তথ্য ফাঁস নিয়ে ফের কাঠগড়ায় ফেসবুক। এত দিন ব্যবহারকারীর নাম, কাজ ইত্যাদি তথ্য ফাঁসের অভিযোগ ছিল। মঙ্গলবার একটি মার্কিন দৈনিক দাবি করেছে, ব্যক্তিগত মেসেজ ও যোগাযোগের তালিকাও মাইক্রোসফট, অ্যামাজ়ন, নেটফ্লিক্সের মতো ১৫০টিরও বেশি সংস্থাকে অকাতরে বিলিয়েছে ফেসবুক। তারা ফেসবুকের ‘গোপনীয়তার নিয়ম’কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পণ্য বেচায় সুবিধা পেয়েছে বলে অভিযোগ।
২৭০ পাতার গোপন তথ্য দেখে এবং ফেসবুকের ৫০ জন প্রাক্তন কর্মীর কথা থেকে বিষয়টি জানা গিয়েছে বলে দাবি দৈনিকটির। ফেসবুক ব্যবহারকারীর যোগাযোগের তালিকা থেকে তার বন্ধুদের তথ্য পেয়েছে অ্যামাজ়ন। নেটফ্লিক্স ও স্পটিফাই-এর মতো স্ট্রিমিং পরিষেবাদানকারী সংস্থা ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত মেসেজও পড়তে পেরেছে।
যদিও মার্ক জ়াকারবার্গের দাবি, কেউ কতটা তথ্য কাকে জানাতে চায়, তার সবটাই ব্যবহারকারীর হাতে থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অভিযোগ, ফেসবুকই তথ্য তুলে দিয়েছে। তবে ফেসবুকের তরফে স্টিভ স্যাটারফিল্ড (ব্যক্তিগত ও জননীতির দায়িত্বপ্রাপ্ত) বলেছেন, ‘‘কোনও তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ, মিউজিক বা স্ট্রিমিং পরিষেবা ফেসবুকের কিছু বিষয়ের সঙ্গে নিজেদের মেলাতে পারে (সিঙ্ক) মাত্র। তথ্য নিয়ে কিছু করতে পারে না।’
লাগাতার এই বিতর্কের আবহেই বেস্টসেলার লেখক ইয়ুভাল নোয়া হারারি শুনিয়েছেন গুরুতর আশঙ্কার কথা। মুম্বইয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘বিশ শতকের মাঝামাঝি আমরা স্বৈরতন্ত্রের একটা ঢেউ দেখেছি হিটলার, স্তালিন বা মাও জে দংয়ের শাসনে। সেটা সরে গিয়েছে।’’ কিন্তু স্বৈরতন্ত্রের অন্য যে ঢেউ আসছে, সেটা আরও ভয়ঙ্কর হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।
লেখকের আশঙ্কা, প্রযুক্তি এ বার মানুষকেও ‘হ্যাক’ করতে কাজে লাগানো হবে। তাঁর কথায়, ‘‘এতে লাগবে তিনটে জিনিস। জীববিদ্যা, বিশেষ করে মস্তিষ্কের বিজ্ঞান। মজুত রাখতে হবে প্রচুর ব্যক্তিগত তথ্য। জানতে হবে কম্পিউটারের আটঘাট।’’ মানুষ হ্যাকিং করে ভাল কাজ যেমন হতে পারে, তেমনই ভয়াল হতে পারে তার বিপদ— মত হারারির। সেই চিন্তা থেকেই তিনি বলছেন, ‘‘মানুষ হ্যাক করে একটা চরম স্বৈরতান্ত্রিক শাসন তৈরি করা যেতে পারে। যেখানে কেউ বিরোধিতা করতে পারবে না। কারণ যে মুহূর্তে কেউ বিরোধিতার কথা ভাববে, তখনই সংশ্লিষ্ট সরকার হ্যাকিংয়ে জেনে যাবে, ওই ব্যক্তির মাথায় কী ভাবনা রয়েছে।’’