যে কারনে ইজতেমা মাঠে সংঘর্ষ

ত্রিশাল প্রতিদিন ডেস্ক:: টঙ্গির বিশ্ব ইজতেমা মাঠে জোড় ইজতেমায় অংশ নেওয়াকে কেন্দ্র করে ইজতেমা ময়দান এলাকায় তাবলিগ জামাতের মুসল্লিদের দুপক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত একজন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছে।

জানা গেছে, ভারতের মাওলানা ইলিয়াছ কান্ধলভির (রহ.) হাত ধরে তাবলিগের সূচনা। এক পর্যায়ে বিশ্ব তাবলিগ জামাতের আমির হন তার পৌত্র মাওলানা সাদ। গত বিশ্ব ইজতেমার আগে সাদের একটি মন্তব্যের কারণে মাওলানা জুবায়েরপন্থীদের সঙ্গে বিরোধ শুরু হয়। এর জের ধরে তাকে সেই ইজতেমায় অংশ নিতে দেওয়া হয়নি।

পরে মাওলানা সাদের সঙ্গে দুপক্ষের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এ বছর ৩০ নভেম্বর থেকে চারদিন সাদের অনুসারীরা এবং ৭ ডিসেম্বর থেকে পরের চারদিন মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা জোড় ইজতেমায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সপ্তাহখানেক ধরেই মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা মাঠ দখল করে রাখে। সেই মাঠে আজ সাদের অনুসারীরা প্রবেশ করতে চাইলেই বেধে যায় সংঘর্ষ। এতে মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা ইসমাইল মণ্ডল (৬৫) নিহত হন। সকালে ছেলে জাহিদ হাসানের সঙ্গে তিনি টঙ্গী এসেছিলেন। এ ঘটনায় আহত হন অন্তত ১০০ জন। পরে পুলিশ গিয়ে অনেক চেষ্টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সেখানে এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

সমঝোতা হওয়ার পরও কেন মাঠ দখলে রাখা হয়েছিল, কিংবা মাওলানা সাদের অনুসারীদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি-এই প্রশ্ন ছিল মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীদের কাছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা এবং ৩০ নভেম্বর থেকে মাওলানা সাদের অনুসারীদের কর্মসূচী থাকার পরও মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীদের মাঠে জড়ো হতে দেওয়া হলো কেন-এমন প্রশ্নের সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি সংশ্লিষ্টদের কাছে।

এদিকে নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে ইজতেমা আয়োজন বন্ধ রাখতে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক, মহানগর পুলিশ কমিশনার এবং পুলিশ সুপারকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

বিবাদের শুরু যেভাবে:

মাওলানা সাদের দাদা ভারতের ইসলামী পণ্ডিত ইলিয়াছ কান্ধলভি ১৯২০ এর দশকে তাবলিগ জামাত নামের এই সংস্কারবাদী আন্দোলনের সূচনা করেন। স্বেচ্ছামূলক এ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল, ইসলামের মৌলিক মূল্যবোধের প্রচার করা। বিতর্ক দূরে রাখতে এ সংগঠনে রাজনীতি ও ফিকাহ নিয়ে আলোচনা হয় না।

মাওলানা ইলিয়াছের মৃত্যুর পর তার ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ এবং তারপর মাওলানা ইনামুল হাসান তাবলিগ জামাতের আমিরের দায়িত্ব পালন করেন। মাওলানা ইনামুলের মৃত্যুর পর একক আমিরের বদলে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার দেওয়া হয় একটি শুরা কমিটির ওপর।

সেই কমিটির সদস্য মাওলানা জুবায়েরের মৃত্যুর পর মাওলানা সাদ আমিরের দায়িত্ব নেন এবং একক নেতৃত্বের নিয়ম ফিরিয়ে আনেন।

এ অবস্থায় মাওলানা জুবায়েরের ছেলে মাওলানা জুহাইরুল হাসান নেতৃত্বের দাবি নিয়ে সামনে আসেন এবং তার সমর্থকরা নতুন করে শুরা কমিটি গঠনের দাবি জানান। কিন্তু সাদ তা প্রত্যাখ্যান করলে বিরোধ বড় আকার ধারণ করে। বিভিন্ন সময়ে মাওলানা সাদের বক্তব্য নিয়েও আলেমদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হয়।

নেতৃত্ব নিয়ে দিল্লির মারকাজ এবং দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসারীদের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ঢাকায় বিশ্ব ইজতেমার সময়।

কয়েক বছর ধরে বিশ্ব ইজতেমায় আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করে আসা সাদ কান্ধলভি চলতি বছর ঢাকায় এসে বিরোধীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। শেষ পর্যন্ত সরকারের মধ্যস্থতায় ইজতেমায় অংশ না নিয়েই তাকে ঢাকা ছাড়তে হয়। -আমাদের সময়।