ময়মনসিংহে স্ত্রী হত্যাকারী স্বামীকে পুলিশ শ্রমিক সেজে গ্রেফতার করলো সাভারে

ত্রিশাল প্রতিদিন ডেস্কঃ ময়মনসিংহে স্ত্রী হত্যাকারী স্বামীকে কোতোয়ালী পুলিশ শ্রমিক সেজে সাভারে গ্রেফতার করেছে।

ময়মনসিংহের কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের একটি দায়িত্বশীল টিম লুঙ্গি গামছা পড়ে ছদ্মবেশে স্ত্রী হত্যার আসামী আলমগীরকে গ্রেফতার করেছে। এর আগে মোবাইল টেকিংয়ের মাধ্যমে আলমগীরের এক ভাইয়ের সন্ধ্যান পেয়ে পুলিশ তার মাধ্যমে ঢাকা ও সাভারের বিভিন্ন স্থানে তল্লাশী করে মঙ্গলবার রাতে তাকে গ্রেফতার করে।কোতোয়ালী পুলিশের এসআই নিরূপম নাগ ও মিনহাজ উদ্দিন এ ছদ্মবেশে তাকে গ্রেফতার করে।

কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি মাহমুদুল ইসলাম জানান, জেলা সদরের ব্যুরোরচরে কল্পনা আক্তারের সাথে আলমগীরের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর কল্পনা জানতে পারেন তার স্বামী আলমগীর আগে আরেকটি বিয়ে করেছেন এবং তার ঐ স্ত্রী এখনো রয়েছে। তার স্বামী আলমগীরের আগের স্ত্রী থাকার খবর জানতে পেরে দ্বিতীয় স্ত্রী তার সংসার করবে না বলে তার পিত্রালয়ে চলে আসেন এবং এবং তাকে তালাক দিতে স্বামীর কাছে কয়েক দফা বলেন। কিন্তু তার স্বামী কল্পনাকে ডিবোর্স দিবেনা বলে জানিয়ে দেয়। এ নিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী কল্পনার সাথে স্বামী আলমগীরের ঝগড়া বিবাধের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে স্বামী আলমগীর ক্ষিপ্ত হয়ে কল্পনাকে হত্যা করেন।

এ ঘটনায় কোতোয়ালী মডেল থানায় মামলা হয়।চাঞ্চল্যকর মামলাটির তদন্তভার দেন এসআই মিনহাজ উদ্দিনের উপর। এদিকে স্ত্রী হত্যাকারী স্বামী আলমগীর বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। দায়িত্ব ও কৌশলী পুলিশ অফিসার এসআই মিনহাজ উদ্দিন মোবাইল টেকিংসহ আলমগীরের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের খোজ খবর নিতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে জানতে পারেন আলমগীরের এক ভাই ঢাকায় বসবাস করছে এবং তার সাথে আলমগীরের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। স্ত্রী হত্যাকারী পালিয়ে বেড়ালেও পুলিশ নাছুর বান্ধা। অবশেষে লুঙ্গি, গামছা পড়ে কৃষকের মত পোষাক ধারণ করে অপর সহযোগী কৌশলী পুলিশ অফিসার নিরূপম নাগ কে নিয়ে সোমবার অভিযান শুরু করেন। দিনভর অভিযান শেষে ঢাকার মুগ্ধা থেকে আলমগীরের ভাইকে পুলিশ আটক করে। পরে আলমগীরের ঐ ভাইয়ের মাধ্যমে পুলিশ জানতে পারে সে ঢাকার সাভাবে অবস্থান করছে। সাভারে অবস্থান করলেও সুচতুর আলমগীর বার বার তার অবস্থান পরিবর্তন করে।
এর আগে আলমগীরের ঐ ভাইয়ের কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে সে সাভারে তার প্রথম স্ত্রীসহ বসবাস করছে। তার ভাই পুলিশকে আরো বলেন, তার (আলমগীর) হাতে কোন টাকা নেই তার গত কয়েক দিন ধরে তার কাছে টাকা ধার চেয়ে আসছে।

এ বিষয়টি পুলিশ জানতে পেরে তাদের কৌশল আবারো পরিবর্তন করে। এক পর্যায়ের মাধ্যমে বিকাশে টাকা পুলিশ টাকা পাঠাবে এ ধরণের আশ্বাস প্রদান করে তার ভাইয়ের মাধ্যমে। এতে আলমগীরের ভাই তার সাথে মোবাইলে কথা বলে একটি বিকাশ নম্বর দিতে বলে এবং টাকা পাঠানোর পরে তার স্ত্রীকে দিয়ে ঐ টাকা নিয়ে ে যতে বলেন। এতে আলমগীর একটি বিকাশ নম্বর দেন। আলমগীরের নামে পাঠানো টাকা উঠাতে যায় তার স্ত্রী। এর আগে কৌশলী পুলিশ অফিসারদ্বয় ঐ বিকাশ নম্বরটি কোথায়, দোকান ও দোকান মালিকের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে তারা না আসা পর্যন্ত পাঠানো টাকা না দিতে অনুরোধ করে। এতে বিকাশ মালিক সারা দেয়। এরই মধ্যে দায়িত্বশীল, দক্ষ ও কৌশলী পুলিশ অফিসারদ্বয় আলমগীরের ভাইকে সাথে নিয়ে ঐ বিকাশের দোকানে হাজির হন। এদিকে আলমগীরের ভাইয়ের পাঠানো টাকা বিকাশ থেকে তুলে নিতে আসে তার স্ত্রী। পুলিশ আলমগীরের স্ত্রী আটক করে।

পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে তার স্ত্রী জানান, আলমগীর সাভারেই রয়েছে। আটককৃতদের নিয়ে পুলিশ অভিযানে গেলে আলমগীর প্রথমে পালিয়ে যায়। এরই মাঝে ভোর হয়ে সকাল হয়ে যায়। পুলিশ দলটি ছদ্মবেশ ধারণ করতে গামছা ও একটি লুঙ্গি পড়ে আটককৃতদের নিয়ে শ্রমিক সেজে মাঠে কাজে লেগে যায়। এরই মাঝে দ্বিতীয় স্ত্রী কল্পনা হত্যার একমাত্র আসামী আলমগীর পুলিশের পাশেই জমিতে কাজ আসে কাজ করতে আসে। এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের কৌশল খাটিয়ে তাকে গ্রেফতার করেন বলে এসআই নিরূপম নাগ জানান। উল্লেখ্য গত পনেরই আগষ্ট রাতে স্বামী আলমগীর তার দ্বিতীয় স্ত্রী কল্পনাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। এ ঘটনায় কোতোয়ালী মডেল থানায় মামলা নং ৭০(৮)১৯ দায়ের হয়।