ষ্টাফ রিপোর্টারঃ ময়মনসিংহের সদর উপজেলার ১২নং ভাবখালী ইউনিয়ের ভাবখালী মাদ্রাসার নিয়োগ পরীক্ষায় মেধাবী প্রার্থীদের বঞ্চিত করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষায় অকৃতকার্য প্রার্থীদের চাকরি দেওয়ার পক্রিয়া চলছে বলে অভিযোগ তুলেছেন মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির একাধিক অভিভাবক সদস্য ও স্থানীয়রা।
অভিযোগ উঠেছে-ভাবখালী দাখিল মাদ্রাসার শূন্য পদে ১জন সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট,১জন নৈশ প্রহরী,প্যাটার্নভূক্ত নব সৃষ্ট পদে ১জন নিরাপত্তা কর্মী ও ১জন আয়াসহ মোট ৪জন লোক নিয়োগ দানের লক্ষে গঠিত নিয়োগ কমিটি ও নিয়োগ করা হবে মর্মে গত ১০শে নভেম্বর-২০২২ তারিখে দৈনিক মানব জমিন পত্রিকার ১৮নং পাতায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। প্রকাশিত বিজ্ঞাপন অনুযায়ী গত ৮এপ্রিল শনিবার নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে নিয়োগ বাণিজ্যে অভিযোগ তুলে নিয়োগ বন্ধ করতে বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করেন ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্য। মামলার জটিলতার কারণে নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ থাকায় দীর্ঘ দিন পর ২সেপ্টেম্বর শনিবার এই নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হয়। বিজ্ঞ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের মাধ্যমে স্বচ্ছ পরীক্ষা শেষে এতে যারা উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের নিয়োগ পত্রে স্বাক্ষর করেনে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন সেলিম।
বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে অনেক শিক্ষিত মেধাবী ছেলে মেয়েরাও নৈশ প্রহরী, নিরাপত্ত্বা কর্মী ও আয়া পোস্টে চাকরির জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু মাদ্রাসার সুপারের নিয়োগ বাণিজ্য ও স্বেচ্ছাচারিতার কারনে অনেক উপযুক্ত ও মেধাবী যুবক যুবতীরাও চাকরি প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ উঠেছে প্রবেশপত্রে উল্লেখিত পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার আগেই মাদ্রাসা সুপার ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নিয়োগ বানিজ্যের লক্ষে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নিকট থেকে আর্থিক লেনদেন করে নিয়েছে। এই সুবিধা নিয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় সুপারের যোগসাজসে আগে থেকে ৩জনকে প্রশ্নপত্র আউট করে একসাথে পরীক্ষা নেওয়ার ফলে সবার ফলাফল একই নাম্বার আসে বলে জানা গেছে। এতে মেধার ভিত্তিতে চাকরি প্রাপ্তি থেকে মেধাবীরা বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন।
এলাকাবাসীরা অভিযোগ করেন- ১৯৭১ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। তবে বর্তমান সুপার আতাহার আলী মাদ্রাসার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে মাদ্রাসাটি দুর্নীতির আখ্যায় বর্ণিত হয়েছে বর্তমানে তার অধীনে মাদ্রাসায় যেকোনো কাজে চরম দুর্নীতি হয়ে থাকে সরকারি বই বিক্রি থেকে বিভিন্ন দুর্ণীতি করে থাকেন সুপার আতাহার আলী। তিনি সুপার হওয়ার পর থেকে মাদ্রাসাটি পরিণত হয়েছে অর্থ উপার্জনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে। মাদ্রাসায় কোনোদিনই শিক্ষার্থীদের ক্লাস নির্দিষ্ট সময় শুরু বা শেষ হয় না। ১২টা ১টা না বাজতেই মাদ্রাসা ছুটি হয়ে যায় এবং শিক্ষকরাও বাড়ি চলে যায়।মাদ্রাসায় নীয়ম-নীতির কোনো বালাই নেই। অর্থ উপার্জনই যেন মাদ্রাসার সুপারের প্রধান উদ্দেশ্য।
অভিভাবক সদস্য ও এলাকাবাসীর স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,মাদ্রাসায় চারটি পদে জনবল নিয়োগের কার্যক্রম শুরু করে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় অবৈধ ভাবে।১জন সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট,০১জন নৈশ প্রহরী,প্যাটার্নভূক্ত নব সৃষ্ট পদে ১জন নিরাপত্তা কর্মী ও ১জন আয়া এই চারটি পদে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইউসুফ আব্দুল্লাহ আল মামুন সেলিমের যোগসাজসে তাদের পছন্দনীয় ব্যাক্তিদের মোটা অংকের নগদ অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়ার পায়তারা চালাচ্ছেন। অথচ ম্যনেজিং কমিটিতে সভাপতি ও সুপার সহ মোট ১০জন প্রতিনিধি রয়েছে।
ম্যানেজিং কমিটির সদস্য জুয়েল জানায়- প্রতিষ্ঠানের সুপার আতাহার আলী ম্যামেজিং কমিটির সভাপতি ইউসুফ আব্দুল্লাহ আল মামুন এর পরামর্শে চাকরীতে পদ প্রত্যাশী দিপালীর কাছ থেকে ৭ সাত লাখ, জামাল এর নিকট থেকে ৬ লাখ, আলী এরশাদ এর নিকট ৭ লাখ,দেলোয়ার এর নিকট থেকে ৭ লাখ লাভলী নামের একজনের নিকট থেকে ২লাখ বাকী টাকা নিয়োগের পর শর্তে গ্রহণ করে তাদেরকে সিলেক্ট করে রেখেছে।এভাবে প্রতিটি পদেই মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ না দিয়ে আগে থেকেই ঠিক করে রাখা প্রার্থীদের দিয়ে শুধু লোক দেখানো নিয়োগের বৈধতা দেওয়ার জন্য পরীক্ষা নেয়ার পাতারা করলেও অবশেষে স্বচ্ছ পরীক্ষায় যারা বেশী নাম্বার পেয়েছে তাদের বঞ্চিত করে অকৃতকার্যদের নিয়োগ দেওয়ার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে সভাপতি ও মাদ্রাসা সুপার। তবে পরীক্ষা নিয়ে সচ্ছতার সঙ্গে মেধাবী ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ সম্পন্ন করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি চেষ্টা করলেও সভাপতি উক্ত নিয়োগ পত্র গুলোতে স্বাক্ষর করতে নারাজ হন বলে সুত্র জানিয়েছে। কারণ স্বচ্ছ ও মেধাবীদের নিয়োগ দিলে গৃহীত অর্থগুলো ফেরত দিতে হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে মাদ্রাসা সুপার আতাহার আলী ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাদের পাওয়া যায়নি। তবে উক্ত প্রহসনের নিয়োগ বন্ধ করে পুণরায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে নতুন নিয়োগ পরীক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি প্রত্যাশা করছেন আগ্রহী প্রার্থীসহ অভিভাবক মহল।