বিয়ে করলেও গোপন রেখেছিলেন সেই খবর। ছেলে সন্তানের বাবা হয়ে নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে সুসংবাদ দেন ২০১৮ সালের ০৬ ডিসেম্বর। এরপর কেটে গেছে সাড়ে ৬ মাস। কিন্তু এখনও বহাল তবিয়তেই ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদে আছেন রকিবুল ইসলাম রকিব।
সভাপতি নিজের বিয়ে নিয়ে ‘কঠোর গোপনীয়তা’ বজায় রাখলেও অবশ্য তা করেননি সাধারণ সম্পাদক সরকার মো. সব্যসাচী। সবাইকে নিমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি বিয়ের পিড়িতে বসেন। চলতি বছরের ১৫ জুন সেই বিয়েতে সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান থেকে শুরু করে স্থানীয় গণমান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
দলীয় সূত্র জানায়, একবছর মেয়াদী কমিটির নেতৃত্বে এসে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দু’জনই এখন বিবাহিত। এখনও আকড়ে আছেন সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষ পদ। এক্ষেত্রে তারা ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখালেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ বা নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে কোনো নজর নেই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের।
উল্টো জেলা ছাত্রলীগের বিবাহিত নেতারাই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন। সাংগঠনিক অ্যাকশনের বদলে তাদের পুনরায় ‘পুরস্কৃত’ করা নিয়ে ক্ষোভের অনলে পুড়ছেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নতুন রক্ত সঞ্চালনের পরিবর্তে বিবাহিতেই আস্থা রাখায় সংগঠনের রাজনীতিতে চরম স্থবিরতা বিরাজ করছে। এ নিয়ে ভেতরে ভেতরে ক্ষুব্ধ মূল দল আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও।
জানা যায়, ২০১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এতে রকিবুল ইসলাম রকিবকে সভাপতি ও সরকার মো. সব্যসাচীকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। ওই সময় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে ৩ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
কিন্তু নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কোন্দলে গত তিনবছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি তারা। এরপর গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে তারা দুজনেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন। সভাপতি রকিব ইতোমধ্যে সন্তানের বাবাও হয়েছেন। নতুন নেতৃত্ব না আসায় হতাশ হয়ে পড়েছেন সংগঠনটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
একই অবস্থা আনন্দমোহন কলেজ শাখা ছাত্রলীগেরও। ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বরের ৬ মাস মেয়াদী আহ্বায়ক কমিটি করা হলেও বয়স পেরিয়েছে আড়াই বছর। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রকিবুল ইসলাম রকিব নিজের আধিপত্য ধরে রাখতে তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মাহমুদুল হাসান সবুজকে আহ্বায়ক করেন ওই কমিটির। কিন্তু এখন দু’জনের সম্পর্ক সাপে-নেউলে। কেউ কারো ছায়া পর্যন্ত মাড়ান না।
পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পারার ব্যর্থতার জন্য তারা জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রকিবুল ইসলাম রকিবকেই দায়ী করেছেন। এ বিষয়ে আনন্দমোহন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুল আলম ফাহাদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগে আমরা নামেমাত্র নেতা থাকলেও সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি। এখন আমরা রাহুমুক্ত হয়েছি।’
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিতে ময়মনসিংহ জেলা ও আনন্দমোহন কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে স্থবিরতার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের দুঃসময়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক রিপন।
তিনি বলেন, ‘পদধারী কয়েকজন ছাড়া ছাত্রলীগের রাজনীতির কোনো অস্তিত্ব নেই ময়মনসিংহে। ৭ থেকে ৮ বছর ধরে ছাত্রলীগ করে এখনও কারো কোনো পরিচিতি নেই। তারা খুবই হতাশ হয়ে পড়েছে। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে নতুন নেতৃত্বের বিকল্প নেই। সময়ের প্রয়োজনেই ত্যাগী, পরীক্ষিত ও মেধাবীদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিতে হবে।’
তবে এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটির পক্ষেই অবস্থান ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগ নেতাদের। এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগ সাধারন সম্পাদক সরকার মো. সব্যসাচী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ছাত্রলীগকে বিদায় জানাতে প্রস্তুত। তবে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা চান কমিটি অন্তত পূর্ণাঙ্গ হোক। প্রত্যেকের সাংগঠনিক পরিচয় থাকুক।
‘তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। আমরা তাদের দিকেই তাকিয়ে আছি।’
এ বিষয়ে কথা বলতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি মো. রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি। বারবার তাদের মোবাইলে কল দিলেও তারা তা রিসিভ করেননি।তথ্যসূ্ত্র-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর