জোটের শরীকরা একশোর বেশি আসন চাইছে। তবে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আরো পরে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে চায় বিএনপি, বলছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
তিনি বলছেন, আমরা প্রার্থী চূড়ান্ত করবো আরো পরে। কারণ আমাদের জোটের দলগুলো আছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। আরপিও অনুযায়ী মনোনয়ন প্রত্যাহারের চূড়ান্ত দিনে হয়তো মনোনয়ন দিতে হবে।
পুরো ব্যাপারটা চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করলেও, খুব কঠিন হবে না বলেই তার মত।
কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলছেন, ” এর আগেও জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করেছি। আর একটা বিষয়ে আমরা সকলেই একমত, যে আসলে যে প্রার্থী গ্রহণযোগ্য, যার জেতার সম্ভাবনা বেশি, তিনি যে দলেরই হোন, তাকেই আমরা মনোনয়ন দেয়ার চেষ্টা করবো।”
”ছোট একটা দলের যদি বেশি যোগ্য প্রার্থী থাকে, যার জেতার সম্ভাবনা বেশি, তারা হয়তো বেশি মনোনয়ন পাবে। আবার কোন বড় দল থেকে সম্ভাবনা কম থাকলে তারা কেউ বাদ পড়তে পারেন।”
২০দলীয় জোটের বাইরে কিছুদিন আগে গঠন করা জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের শরীকদের সঙ্গেও আসন ভাগাভাগি করতে হবে বিএনপিকে।
বিএনপির আরেক জোট শরীক, জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না থাকলেও, দলটি বিএনপির সঙ্গেই নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে। তবে তারা বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক ব্যবহার করবে, নাকি স্বতন্ত্র প্রতীক বেছে নেবে। জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরোয়ার বলছেন,”আলাপ আলোচনা করে, বার্গেনিং করে আমাদের আসনের বিষয়টি নিশ্চিত হবে। আমরা ৫০টা আসনের তালিকা ঠিক করে দিয়েছি। কেন সেখানে আমাদের প্রার্থী থাকা উচিত, সেটা ব্যাখ্যা সহকারে দিয়েছি।
তবে তিনি বলছেন, ”যেহেতু শরীক দলের সংখ্যা বেশি, এটা আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে জোট রক্ষার স্বার্থে কিছু কমবেশ তো হতেই পারে। সেটা আলোচনার পরই চূড়ান্ত হবে।”
তবে নিবন্ধন না থাকায় জামায়াতে ইসলামীর নাম বা প্রতীক ব্যবহার করতে পারবেন না এই দলের নেতারা। ফলে তাদের শরীক কোন দলের প্রতীক বা স্বতন্ত্র প্রতীক ব্যবহার করতে হবে। এ নিয়ে দলটির নেতারা এখন আলোচনা করছেন।
প্রধান দুই জোটের নেতাদের মনোনয়ন পত্র সংগ্রহের তালিকার দিকে তাকালে দেখা যাবে, অনেক নির্বাচনী আসনে একই দলের যেমন একাধিক নেতা মনোনয়ন পত্র নিয়েছেন, আবার সেখানে জোটের নেতারাও প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
ফলে প্রার্থী চূড়ান্ত করাটা বড় দুই জোটের মধ্যে জটিলতার তৈরি করতে পারে অনেক নেতাই আশঙ্কা করছেন।
মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টি বলছে, তারা আলোচনা করে বিষয়টির সমাধান সমাধান করতে চান।
দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায় বলছেন, ”আসন ভাগাভাগির বিষয়টি আলোচনার টেবিলেই নির্ধারিত হবে। বাস্তবিক অর্থে তিনশো আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি আমাদের আছে। এখন আমাদের যদি জোটগতভাবে নির্বাচন করতে হয়, তখন কিভাবে আর কোথায় কোথায়, কোন আসনে আমাদের ভালো প্রার্থী আছে, সেটা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা করেই নির্ধারিত হবে।”
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরীক দলগুলো সবমিলিয়ে দেড়শর মতো আসন আশা করছে, যেখানে ক্ষমতাসীন দলটি ৬০ থেকে সত্তরটি আসন দিতে আগ্রহী। তবে এ নিয়ে কোন টানাপড়েন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব উল আলম হানিফ।
তিনি বলছেন, ”এখানে টানাপড়েনের কিছু নেই। কারণ আমাদের সভানেত্রী আগেই বলেছেন, আসন বণ্টনটা সংখ্যাভিত্তিক হবে না, এটা হবে নির্বাচনে জয়লাভের সম্ভাবনার ওপর ভিত্তি করে। সে কারণে কে কতটা আসন দাবি করলো, সেটা বড় কথা নয়। শরীক দলগুলোর মধ্যে কার কতটা আসনে জয়লাভের সক্ষমতা আছে, সেই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আসন বণ্টন হবে।”
শরীকদের কতটা আসন ছাড়া হবে, সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে তিনি জানান।
মি. হানিফ বলছেন, ”আমাদের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আগেই বলেছেন, শরীকদের সঙ্গে আসন বণ্টনের ব্যাপারে, আমাদের চৌদ্দ দল, মহাজোটের জাতীয় পার্টি, সদ্য আসা যুক্তফ্রন্ট, বিকল্প ধারাসহ আরো কয়েকটি দল আছে, সবার কথা বিবেচনা করে সর্বোচ্চ ৬০ থেকে ৭০টা আসন বণ্টন হতে পারে।”
তফসিল অনুযায়ী, ২৮ নভেম্বরের মধ্যে মনোনয়ন ফরম দাখিল করতে হবে। তবে প্রত্যাহারের সুযোগ রয়েছে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৩০ ডিসেম্বর।
দুই জোটের নেতারাই জানিয়েছেন, একেকটি আসনে দল এবং শরীক মিলিয়ে একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে বলা হবে। পরবর্তীতে দল বা জোট থেকে যাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হবে, তিনি ছাড়া অন্যদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে বলা হবে।
তথ্যসূত্র=বিবিসি বাংলা