শামসু মিয়ার মূলা ক্ষেত

শামসু মিয়ার মূলা ক্ষেতে মুসলিম বিশ্ব!
প্রতিকী ছবি।

শামসু মিয়া তার মূলা ক্ষেতে গিয়ে দেখে চার জন লোক মনের সুখে তার ফলানো মূলা খাচ্ছে। শামসু মিয়া প্রথমে ভাবল এদেরকে দাবড়ানি দেই। পরক্ষনেই ভাবল ‘না, একা চারজনের সাথে কুলানো যাবে না। যদি চারজন এক হয়ে উল্টা শামসু মিয়াকে প্যাদানী দেয়? তাহলে শামসু মিয়ার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।’

শামসু মিয়া আড়াল থেকে লোকগুলোর কন্ঠস্বর শুনে তাদেরকে চেনার চেস্টা করল। তারা নিজেরা নিজেরা কথা বলছে।
কন্ঠ শুনে প্রথমেই তার আপন ভাতিজা মাসুমকে চিনতে পারল! ভাইস্তার পুত ভাইস্তা। খাড়াও সিস্টেম করতাছি।
এরপরে শোনা গেল আরেকজনের কন্ঠ। এই লোকটার নাম জোতি শীল৷ তাদের পাশের বাড়ীটা হিন্দু বাড়ী। এই জোতি শীলের চৌদ্দ পুরুষ নাপিতের কাজ করে। এই ব্যাটাকে আজ সাইজ করতে হবে।

এরপর শামসু মিয়া যার কন্ঠ শুনলেন তিনি হলেন মসজিদের পাতি ইমাম! প্রশ্ন করতে পারেন পাতি ইমাম আবার কী জিনিস?
গ্রামে ৪ টা মসজিদ। একটা পুরানো মসজিদ বাকী তিনটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মানে ভিলেজ পকিটিক্সের উদ্দেশ্যে বানানো মসজিদ। এর একটায় পার্ট টাইম ইমামতি করে এই কিশোর ইমাম। যার লেখাপড়া এখনো শেষ হয় নি।

শেষ যার কন্ঠ শুনলেন তাকে তিনি চিনতে পারলেন না। তবে এই লোক এই গ্রামের না, এটা শিউর।

শামসু মিয়া এবার তাদের সামনে এলেন। হৈ হৈ রবে চিল্লাইয়া বললেন “আপনারা আমার গ্রামের লোক, আমার ক্ষেতে আপনার অধিকার রয়েছে। কিন্তু এই ব্যাটা ভিন গ্রাম থেকে এসে এই গ্রামের মূলা খাচ্ছে তা কি ঠিক?”

এমনিতেই বাকী ৩ জন অপরাধী। তারা সমস্বরে বলল “ঠিক না।”। বাকী তিন জন মুহুর্তেই এলাকাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী হয়ে গেল।
শামসু মিয়া ভিন গ্রামের লোককে দুইটা চড় থাপ্পড় মেরে বিদায় দিলেন।

এরপরে তার ভাতিজা ও ইমামের দিকে তাকিয়ে বললেন ” মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই৷ আপনারা আমার ক্ষেতের মূলা খাবেন তাতে বলার কিছু নাই কিন্তু এই মালুর বাচ্চা মালু মুসলমানদের মূলা খাবে কেন? শালারে ধর!”

ধর্মীয় উত্তেজনা সৃষ্টি করে শামসু মিয়া বাকী দুই জনের সহযোগীতায় হিন্দু জোতি শীলকে পিটিয়ে ক্ষেত থেকে বিদায় করল।
শামসু মিয়া এবার তাকাল তার ভাতিজার দিকে। বলল “তুই আমার রক্তের সম্পর্কের লোক। চাচার ক্ষেতের মূলা মানে তোর ক্ষেতের মূলা। তুই খাবি ভাল কথা কিন্তু এই হুজুরের পো হুজুর মূলা চুরি করে খায় তা তুই দেখস নাই? এই হুজুরের পিছে তো নামাজই হবে না। এই হুজুর তো কাফের। এ কাফেরকে পেটালে সওয়াব পাওয়া যাবে।”

বলে হুজুরকে ইচ্ছামত পিটিয়ে ক্ষেত ছাড়া করল।

এবার বাকী রইল ভাতিজা। শেষে ভাতিজার ভাগ্যে কী হতে পারে তা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন? আপনি বুঝতে পারলেও অনেকেই এখনো বুঝতে পারে নাই। যার ফলে আজ সারা বিশ্বে মুসলমানরা মার খাচ্ছে।

একটা জিনিস খেয়াল করেছেন?
-উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার কোথাও যুদ্ধ চলে?
-ইউরোপের কোথাও যুদ্ধ চলে?
-এশিয়া বলতে যা বোঝায় অর্থাৎ চীন জাপান মানে ছোট চোখওয়ালারা কি যুদ্ধ করছে?

কেউ যুদ্ধ করছে না। শুধুমাত্র যুদ্ধ হচ্ছে আরব ও আফ্রিকান মুসলিম দেশগুলোতে। তার মানে কী? কেন দুনিয়ার এত দেশ থাকতে শুধুমাত্র মুসলিম দেশগুলোতে যুদ্ধ সংগঠিত হচ্ছে?

উপরের মূলা ক্ষেতের কাহিনীতেই এর উত্তর রয়েছে। মুসলিমদেরকে প্রথমে বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করা হল। তারপর তাদের মধ্যে একে অপরের বিরুদ্ধে হিংসার সৃষ্টি করে দিল। তারপর মুসলমানরা নিজেরা নিজেরা মারামারি করতে করতে দুর্বল হয়ে পড়বে। ঠিক সেই সময়ে ওরা ত্রাণকর্তায় ভূমিকায় এসে শাসন কর্তা হয়ে যায়।

লেখক: ফখরুল ইসলাম