বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি দেলোয়ার হোসেনের বাসায় অভিযান চালিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শহরের শেখ রাসেল স্কয়ারের বাসায় সোমবার রাতে অভিযান চালানো হয়। শুধু চেয়ারম্যানের বাসায় নয়, তাঁর কার্যালয়েও অভিযান পরিচালিত হয়েছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এসব অভিযানের ব্যাপারে কোনো তথ্য দেননি।
ধারণা করা হচ্ছে, রিফাত শরীফ খুনের মামলার অন্য দুই প্রধান আসামি রিফাত ফরাজী ও তার ভাই রিশান ফরাজীকে ধরতেই অভিযান চালানো হয়েছে। এ দুই আসামি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের ভায়রার ছেলে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, ‘বন্দুকযুদ্ধের’ আগে সোমবার রাতে দেলোয়ারের বাসা থেকে একজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ওই অভিযানের পর রিফাত ও রিশানকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি আলোচনায় আসে। এ ছাড়া পুলিশ সুপার তাঁর কার্যালয়ে যখনই প্রেস ব্রিফিং করেছেন, তখনই বলেছেন সব আসামি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে। এসব কারণেই জনমনে প্রশ্ন, তবে কি রিফাত-রিশান এখন গোয়েন্দাদের হাতে? এ দুই আসামির ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসন স্পষ্ট করে কিছু বলছেও না।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান : প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সোমবার রাত আনুমানিক ৮টার দিকে একাধিক মাইক্রোবাসে করে সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বাসায় যান। তাঁরা বাসার আশপাশ ঘিরে ফেলেন। একপর্যায়ে তাঁরা বাসায় তল্লাশি চালান। একই সঙ্গে বাসার ভেতরে থাকা সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ওই পরিবারের এক পুরুষ সদস্যকে চোখে কালো কাপড় বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে আবার ছেড়ে দেওয়া হয়।
মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ছিল রিফাত ফরাজী : বরগুনা সদর থানার ওসি আবির মোহাম্মদ হোসেন বলেন, রিফাত ফরাজীর বিরুদ্ধে থানায় চারটি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি মারামারি এবং একটি মাদকের মামলা।
ওসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৮ নভেম্বর রিফাতের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছিল। এরপর রিফাতের বিরুদ্ধে মাদকের আর কোনো মামলা হয়নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারির আগে রিফাতকে পুলিশ মাদকসহ আটক করেছিল। ওই ঘটনার পর তাকে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল।
বরিশালের মাদক নিরাময় কেন্দ্র হলিকেয়ারের সাবেক চেয়ারম্যান বরগুনার বাসিন্দা আরিফ খান বলেন, প্রায় বছর তিনেক আগে রিফাতের পরিবার তাকে হলিকেয়ারে ভর্তি করেছিল। কিছুদিন চিকিৎসার পর হলিকেয়ার থেকে নিয়ে আসে। পুরো চিকিৎসা না করানোর ফলে বরগুনায় এসেই রিফাত আবার মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এমনকি নয়ন বন্ডের সঙ্গে মাদক কারবার শুরু করে। এ কাজ করতে গিয়ে রিফাত পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছিল। জেল খেটে বেরিয়ে আবারও মাদকেই ডুবে গিয়েছিল।
বরিশালের আরেকটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র ‘সেইভ দ্য লাইফের’ চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমান বলেন, পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শফিকুল ইসলাম মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। এরই অংশ হিসেবে মাদকসেবীদের আটক করে পুলিশের জিম্মায় মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। বরগুনার রিফাত ফরাজীকে পুলিশ আটক করে তাদের জিম্মায় রেখে ‘সেইভ দ্য লাইফে’ চিকিৎসা করিয়েছিল।
বরগুনার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, ‘রিফাত শরীফ হত্যার সঙ্গে জড়িত ১৩ আসামিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছে। রিফাত-রিশানকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। শুধু রিফাত-রিশান নয়, হত্যা মামলার পলাতক সকল আসামিই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার এখন সময়ের ব্যাপার।’